২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার, ১০:৫৩ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
পরপর দু`দিন বৃদ্ধির পর আবার একটা ধাক্কা খেল শেয়ারবাজার। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৬৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৬১ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে। এতে বাজার সূচকে বড় পতন হলেও লেনদেন অবশ্য কিছুটা বেড়েছে।
গত কয়েক দিন দু`একটি ছাড়া বেশিরভাগ খাতের শেয়ারের দর কমেছে। তবে গতকাল সিমেন্ট ছাড়া সব খাতের অধিকাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। বেশি কমেছে সর্বশেষ দু`দিনে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারদর।
বাজার-সংশ্নিষ্টরা অবশ্য গতকালের শেয়ারদর ও সূচক পতনকে স্বাভাবিক দর সংশোধন বলে চিহ্নিত করেছেন। যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক লেনদেনের ধারায় বাজারে আস্থার সংকট বাড়ছে। বিশেষত আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে অনেকে বিনিয়োগে সতর্ক। এর প্রভাব রয়েছে বাজারে। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরোক্ষ হস্তক্ষেপও বাজারকে প্রভাবিত করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্দিষ্ট শেয়ারকেন্দ্রিক কারসাজির তৎপরতা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল লেনদেন হওয়া ৩০৪ কোম্পানির মধ্যে ২০৫টির দর কমেছে, বিপরীতে বেড়েছে ৭৫টির দর। এ ছাড়া লেনদেন হওয়া ৩৪ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র সাতটির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭টির। এতে ডিএসইএক্স সূচক ৩৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৪৬৭ পয়েন্টে নেমেছে। যদিও লেনদেনের শুরুতে এ সূচক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৫৩১ পয়েন্ট ছাড়ায়। এ অবস্থা লেনদেনের শুরুর প্রথম ৮ মিনিট স্থায়ী ছিল। এরপর বেশিরভাগ শেয়ারের টানা পতনে সূচকটি একপর্যায়ে ৪১ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৪৬৪ পয়েন্টের নিচে নামে।
দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতে ৭৩ শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে ১৪৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২০টির দর। এ কারণে বাজারটির প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৩৭ পয়েন্ট হারিয়ে ১০২২৮ পয়েন্টের নিচে নেমেছে। শেয়ারদর ও সূচক কমলেও ডিএসইর লেনদেন দেড় কোটি টাকা বেড়ে ৮২৬ কোটি টাকা এবং সিএসইর লেনদেন পৌনে তিন কোটি টাকা বেড়ে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।
এদিকে নিম্নমুখী ধারার কারণে গতকাল অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির শেয়ারদরে কিছুটা লাগাম পড়েছে। এর মধ্যেও গতকাল পাঁচ কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ওই দরে স্থির ছিল শুধু এমএল ডাইং ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। লেনদেনের কিছু অংশে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হওয়া অন্য তিন শেয়ার হলো- জনতা ইন্স্যুরেন্স, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও সাফকো স্পিনিং। বিপরীতে লেনদেনের কিছু অংশে সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয় গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।
খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে শুধু মিউচুয়াল ট্রাস্টের শেয়ারদর সাড়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে ২৪টির দর কমেছে এবং অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির দর। অধিকাংশ শেয়ারের দর কমায় খাতটির সার্বিক দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে ৩ শতাংশের ওপর দরপতন হয়েছে ব্র্যাক, সিটি, যমুনা ও প্রাইম ব্যাংকের।
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কোম্পানি ২৩টি। এর মধ্যে গতকাল এ খাতের কোনো শেয়ারই লেনদেনের শেষে ঊর্ধ্বমুখী ছিল না। বরং ১৯টিই দর হারিয়েছে, অপরিবর্তিত বাকি চারটির দর। এতে খাতটির সার্বিক দরপতন হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বাধিক সাড়ে ৪ শতাংশের দর হারিয়েছে আইপিডিসি, মাইডাস ফাইন্যান্স ও ন্যাশনাল হাউজিং। এ ছাড়া বিএফআইসি, এফএএস ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং ও প্রাইম ফাইন্যান্সের দর ৩ থেকে ৪ শতাংশ কমেছে।
বীমা খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে গতকাল ৩৬টির দর কমেছে, বেড়েছে ১০টির। এর মধ্যে টানা তৃতীয় দিনে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয় প্রগতি লাইফের শেয়ার। জীবন বীমা কোম্পানিটির দর গত তিন দিনে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ১২৯ টাকা ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া জনতা ইন্স্যুরেন্সের দর গতকাল পৌনে ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ নিয়ে সর্বশেষ তিন দিনে ২৭ শতাংশ দর বেড়েছে। বিপরীতে সাড়ে ৮ শতাংশ দর হারিয়ে পতনের শীর্ষে ছিল প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং এরপরের অবস্থানে থাকা গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স ৭ শতাংশ দর হারিয়েছে।
অন্যদিকে আলোচনায় থাকা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেরও বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমেছে। এ খাতের ১৯ কোম্পানির মধ্যে ১২টির দর কমেছে, বেড়েছে সাতটির। এর মধ্যে সর্বাধিক সাড়ে ৫ শতাংশ দর বেড়েছে বারাকা পাওয়ারের। ২ শতাংশ দর বেড়েছে জিবিবি পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের। বিপরীতে সর্বাধিক প্রায় ৫ শতাংশ দর হারিয়েছে খুলনা পাওয়ার।
প্রকৌশল খাতে ছিল মিশ্রধারা। সর্বাধিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ দর বেড়েছে ন্যাশনাল টিউবস, ইফাদ অটোস ও ইস্টার্ন কেবলসের। সর্বাধিক পৌনে ৭ শতাংশ দর হারিয়েছে গোল্ডেন সন। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২৯ কোম্পানির মধ্যে ২২টিই দর হারিয়েছে। বস্ত্র খাতের ৫১ কোম্পানির মধ্যে ৩৩টির দর কমেছে। একমাত্র সিমেন্ট খাতে গতকাল ছিল ইতিবাচক ধারা। সাত কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিরই দর ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। দর হারানো বাকি দুটির মধ্যে মেঘনা সিমেন্টের দর পৌনে ১ শতাংশ কমেছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।