facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ যথাযথ হলে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হতো না


১৮ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার, ০৩:১৬  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ যথাযথ হলে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হতো না

দেশের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাই মুখ্য। উত্থান-পতনের সময়গুলোয় বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর আস্থা ধরে রাখতে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে প্রাইমারি রেগুলেটর বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যৌথভাবে তাদের জন্য একটি কার্যকর কোড অব কন্ডাক্ট করতে পারে। চলতি অর্থবছর পর্যালোচনা ও আসন্ন অর্থবছরের জন্য নিজেদের সুপারিশমালা তুলে ধরতে গতকাল এক অনুষ্ঠানে এ মত দেয় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে আলোচনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়েও দেখা গেল আমাদের দেশে শেয়ারবাজারে অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশি উত্থান-পতন হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকগুলো দ্রুত কমে যেতে থাকে, আবার খুব কম সময়েই তা অনেক বেড়ে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যথাযথ ভূমিকা থাকলে বাজার এত অস্থিতিশীল হতো না। পুঁজিবাজার যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতির কারণ না হয়, সেদিকে নজর রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

স্টেট অব বাংলাদেশ ইকোনমি ইন ফিন্যান্সিয়াল ইয়ার ২০১৭-১৮ (সেকেন্ড রিডিং) অ্যান্ড সিপিডি’জ বাজেট রিকমেন্ডেশনস ফর ফিন্যান্সিয়াল ইয়ার ২০১৮-১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে নীতি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক উত্থান-পতনের ওপরও আলোকপাত করেছে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে চলমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সম্পর্কে সিপিডি বলেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে এক্সপোজার সমন্বয়ের সুযোগ করে দেয়ার পর বাজার চাঙ্গা হয়। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, ১৩টি ব্যাংক প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণকে সাবসিডিয়ারির পরিশোধিত মূলধনে রূপান্তর করে। বিষয়টি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ায়। তার পরও পরবর্তীতে একপর্যায়ে ২১টি ব্যাংক পুঁজিবাজারে তাদের অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে। এছাড়া পুঁজিবাজারের কার্যক্রম সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে অবগত করার নিয়মটিরও অপব্যবহার করেছে অনেক ব্যাংক। চাঙ্গা বাজারে পুরো সপ্তাহ অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে সপ্তাহের শেষভাগে শেয়ার বিক্রি করে এক্সপোজার ঠিক রাখছিল অনেক ব্যাংক।

সিপিডি বলছে, এ ধরনের আচরণ পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে ব্যাংকের দায়িত্বহীনতারই প্রতিফলন। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে বিতরণ হওয়া বর্ধিত ঋণের একটি অংশ পুঁজিবাজারে এসেছে বলেও আশঙ্কা প্রতিষ্ঠানটির।

এসব কারণে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া শেয়ার সূচকই ২০১৭ সালের শেষ দিকে এসে সংশোধনের ধারায় ফিরে আসে। কারণ বিনিয়োগকারীরা অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য সংকোচনশীল মুদ্রানীতি সম্পর্কে সতর্ক হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে এডি রেশিও কমানোর ঘোষণা, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলো শেয়ার বেচে নতুন পরিস্থিতিতে নিজেদের কমপ্লায়েন্স ঠিক রাখার চেষ্টা করে। সিপিডির দাবি, সে সময় যেসব ব্যাংক শেয়ার বেচেছে, তাদের মধ্যে কারা কমপ্লায়েন্সের কথা মাথায় রেখে সেটি করেছে, আর কারা অন্য কারণে করেছে, এগুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

পরবর্তীতে এডি রেশিও সমন্বয়ের জন্য দুই দফা সময় বাড়ানো, সিআরআর কমানো ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আরো বেশি আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ করে দেয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করে সিপিডি ঘোষিত মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

সুপারিশমালায় প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম মনিটরিংয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা বলে, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সাপ্তাহিক ভিত্তির পরিবর্তে প্রতি কার্যদিবসে রিপোর্টিং চালু করে যেকোনো ব্যত্যয়ে আশু ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট এনফোর্সমেন্ট অর্ডারগুলো বিলম্বিত হলে এসবের বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা সম্পর্কে ভুল বার্তা উঠে আসে।

বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর আস্থা সৃষ্টিতে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে সিপিডি বলে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, বিশেষ করে উত্থান-পতনের অস্থির সময়গুলোয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ব্যাংকগুলোর আচরণ তাদের দায়িত্বশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছে সিপিডি। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্য একটি কোড অব কন্ডাক্ট করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি যৌথভাবে কাজ করতে পারে। মালয়েশিয়া ও ভারতের মতো তুলনামূলক পরিণত বাজারগুলোয় এ ধরনের কোড রয়েছে।

অনুষ্ঠানে সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যসহ সিপিডির শীর্ষ পর্যায়ের গবেষক-কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: