facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

নানা তৎপরতাও কাজে আসছে না পুঁজিবাজারে


১৪ মে ২০১৯ মঙ্গলবার, ০১:২২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


নানা তৎপরতাও কাজে আসছে না পুঁজিবাজারে

টানা তিন মাসের দরপতনে বাজার সূচক ৭৭৪ পয়েন্ট কমার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা তৎপরতায় তিন দিনেই সূচক বেড়েছিল ২১৯ পয়েন্ট। সেই তৎপরতা কমতেই আবারও শুরু হয়েছে দরপতন। গত এক সপ্তাহে তালিকাভুক্ত ৩৫৩ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৮৯টি বা ৮৬ শতাংশ দর হারিয়েছে। এর মধ্যে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে অন্তত ৮৭টি শেয়ার। আর ৫ থেকে ১৫ শতাংশ দর বেড়েছে মাত্র ৯টির।

অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে এ সময়ে বাজারের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্সের পতন হয়েছে ১৪৭ পয়েন্ট বা পৌনে ৩ শতাংশ। সর্বশেষ ছয় কার্যদিবসের মধ্যে শুধু গত বৃহস্পতিবার সূচকটি ৩ পয়েন্ট বেড়েছিল। বাকি পাঁচ দিনে হারিয়েছে সূচকটি ১৫০ পয়েন্ট।

গতকাল সোমবারও ছিল একই দশা। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৩ শেয়ারের মধ্যে ২১১টির দর কমেছে, বেড়েছে ৮৭টির, বাকি ৪৫ শেয়ারের দর অপরিবর্তিত ছিল। এতে ডিএসইএক্স সূচক ২৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৫২৪৮ পয়েন্টের নিচে নেমেছে। চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে।

চলতি দরপতনের জন্য রমজানের প্রভাবকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্নিষ্টরা। তা ছাড়া ব্যাংক, বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের লভ্যাংশ ঘোষণার পর দর সংশোধন এবং চলতি হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম প্রান্তিক ও উৎপাদন এবং সেবামুখী কোম্পানিগুলোর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়েও কিছু বিনিয়োগকারী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে দরপতন রুখতে নানা তৎপরতার পর গত ৩০ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা তিন কার্যদিবসে ২১৯ পয়েন্ট বৃদ্ধির পর অনেকের শেয়ার বিক্রিকেও এ দরপতনের বড় কারণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। এ দর বৃদ্ধির ঠিক আগে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তারা হঠাৎ পাওয়া মুনাফা নিতে শেয়ার বিক্রি করলে দরপতন হয়। এ কারণে গত ৬ থেকে ৮ মে সূচকটি হারায় ১২২ পয়েন্ট।

শীর্ষ কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা অবশ্য এর বাইরে তারল্য সংকটকে দরপতনের কারণ বলে মনে করেন। তারা জানান, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর হাতে বিনিয়োগ করার মতো যথেষ্ট অর্থ নেই। সাম্প্রতিক দরপতনে বড় লোকসানের কারণে অনেকের বিনিয়োগ আটকে গেছে। এ কারণে লেনদেনে অংশগ্রহণ কমেছে, যাতে শেয়ার চাহিদা কমে। অন্যদিকে দরপতনের কারণে মার্জিন ঋণের বিও অ্যাকাউন্টগুলোতে `ফোর্সসেল` দরপতনকে উস্কে দিচ্ছে বলেও জানান তারা।

বাজার বিশ্নেষকরা জানান, দরপতন রুখতে অর্থমন্ত্রী বাজেটে প্রণোদনার আশ্বাস দিলেও সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তায় ৮৫৬ কোটি টাকার তহবিল গঠন হলেও এ তহবিল নিয়ে উৎসাহ কম। কারণ, আগে এ তহবিল লেনদেনে কোনো প্রভাব ফেলেনি।

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আইপিও, প্লেসমেন্ট শেয়ারসহ বেশ কিছু বিষয়ে আইনি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে সেটির তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব নেই। ফলে দরপতন রুখতে নানা উদ্যোগ এখনও বিনিয়োগকারীদের কাছে স্রেফ `কথার কথা` হয়ে আছে। আস্থার ঘাটতি রয়ে গেছে আগের অবস্থানে।

গতকালের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বীমা এবং মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া অন্য সব খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। তবে সর্বশেষ ছয় কার্যদিবসে বীমাসহ সব খাতেরই বেশির ভাগ শেয়ার দর হারিয়েছে। এ সময়ে ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে ১৯টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে ২১টি, বীমা খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৭টিই দর হারিয়েছে।

সর্বশেষ ছয় কার্যদিবসে একক কোম্পানি হিসেবে সর্বাধিক ১৫ শতাংশ দর হারিয়েছে ইউনাইটেড ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স। ইস্টার্ন ব্যাংকও সাড়ে ১৪ শতাংশ দর হারিয়েছে। ১০ শতাংশের ওপর দর হারিয়েছে সিটি ব্যাংক, বিডি ফাইন্যান্স, এমারেল্ড অয়েল, দুলামিয়া কটন, তুংহাই নিটিং, সেন্ট্রাল ফার্মা, বঙ্গজ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স এবং ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস। বিপরীতে ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ারদর ১৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া এসএস স্টিলের ১৩ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের ১২ শতাংশ, আরএন স্পিনিংয়ের ১০ শতাংশ দর বেড়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: