facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

একটি শেয়ার নিয়ে খেলছে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ


০৮ মে ২০১৮ মঙ্গলবার, ০২:০৩  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


একটি শেয়ার নিয়ে খেলছে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি এইচআর টেক্সটাইলকে ঘিরে এবার সক্রিয় হয়েছেন শীর্ষ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ। স্বল্প মূলধনী এই কোম্পানির শেয়ার স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুততম সময়ে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। বস্ত্র খাতের অন্যান্য কোম্পানির দরবৃদ্ধিকে এক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তারা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে তালিকাভুক্ত এইচ আর টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১১.৬১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৭.৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বস্ত্র খাতের এই কোম্পানিকে ঘিরে মূলত কারসাজি বা সিরিয়াল ট্রেডিং শুরু হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল। দিনটিতে কোম্পানিটির সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ওইদিন ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৬১০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। যা আগে কখনও ঘটেনি। ওইদিনে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি শেয়ার কিনেছে বাজারে অন্যতম সক্রিয় ব্রোকারেজ হাউজ কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ। এর আগে ব্রোকারেজ হাউজটি মুন্নু গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির নেপথ্যে ছিল। এছাড়া আরও কয়েকটি কোম্পানির দরবৃদ্ধির নেপথ্যে হাউজটির সক্রিয়তা রয়েছে।

৩০ এপ্রিল কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজের পক্ষ থেকে এইচআর টেক্সটাইলের মোট ১ লাখ ৯ হাজার ৮৬৮টি শেয়ার কেনা হয়েছিল। এছাড়া ইবিএল সিকিউরিটিজ ওই দিনই ১ লাখ ৭ হাজার শেয়ার কিনেছিল। ক্রেতার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল আইডিএলসি সিকিউরিটিজ। প্রতিষ্ঠানটি মোট ৮৮ হাজার ২৯০টি শেয়ার কেনে। ৭০ হাজার শেয়ার কিনে চতুর্থ অবস্থানে ছিল আদিল সিকিউরিটিজ। ওয়ান সিকিউরিটিজ ৬৮ হাজার কিনেছিল। একইদিনে এসআইবিএল সিকিউরিটিজ ৫৯ হাজার ৫শ শেয়ার কিনেছিল। মূলত এভাবেই অত্যাধিক ক্রয় চাপের কারণেই সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে কোম্পানিটি।

অপরদিকে ওই দিনে সর্বোচ্চ শেয়ার বিক্রি করা হয় ই-সিকিউরিটিজ লিমিটেড থেকে। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ টি শেয়ার বিক্রি করা হয়। এছাড়া বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড থেকে ৮১ হাজার ৭০৩টি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। একইদিনে লঙ্কাবাংলা থেকে ৮১ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হয়।

এদিকে গত ৩ মে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় এইচআর টেক্সটাইলের শেয়ার লেনদেনে। এই দিনে আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দিনটিতে মোট ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৮৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৯ হাজার ৮শ শেয়ার কিনে শীর্ষে ছিল লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স। ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪শ শেয়ার কিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ। দ্বিতীয় দিনেও কোম্পানিটি শেয়ার ক্রয় অব্যাহত রাখে। ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ কিনেছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮শ শেয়ার। মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস কেনে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬শ, শাহ মোহাম্মদ সগীর কোম্পানি কিনে ১ লাখ ১২ লাখ ৩৬৪টি এবং ই- সিকিউরিটি কিনে ১ লাখ ৮ হাজার ৮শ শেয়ার। দরবৃদ্ধির কারণে এই দিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ ১ লাখ ৮৫ হাজার ১১২টি শেয়ার বিক্রি করে। এরপরে আইসিবি ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬০টি শেয়ার বিক্রি করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তালিকায় ছিল। অন্যদিকে ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৯০টি শেয়ার বিক্রি করে এবং এর বাইরে সাবভেলি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ১ লাখ ৬ হাজার ২২৬টি শেয়ার বিক্রি করে। দুই দিনেই ক্রেতার তালিকায় ছিল কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ। কিন্তু কেনার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার বিক্রি করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বল্প মূলধনী কোম্পানির কারণে এই চক্র সহজেই শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দর বাড়াচ্ছেন। যদিও কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির পেছনে কোন কারণ নেই। তবুও থামছে না কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির আগের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে। কিন্তু সেটিও এই দরবৃদ্ধির সঙ্গে কোনভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ এই কোম্পানির দর এখন দুই বছরের সর্বোচ্চ ৪৫.৮০ টাকায় অবস্থান করছে।

ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৭ মে) ডিএসইতে কোম্পানিটির মোট ১৯ লাখ ৮২ হাজার ১৮৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দিনটিতে আগের দিনের চেয়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা দর বেড়েছে। গত ২৪ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৩২.৮০ টাকা। সোমবার লেনদেন শেষে ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ৪৪.৮০ টাকায়। অর্থাৎ এই কয়েকদিনে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১২ টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর দর যখন বাড়ছে, ঠিক এই সময়ে একই চক্র যারা ঝুঁকি নিতে পারেন তারা এই কোম্পানিকে ঘিরে দ্রুত মুনাফা করতে চাচ্ছেন। ফলে কোম্পানিটির দর ও লেনদেন বাড়ছে। কিন্তু এই দরবৃদ্ধির কোম্পানিটির মৌলভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: