facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

শরীয়তপুরে নারী নির্যাতন, ওয়ারেন্টের পরও আসামিকে ধরছে না পুলিশ!


১৪ মে ২০১৭ রবিবার, ০৭:১৪  পিএম

এমএ ওয়াদুদ মিয়া, শরীয়তপুর

শেয়ার বিজনেস24.কম


শরীয়তপুরে নারী নির্যাতন, ওয়ারেন্টের পরও আসামিকে ধরছে না পুলিশ!

শরীয়তপুরে উপ আয়কর কমিশনার অফিসের উচ্চমান সহকারী রেজওয়ান মল্লিক তুষারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, যৌতুক চাওয়া এবং স্ত্রীকে সঠিকভাবে ভরণপোষন না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী মাহফুজা রেজওয়ান ওরফে মৃদুলা রায়। এ ব্যাপারে তিনি বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশুলিয়া আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত উচ্চমান সহকারী রেজওয়ান মল্লিক তুষারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। কিন্তু আসামি পুলিশের হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও কী এক অদৃশ্য কারণে তাকে গ্রেফতার করছেন না।

এদিকে মাহফুজা রেজওয়ান ওরফে মৃদুলা রায় তার দুই সন্তান নিয়ে কখনও অনাহারে কখনও অর্ধাহারে জীবন যাপন করছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, তার বিয়ের আগে তিনি একজন হিন্দু সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। একসময়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার কুড়াসী গ্রামের দ্বীন মোহাম্মদ মল্লিকের ছেলে রেজওয়ান মল্লিক তুষারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যেহেতু মাহফুজা রেজওয়ান ওরফে মৃদুলা রায় একজন হিন্দু সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলেন, সেহেতু তিনি প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ২০০২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হিন্দু সনাতন ধর্মে ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে ২০০২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রেজওয়ান মল্লিক তুষার এবং মাহফুজা রেজওয়ান ওরফে মৃদুলা রায় ঢাকার নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে একটি হলফ নামার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আর এ হলফ নামার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনটিকে আরও পাকাপোক্ত করার জন্য ২০০২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ১নং সাভার ইউনিয়ন পরিষদ কাবিন রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে উভয়ে উপস্থিত হয়ে এক লাখ টাকা দেন মোহর ধার্য করে কাবিন নামা সম্পাদন করেন। শুরু হয় তাদের সাংসারিক জীবন। তাদের সাংসারিক জীবন চলাকালীন সময়ে ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। যার নাম ইয়ামিন মল্লিক বরেন্য। তার কয়েক বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালের ২০ আগস্ট তাদের কোল জুড়ে আরেকটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। যার নাম ফারজান মল্লিক টিকলী। তাদের সাংসারিক জীবন চলাকালীন রেজওয়ান মল্লিক তুষার অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় রেজওয়ান মল্লিক তুষার তার স্ত্রীকে রেখে অন্যত্র থাকতে শুরু করে এবং স্ত্রী মাহফুজা রেজওয়ান ওরফে মৃদুলা রায়কে ভরণপোষন বন্ধ করে দেয়। শুধু যে ভরণপোষন বন্ধ করে দেয় তা ঠিক নয়, তার সাথে শুরু হয় অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন। একই সঙ্গে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন তার স্বামী। যদি ওই টাকা দিতে পারে তাহলে তার সঙ্গে সংসার করা যাবে, তা না হলে যাবে না। এরই প্রেক্ষিতে মাহফুজা রেজওয়ান ওরফে মৃদুলা রায় বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশুলিয়া আমলী আদালতে রেজওয়ান মল্লিক তুষারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তারই প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত উচ্চমান সহকারী রেজওয়ান মল্লিক তুষারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

এ ব্যাপারে রেজওয়ান মল্লিক তুষারের স্ত্রী মাহফুজা রেজওয়ান ওরফে মৃদুলা রায়ের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, রেজওয়ান মল্লিকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে আমি হিন্দু সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলাম। তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক থেকেই আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই। তাকে বিয়ে করবো বলেই আমি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। তারপর আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে তাকে বিয়ে করি। তার সংসারে থাকাকালীন আমাদের ২টি বাচ্চা হয়। আমাদের বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই সে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। আমি শত নিষেধ করলেও সে আমার কথা শুনতো না। আমাকে রেখে অন্য নারীদের সাথে রাত কাটাতো। আমি সব মুখ বুজে সহ্য করতাম। কারণ আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি শুধু ওর সাথে সংসার করবো বলে। মাঝে মাঝে ওকে বাঁধা দিতাম। বাঁধা দিতে গেলেই আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। এখন আবার যৌতুক হিসেবে ২ লাখ টাকা চাচ্ছে। আমি টাকা পাবো কোথায়? যারা আমাকে টাকা দিতো আমিতো তাদের ছেড়ে চলে এসেছি। আজ ৫/৬ মাস ধরে আমাদের ভরণ পোষন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সে এখন কোথায় থাকে আমরা জানি না। আমাদের কোনো খোঁজ খবরও সে নিচ্ছে না। আমি ২টা সন্তান নিয়ে কোথায় যাই? রেজওয়ান যদি আমাদের ভরণপোষন না দেয় তাহলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো রাস্তা থাকবে না। আমি চাই রেজওয়ান আমাদের সাথে থাকুক। আর যদি সে আমাদের সাথে থাকতে না চায় তাহলে আমাদের ভরণপোষন সঠিকভাবে দিক। তাহলে আমরা তাকে বিরক্ত করবো না।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা উপ আয়কর কমিশনার অফিসের উচ্চমান সহকারী রেজওয়ান মল্লিক তুষারের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বলেন, তুই আমার যা পারিস করিস। তোর মতো দুই টাকার সাংবাদিক আমি বহু দেখেছি। পাঁচ হাজার টাকা ফেললে তোর মতো অনেক সাংবাদিককে আমি নগদ কিনতে পারি। আমার বউয়ের সঙ্গে সংসার করবো কি করবো না, সেটা আমার ব্যাপার। তুই বলার কে? আর যদি এ অফিসে তোকে কখনও দেখি তাহলে তোর হাত পা ভেঙ্গে রেখে দেব। তারপর দেখবো তোর কোন বাবা এসে ছাড়িয়ে নেয়। এ সময় শরীয়তপুর জেলা উপ আয় কর কমিশনার অফিসের উপ সহকারী আয়কর কমিশনার আতাহার আলী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। তার উচ্চমান সহকারীকে তখন তিনি কিছুই বলেননি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: