facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

‘প্রণোদনা ফিরিয়ে নিলে পুঁজিবাজার বাঁচবে’


১৮ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার, ০২:৪৪  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


‘প্রণোদনা ফিরিয়ে নিলে পুঁজিবাজার বাঁচবে’

লাগাতার দরপতন রুখতে বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য চমকে দেওয়ার মতো বড় প্রণোদনার আশ্বাস দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট চারটি প্রণোদনার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। তবে বাজেট প্রস্তাবের পর আবারও শুরু হয়েছে দরপতন। গত দু`দিনে দু-তৃতীয়াংশের বেশি শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৩৭৫ পয়েন্টে নেমেছে। উভয় দিনে লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে সূচকের যে পতন শুরু হয়, তা লেনদেন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত চলেছে। গতকাল সোমবার সূচকের পতন ১ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, তারা এসব প্রণোদনা চান না। অর্থমন্ত্রী বাজেটে যেসব প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন, তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি তাদের। রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন বিনিয়োগকারীর একজন শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, এসব প্রণোদনা ফিরিয়ে নিলে বাজার বাঁচবে।

এদিকে, বাজেটের পর গতকাল ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সংস্থার কার্যালয়ে আইপিও আইনের সংশোধন প্রস্তাব বিষয়ে মতামত দিতে এ বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠকে বাজেট প্রস্তাব এবং চলতি দরপতন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ডিএসই সূত্র জানায়, শেয়ারবাজারের বাজেট প্রণোদনা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বৈঠকে উঠলে বিএসইসির চেয়ারম্যান জানান, এ নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন। শিগগির এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সরকারের শীর্ষ মহলকে বিষয়টি অবহিত করবেন। তা ছাড়া অর্থমন্ত্রী সুস্থ হলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট ও বিশ্নেষকরা মনে করেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনার নামে যেসব প্রস্তাব করেছেন, সেগুলো কোনো প্রণোদনা নয়। এসব প্রস্তাব কার্যকর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানি তথা বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে হতাশায় ভুগছেন। দরপতনে সেটিই ফুটে উঠছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায় অনুষদ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মূসা বলেন, কর আরোপ কোনো প্রণোদনা হতে পারে, এটা প্রথম শুনলাম। বিনিয়োগকারীরা যেখানে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী প্রাতিষ্ঠানিক করহার কমাবেন, সেখানে উল্টো পরোক্ষভাবে কর বাড়িয়ে দিলেন। বিনিয়োগকারীরা এটা ভালোভাবে নেননি। তিনি বলেন, অবিলম্বে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি না এলে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে চারটি প্রস্তাব এনেছেন। এর মধ্যে প্রথম দুই প্রস্তাবে কর আরোপের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বোনাসের পরিবর্তে নগদে এবং রিজার্ভ না রেখে মুনাফার সিংহভাগ লভ্যাংশ প্রদানে বাধ্য করার চেষ্টা করেছেন।

অর্থমন্ত্রীর বাকি দুটি প্রস্তাবের মাধ্যমে করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বর্তমানের ২৫ হাজার টাকার স্থলে ৫০ হাজার টাকা করা এবং দেশীয় কোম্পানিগুলোর মতো বিদেশি কোম্পানিগুলোকে দ্বৈত করচক্র থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ জানান, করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ানো ছাড়া বাকি তিনটি প্রণোদনাই নয়। অকারণে বোনাস লভ্যাংশ প্রদান বন্ধে গত মাসেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নির্দেশনা জারি করেছে। তিনি বলেন, মূলধন ও রিজার্ভের ওপর কর আরোপ হলে কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। এরই মধ্যে বোনাসের সমস্যাটির সমাধান এসেছে। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আইনি বিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে, কোনো কোম্পানি যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রিজার্ভ না রাখে।

আবু আহমেদ বলেন, করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ালেও উৎসে কর কেটে নেওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা এ সুবিধা কখনোই পান না। অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবেই বলেছেন, তিনি দ্বৈত কর ব্যবস্থার অবসান চান। তাই সব লভ্যাংশকে করমুক্ত ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: