facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ


২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার, ০২:১৪  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

 

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। পুঁজিবাজারে তারল্যসংকট কাটাতে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ বেঁধে দেওয়া সীমার নিচে, তাদের এ সুবিধা দেওয়া হবে। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি বন্ড বা বিল জামানত হিসেবে রাখতে হবে। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে গত ১৬ মে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবায়ন থেকে অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ বাদ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর আরও ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে আর্থিক খাতে তারল্যসংকট থাকায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে তারল্যসংকট কাটাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ গণনায় পরিবর্তনের পর এবার ধার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো। এতে পুঁজিবাজারে বেঁধে দেওয়া বিনিয়োগ সীমার নিচে থাকা ব্যাংকগুলো ৬ শতাংশ সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে পারবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। আর সাবসিডিয়ারিসহ ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। তবে অধিকাংশ ব্যাংকেরই পুঁজিবাজারে নির্ধারিত সীমার কম বিনিয়োগ রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের সময়ে সেখানে ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের বিনিয়োগ ছিল। সে সময় আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো মোট দায়ের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারত। যদিও ওই সময় অধিকাংশ ব্যাংকই সেই সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে। পরবর্তী সময়ে আইন সংশোধন করে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ কমিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৮ সাল থেকেই দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় তারল্যসংকট দেখা দেয়, যা পুঁজিবাজারেও বড় প্রভাব ফেলে। এই বাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাওয়া ও বিদেশিদের পুঁজি প্রত্যাহারের কারণে ২০১৮ সাল থেকে ২২ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক লেনদেন নেমে আসে ৪০০ কোটি টাকার নিচে। বাজার চাঙ্গা করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে কোনো উদ্যোগই কাজে লাগেনি। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পুঁজিবাজার অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করেন, যেখানে গভর্নর ফজলে কবির পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে অর্থ ধারের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গতকাল রোববারের বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকের অগ্রিম ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা কম এবং বিধিবদ্ধ জমার হার (এসএলআর) সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এসব ব্যাংকের জন্য আইনি সীমার মধ্য থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাংকগুলোর এমন বিনিয়োগে অংশগ্রহণ তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি পুঁজিবাজারের গতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণপ্রদানের মাধ্যমে এই বাজারে তারল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক ঋণসুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তারল্য সুবিধা নিতে ইচ্ছুক ব্যাংকের একক ও সমন্বিত উভয় ভিত্তিতে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত সর্বোচ্চ সীমার (ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ২৫ শতাংশ এবং সমন্বিত ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ৫০ শতাংশ) কম হতে হবে। তারল্য সুবিধা গ্রহণের পরও উল্লিখিত বিনিয়োগ সীমা পরিপালন করতে হবে। এ সুবিধার অধীনে প্রাপ্ত ঋণ শুধু ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। এজন্য আলাদা বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হবে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে এই ঋণ ট্রেজারি বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে নিতে হবে। ট্রেজারি বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। নগদে রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য আদায়যোগ্য অর্থ অপেক্ষা কম হলে তা এর আগে গৃহীত মার্জিন হতে সমন্বয় করা হবে। আর সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা দিতে করতে বাধ্য থাকবে। এ ঋণের সুদের হার হবে ৬ শতাংশ। প্রাথমিকভাবে রেপোর মেয়াদ ২৮ দিন হলেও তহবিল ব্যবহারের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে তা সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত ঘূর্ণায়মাণ রাখা যাবে। এ ধরনের রেপোর জন্য কোনো নিলামের প্রয়োজন হবে না।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে এ ঋণ সুবিধা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের উল্লেখপূর্বক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে এ ঋণ বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সদ্য খোলা বিও হিসাবের প্রমাণপত্রসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হবে। ঋণের পরিমাণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং পুনর্বিবেচনার জন্য কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

মেয়াদোত্তীর্ণ রেপো নবায়নের প্রয়োজন হলে তহবিল ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টের হিসাবসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পাঁচ কার্যদিবস আগে আবেদন করতে হবে। এই ঋণ সুবিধা পেতে হলে বিজ্ঞপ্তি জারির তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: