facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

‘কথার ফুলঝরি ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের ভয় দূর হবে না’


২৩ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার, ১০:১৮  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


‘কথার ফুলঝরি ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের ভয় দূর হবে না’

চলতি বছরের শুরুতে মুদ্রানীতি ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সিদ্ধান্তে দরপতন শুরু হয়। পরে রাজনৈতিক ইস্যুতে তা নতুন মাত্রা পায়। এর মধ্যে মাঝে মাঝে সূচক বেড়েছে। তবে থেমে থেমে সে দরপতন এখনও চলছে। আর আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোল যতই বাড়ছে, শেয়ারবাজারে দরপতনের মাত্রা সাম্প্রতিক সময়ে ততই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মূলধন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে, আরও দরপতনের ভীতি থেকে অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করছেন। এতে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ছে। এতদিন যেসব শেয়ার বিনিয়োগকারীরা ধরে রেখেছিলেন, এখন সেগুলোর দরপতনে মূলধন ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অনেকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, গত বছরের পুরো সময়ে শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স যতটা বেড়েছিল, গত ৯ মাসের দরপতনে সূচকটি তার থেকেও বেশি পয়েন্ট হারিয়েছে। সূচকটি ফিরে গেছে এখন থেকে পৌনে দুই বছর আগের অর্থাৎ গত বছরের ৯ জানুয়ারির অবস্থানে।

শেয়ারদর বা সূচকের আরও পতন ঠেকাতে গতকাল সক্রিয় ছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবিসহ প্রভাবশালী ব্রোকারদের সহায়তা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে আজকের লেনদেন শুরুর আগে কমিশন শীর্ষ ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের বৈঠক ডেকেছে। সকাল পৌনে ১০টায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে রাজধানীর ডিআইটি রোডের আইসিবির প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে।

চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গত রোববার ডিএসইএক্স সূচক ৫০ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৩৩১ পয়েন্টে নেমেছিল। গতকাল সোমবারের দরপতনে সূচকের পতন ৭৯ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। নেমেছে ৫২৯২ পয়েন্টের নিচে। গত দু`দিনে সূচক কমেছে ১২৯ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ। ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারির পর এটাই সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এমনকি গত ২৫ জুনের পর গতকালের সূচক পতনের হার ছিল সবচেয়ে বেশি।

সূচকের এ পতনে একক কোম্পানি হিসেবে স্কয়ার ফার্মা বড় প্রভাব রেখেছে। এ শেয়ারের দরপতনে সূচক হারিয়েছে অন্তত ১০ পয়েন্ট। এ ছাড়া বিএসআরএম লিমিটেড, লাফার্জ-হোলসিম, খুলনা পাওয়ার, ব্র্যাক ব্যাংক, বার্জার, ইউনাইটেড পাওয়ার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের মূল্যহ্রাস সূচকের পতন বাড়িয়েছে। খাত হিসেবে শুধু ব্যাংক খাতের কারণেই গতকাল সূচক কমেছে প্রায় ২১ পয়েন্ট। প্রকৌশল, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের কারণে কমেছে আরও ৩৪ পয়েন্ট।

মঙ্গলবারের বৈঠক প্রসঙ্গে সাইফুর রহমান বলেন, নানা কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করার বিষয়ে আলোচনা করতে কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকটি ডাকা হয়েছে।

দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই রাজনৈতিক অস্থিরতার ভয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা শঙ্কিত। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি যে, দরপতন মাত্রা ছাড়াতে পারে।

তিনি বলেন, শুধু কথার ফুলঝরি ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের এ ভয় দূর করা যাবে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আনতে হবে; কিন্তু সংকটটা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোজার বিধান (শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা) দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর কথা দিয়েছিলেন, এক্সপোজার গণনা পদ্ধতি সংশোধন করবেন। তিনি তা করেননি। অর্থমন্ত্রী দুই দফায় গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন। তাতেও কাজ হয়নি। এভাবে চললে সংকটকালীন সময়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠানকেই কাছে পাওয়া যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, রাজনীতির নানা ঘটনা শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও এর ভালো খবরগুলোর ইতিবাচক প্রভাব বাজারে নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেটে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে- এমন খবরে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব থাকার কথা থাকলেও তা নেই।

বিএসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমানও স্বীকার করেন, রাজনীতি চলমান দরপতনের একটা কারণ। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন এলে সব দেশের শেয়ারবাজারে কিছু না কিছু অস্থিরতা দেখা যায়। এটা বাংলাদেশে এবারই প্রথম হচ্ছে, তাও নয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারলে সংকটাবস্থা সামাল দেওয়া যেত বলে মত দেন তিনি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: