facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৮ মে বুধবার, ২০২৪

Walton

ঈদের আগেই আ.লীগে মনোনয়ন সংকেত


০৯ জুন ২০১৭ শুক্রবার, ০৭:৪১  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


ঈদের আগেই আ.লীগে মনোনয়ন সংকেত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ঈদুল ফিতরকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষে ঈদের আগে চলতি রোজার মধ্যেই প্রত্যেক আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিয়ে রাখবে তারা।

শুধু তাই নয়, যেসব আসনে সম্ভাব্য তালিকা বা প্যানেল ঠিক করতে খুব একটা সমস্যা হয়নি, সেসব আসনে রোজার শুরতেই এ সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করেন, রোজায় ইফতার কেন্দ্রীক জনসংযোগ হয়ে থাকে। আর এ জনসংযোগ চলে পুরো রোজার মাসজুড়েই। তাই যেসব আসনে সম্ভব হয়েছে রোজার শুরুতেই সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে এ মাসটি তারা কাজে লাগাতে পারেন।

আর সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটারের সঙ্গে জনসংযোগের উপলক্ষ্য তৈরি হয় প্রধানত ঈদে। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, অনেক ভোটার আছেন যারা গ্রামে বা দেশে থাকেন না, কিন্তু ঈদে বাড়ি আসেন। নির্বাচনের সময় তারা দেশে থাকেন বা না থাকেন, কিন্তু পরিবার বা স্বজনের ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বড় ভূমিকা থাকে। সবমিলে রোজার শুরুতে না পারলেও ঈদের আগেই সবুজ সংকেত দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করবে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, এ সংক্রান্ত তালিকা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দপ্তরে রয়েছে। মূলত মাঠ জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতেই এ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে একটি জরিপ নয়, এ তালিকা বা প্যানেল করা হয়েছে চারটি জরিপের ফলাফলের সমন্বয়ে। এ চার জরিপের মধ্যে দুইটি করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে, একটি দলের কোর টিম, আর অন্যটি করেছে একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

এদিকে এ চারটি জরিপও করা হয়েছে, নির্দিষ্ট চারটি বিষয়ের ভিত্তিতে। এগুলো হলো, (১) নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সংসদীয় এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ কেমন করেছেন (এমপির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), (২) এলাকায় নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে জনমত কেমন, (৩) প্রতিপক্ষের প্রার্থী আর্থিকভাবে অনেক বেশি সামর্থবান হলে, তার তুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর আর্থিক অবস্থা কেমন, (৪) সবমিলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থীকে টপকে নির্বাচনে জেতার সক্ষমতা রাখে কি-না।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শ’খানেক নতুন প্রার্থী দেবে। তবে এটি নতুন কিছু নয়। গত নির্বাচনেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।

বৃহৎ পরিসরের নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের পরও কক্সবাজারের ইয়াবা পাচার রুট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আগুন, সাঁওতাল উচ্ছেদ, সর্বোচ্চ আদালতে দুই মন্ত্রীর দণ্ডিত হওয়াসহ মন্ত্রী-এমপিদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিব্রতকর হওয়ার মতো কারণও আছে আওয়ামী লীগের সামনে। খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার এ নিয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করছেন। সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে কাউকে ডেকেও সতর্ক করেছেন ওবায়দুল কাদের।

শুধু তাই নয়, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না, এমন অন্তত ৭০ জন বর্তমান মন্ত্রী ও এমপির তালিকাও করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে বর্তমান এমপিদের আমলনামা, স্বতন্ত্র এমপিদের আওয়ামী লীগে যোগদান ও শরিকদলগুলোর সঙ্গে আসন সংক্রান্ত বোঝাপড়াসহ অন্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ তালিকা আরও দীর্ঘ হয়ে ১০০-তে পৌঁছাতে পারে বলে জানা গেছে।

তালিকার যাদের নাম জানা গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা-৬ আসনের এমপি শেখ মো. নূরুল হক। তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এদিকে কম্পিউটারে ফটোশপের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ নিজের শরীরের অংশের ছবির সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখমণ্ডলের ছবি লাগিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে।

এদিকে সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে নারী নিপীড়নের ঘটনায় নাম আসে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের (বি এইচ হারুন)। ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হারুন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিতর্কিত রেইনট্রি হোটেলটি তার ছোট ছেলে মাহির হারুন চালান। আর হোটেলের প্লটটির মালিক এমপি নিজেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতবাড়িতে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের সঙ্গে নাম আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীরও। গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সমালোচিত হন গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে হামলার ঘটনায়।

টাঙ্গাইল-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলা।

ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহর বিরুদ্ধে দলীয়কর্মী আজিজুল হককে গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

তাছাড়া সাবেক শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নরসিংদী-৫, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির চাঁদপুর-৩, পূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের চট্টগ্রাম-১, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ঢাকা-১৮, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হকের সাতক্ষীরা-২ আসনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এসব আসনেও আসতে পারে নতুন মুখ। দলীয় হেভিওয়েট এসব নেতার সঙ্গে তৃণমূলের অব্যাহত দূরত্বের কারণেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তাছাড়া প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কর্মকাণ্ডের জন্যও তাদের কয়েকজনের নাম রয়েছে এ তালিকায়। তাদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম এবং পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ নিজেদের বিতর্কিত করেছেন এলাকায় নিজেদের আগমন উপলক্ষে স্কুল শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে।

নেত্রকোনা-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় সমালোচিত হয়েছেন অস্ত্রসহ উত্তরার একটি বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগে।

আর মন্ত্রীদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের নামও শোনা যাচ্ছে নেতিবাচক তালিকায়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: