১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার, ০২:৩৮ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাজেট বিষয়ে আগাম ধারণা দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজেটে `প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু` থাকবে, চমক অপেক্ষা করছে অনেকের জন্য। শেষ পর্যন্ত চমকই দেখালেন তিনি। অতীতের প্রথাগত কর ছাড়ভিত্তিক প্রণোদনা নয়, বরং কর আরোপ করেই বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত রুগ্ণ কোম্পানির বিষয়টি এতদিন অবহেলিত থাকলেও এগুলোরও একটা বিহিত করার পথ খুঁজেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট প্রস্তাবে তিনি বলেন, আর্থিক ভিত মজবুত রয়েছে এমন কোম্পানি একীভূত করে নিতে চাইলে তাকে উৎসাহিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে দর কষাকষি প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিনিয়োগ সুবিধা দিতেও সরকার রাজি। তবে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবটি পরিস্কার নয় বলে জানান শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্টরা।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা যাতে অধিক হারে এবং নগদ লভ্যাংশ পান, সে জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অভিনব প্রস্তাব করেছেন তিনি। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন, কোনো কোম্পানি নগদের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশ দিতে চাইলে ওই বোনাস লভ্যাংশের ওপরই ১৫ শতাংশ কর কার্য করা হবে। এমন করারোপের যৌক্তিকতা বা ব্যাখ্যা বাজেট বক্তব্যেই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বাজেট প্রস্তাবে বলেন, কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে শেয়ারহোল্ডাররা নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করলেও কিছু কোম্পানি নগদের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করতে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ কর প্রস্তাব করা হচ্ছে। শুধু বোনাস লভ্যাংশ নয়, যেসব কোম্পানি সংশ্নিষ্ট বছরের কর-পূর্ব নিট মুনাফার সিংহভাগ লভ্যাংশ আকারে
বিতরণ না করে মুনাফা পুঞ্জিভূত করছে, তাদের ওই পুঞ্জিভূত মুনাফার (রিটেইন্ড আর্নিংস) ওপরও ১৫ শতাংশ আকারে কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। কোনো কোম্পানির পুঞ্জিভূত মুনাফা সংশ্নিষ্ট কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হলে, ওই অতিরিক্ত অংশের ওপর কর দিতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকবে। বর্তমানে এ সীমা ২৫ হাজার টাকা।
এদিকে দ্বৈত কর নীতি পরিহারের ধারা অব্যাহত রাখার কথা বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের ওপর একাধিকবার করারোপ করার বিধান গত বছর কার্যকর হয়েছে। একই বিধান বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রেও কার্যকর করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
শিল্পে বিনিয়োগকারীরা যাতে ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ না নিয়ে শেয়ারবাজারমুখী হন- অর্থমন্ত্রী সেই আকাঙ্ক্ষার কথা বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ করেন। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিল্পে বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংগ্রহের সবচেয়ে ভালো উৎস হলো শেয়ারবাজার। তবে বাংলাদেশে ব্যাংক খাত থেকে স্বল্পমেয়াদি আমানতের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের প্রবণতা লক্ষণীয়, যা পৃথিবীর অন্যত্র দেখা যায় না। এ ব্যবস্থায় ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে শেয়ারবাজার থেকেই যাতে উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে উৎসাহী হন, সে রকম ব্যবস্থা গড়তে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় অনুষদ বিভাগের ডিন মোহাম্মদ মূসা বলেন, কর আরোপ করেও যে বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা দেওয়া যায়, এমন ধারণা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চমকই। তার প্রস্তাব পড়ে মনে হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা যাতে অতীতের তুলনায় অধিক হারে এবং অবশ্যই নগদ আকারে লভ্যাংশ পান, তিনি সেটাই চেয়েছেন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।