facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

দরপতনকে উস্কে দিয়েছে পিপলস লিজিং


১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার, ০২:০৯  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


দরপতনকে উস্কে দিয়েছে পিপলস লিজিং

প্রতিদিনই দরপতন হচ্ছে শেয়ারবাজারে। গত এক মাসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২৯৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ হারিয়েছে। গত ৩০ জুন বাজেট পাসের পর দরপতন ত্বরান্বিত হয়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত চলতি জুলাই মাসের নয় কার্যদিবসের আট দিনই দরপতন হয়েছে। এতে ডিএসইএক্স সূচক ২৪২ পয়েন্ট বা সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে। এ সময় তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির সব শেয়ারের দর অর্থাৎ বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা কমেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, দরপতনই শেয়ারবাজারের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ধস নামার পর মাঝে কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও কখনও স্বস্তিতে ছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। আওয়ামী লীগ সরকার নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। বিশেষত জানুয়ারির পর টানা কয়েক মাসের দরপতনের প্রেক্ষাপটে তিনি বাজেটে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণায় অনেক বিনিয়োগকারী আশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর হতাশ হয়েছেন তারা। ফলে ফের দরপতন শুরু হয়েছে। বাজেট পাসের পর দরপতনের মাত্রা বেড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের শেয়ারবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাজেট ঘোষণার আগে গত ২৬ মে থেকে ১৩ জুন (সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করার আগ পর্যন্ত) অধিকাংশ শেয়ারের বাজারদর বেড়েছিল। এতে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছিল প্রায় ২২৪ পয়েন্ট। বাজার মূলধন ১৬ হাজার ২৫১ কোটি টাকা বেড়েছিল।

কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর গত ১৬ জুন থেকে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে। এ সময়ের ২০ কার্যদিবসের ১৪ কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। ওই ছয় দিনে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছিল ৮৯ পয়েন্ট, সেখানে বাকি ১৪ দিনে সূচকটি হারায় ৩৯০ পয়েন্ট। এর মধ্যে চলতি মাসের ৯ কার্যদিবসের মধ্যে আট কার্যদিবসে সূচকটি হারিয়েছে আড়াইশ` পয়েন্ট। এ সময় বাজার মূলধন হারিয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নগদ লভ্যাংশ দিতে উদ্বুদ্ধ করতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর করের চাপ বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী যে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি করেছেন তা ভালোভাবে নেননি বিনিয়োগকারীরা। অর্থমন্ত্রী প্রণোদনার আশ্বাস দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো প্রণোদনা না দিলে বিনিয়োগকারীরা যতটা অসন্তুষ্ট হতেন, প্রণোদনার নামে করারোপে বেশি অসন্তুষ্ট ও হতাশ হয়েছেন।

গতকালের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে ১৮ শতাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৭৬ শতাংশেরও বেশি শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এতে ডিএসইএক্স প্রায় ৪৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৯ পয়েন্টে নেমেছে। সূচকের এ অবস্থান গত আড়াই মাসের সর্বনিম্ন। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতেও একই রকম দরপতন হয়েছে। এ বাজারে ২২ শতাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে প্রায় ৭২ শতাংশের দরপতন হয়েছে।

ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল সব খাতেরই অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বীমা খাতের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির ধারা দেখা গেলেও গতকাল উভয় খাতের দরপতন হয়েছে।

ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটির দর বেড়েছে, দর হারিয়েছে ২৬টি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে ২০টির দরপতন হয়েছে। বীমা খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে দরপতন হয়েছে ৩৩টির। একই ভাবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ১৯ কোম্পানির মধ্যে ১৩টির, প্রকৌশল খাতের ৩৮ কোম্পানির মধ্যে ২৭টির, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩২ কোম্পানির মধ্যে ২৫টির এবং বস্ত্র খাতের ৫৫ কোম্পানির মধ্যে ৪৭টির দরপতন হয়েছে। অন্য সব খাতেও ছিল একই চিত্র।

বাজার সংশ্নিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিনের নানা সংকটের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের অবসায়ন এবং লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত দরপতনকে উস্কে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির অবসায়নের খবর প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার ডিএসই শেয়ারটির লেনদেন স্থগিত করে। এই স্থগিতের আগে সর্বশেষ চার কার্যদিবসে শেয়ারটির দর চার টাকা থেকে দুই টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছিল।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: