facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

দরপতন ঠেকাতে মাঠে ডিএসইর সার্ভিল্যান্স টিম


২৫ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০১:৩৯  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


দরপতন ঠেকাতে মাঠে ডিএসইর সার্ভিল্যান্স টিম

টানা দরপতনের মধ্যে আগের দিনের বড় উত্থানে যারা আশাবাদী ছিলেন, তাদের প্রত্যাশা মিইয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কেননা গতকাল বুধবার দেশের দুই শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরু থেকেই সূচক নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। এতে ভীতির মধ্যে থাকা বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। প্রথম পৌনে দুই ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারায় ৫৭ পয়েন্ট। এমন পরিস্থিতি যাতে না হয় সে জন্য শুরু থেকেই নানামুখী তৎপরতা চালায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবুও একের পর এক শেয়ার দর হারাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এসব পদক্ষেপ কাজে আসে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস থেকে শেয়ার বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি কেনার মাধ্যমে সূচক টেনে তোলা হয়। এতে মঙ্গলবারের তুলনায় প্রায় ৬ পয়েন্ট ওপরে ওঠে সূচক। যদিও ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে আধা পয়েন্টেরও কম হারিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।

বাজার-সংশ্নিষ্টরা জানান, শেয়ার বিক্রির চাপ কমাতে আগের দিন মঙ্গলবারের মতো গতকালও দিনের লেনদেন শুরুর আগে থেকে তৎপর ছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর সঙ্গে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর কর্মকর্তারাও যোগ দেন। টানা দরপতনের ভীতি থেকে আতঙ্কের মধ্যে থাকা বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাঙ্গা রাখতে দরপতন ঠেকাতে উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টা ছিল উল্লেখ করার মতো।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্র জানায়, গতকাল লেনদেন শুরুর আগে থেকে ফোনে বিএসইসির কর্মকর্তারা গ্রাহকদের বড় বিক্রির আদেশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে শেয়ার কিনে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহায়তা চান। বিএসইসি এবং ডিএসই ও সিএসইর সংশ্নিষ্টরা জানান, কমিশনের অনুরোধ শুরুতে কেউ কেউ না রাখলেও পরে সাড়া দেয়। এ কারণে শুরুর বড় পতন ঠেকিয়ে সূচককে ঊর্ধ্বমুখী রাখা গেছে।

মঙ্গলবারের ১১১ পয়েন্ট বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় লেনদেন শুরু হয় ঊর্ধ্বমুখী ধারায়। প্রথম ২ মিনিটে লেনদেনে আসার বেশিরভাগ শেয়ার দরবৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট বেড়ে প্রায় ৫০৮০ পয়েন্টে ওঠে। ঊর্ধ্বমুখী এ ধারা শেষ হয় সেখানেই। এরপরই আসে শেয়ার বিক্রির ব্যাপক চাপ। পরের ১৭ মিনিটে সূচকটি ৩০ পয়েন্ট হারিয়ে ৫০৫০ পয়েন্টে নামে।

এ অবস্থায় বিএসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তারা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এতে কিছুটা সফলও হন তারা। পরের ১৫ মিনিটে হারানো পয়েন্ট ফিরে পায় সূচক। এরপর সকাল ১১টা ৭ মিনিটের পর বিক্রির যে চাপ আসে, তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সূচক আবারও টানা পড়তে থাকে। পরের এক ঘণ্টায় ডিএসইএক্স আরও ৫০ পয়েন্ট হারিয়ে ৫০১৯ পয়েন্টে নামলে কঠোর অবস্থানে যায় বিএসইসি। এ পর্যায়ে ডিএসইর একটি সার্ভিল্যান্স টিম শীর্ষ একটি ব্রোকারেজ হাউসে গিয়ে তাদের গ্রাহকদের শেয়ার কেনাবেচার আদেশসহ নথি পরীক্ষা করে। তাদের শেয়ার বিক্রি থামাতে অনুরোধ করেন। ব্রোকারেজ হাউসটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে চলতি দরপতনের কারণ খুঁজতে বিএসইসির তদন্ত কমিটি মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বিকেলে বৈঠক করেন বিএসইসির তদন্ত কর্মকর্তারা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএসইসি কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। এর আগে গত রোববার শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে এবং গত সোমবার মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিটির সদস্যরা।

বিএসইসি সূত্র জানায়, সংস্থাটি মনে করছে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে দরপতনকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তদন্ত কমিটি এদের খুঁজে বের করবে। কমিটি এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ের বড় ক্রেতা ও বিক্রেতার তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি সার্ভিল্যান্স বিভাগের তথ্য পরীক্ষা করে দেখছে।

বাজার পরিস্থিতি :দিনভর টানাহ্যাঁচড়ার পর দিনের শেষে সূচকের পতনের আধা পয়েন্টেরও কমে (শূন্য দশমিক ৪৬) নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা খাতের বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধির ভূমিকাই বেশি ছিল। এই তিন খাতের লেনদেন হওয়া ৯৯ কোম্পানির মধ্যে ৪৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ৩১টির।

এই তিন আর্থিক খাতের বাইরে বাকি ১৫ খাতের লেনদেন হওয়া ২১৭ কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৬৩টির দর বেড়েছে, বিপরীতে দর হারিয়েছে ১৪২টি শেয়ার। অবশ্য এর মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ওষুধ ও রসায়ন এবং পাট খাতে দর হারানো শেয়ার সংখ্যার তুলনায় দরবৃদ্ধি পাওয়া শেয়ার সংখ্যা বেশি ছিল।

তবে শেয়ারগুলোর দরে ব্যাপক অস্থিরতার মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড খাত ছিল পুরোপুরি চাঙ্গা। ৩৭টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৫টিরই বাজারদর বেড়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, উত্থান-পতনের মধ্যেও গতকাল ডিএসইতে ২৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টিই ছিল মিউচুয়াল ফান্ড। বাকি যে ১৪টি শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে, তার সবই ছিল দুর্বল মৌলভিত্তির বা রুগ্‌ণ কোম্পানি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: