০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার, ১২:০৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১০ সালে বাজার ধসের পর অনেক প্রস্তাব এসেছিল। যেমন সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন কীভাবে সক্ষমতা অর্জন করবে, কীভাবে তারা ভালো শেয়ারবাজারে নিয়ে আসবে, কীভাবে জেড ক্যাটেগরির শেয়ারের লেনদেন কমানো যায়, কীভাবে গেম্বলিং থেকে পুঁজিবাজারকে বের করে আনা যায় প্রভৃতি। আর এসবের কিছুই এখনও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন করতে পারেনি।
যেখানে দেশের অর্থনীতির সব সূচক ভালো সেখানে পুঁজিবাজার কেন অসুস্থ হয়ে আছে? এই অস্বাভাবিক বাজারের জন্য আমরা কেন বিএসইসিকে দোষারোপ না করে অন্যদের করি? বিএসইসির যা করার কথা ছিল তা তারা করেনি। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়গুলো আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর মো. সাজ্জাদুর রহমান ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারকে ঘিরে সবারই প্রত্যাশা ছিল ২০১৮ সালে বাজার ভালো যাবে। তা না হয়ে বাজার খুবই নেতিবাচক অবস্থানে চলে গেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে সূচকের বড় পতন ঘটেছে। কিন্তু এ সময় বাজারের এমন অবস্থা খুবই অপ্রত্যাশিত, কারণ ডিসেম্বরে বছর শেষ হওয়ার পর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ডিভিডেন্ড ঘোষণার সময়। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর আর আমাদের বাজারে ব্যাংক খাতের আধিপত্য বেশি। সব দিক বিবেচনায় বর্তমান বাজারের এমন আচরণ খুবই অপ্রত্যাশিত। বাজারের এমন আচরণের জন্য দুটি ইস্যু কাজ করেছে বলে আমার মনে হয়। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবারের মুদ্রানীতিতে এডি রেশিও (অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও) কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বেশ কিছু ব্যাংক একসঙ্গে ডিপোজিটর সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ডিপোজিট রেট এখন আট-নয় শতাংশ হয়ে গেছে। কেউ আবার ৯ শতাংশের ওপরেও দিচ্ছে, যারা একসময় ছয় শতাংশও দিত না। যে কারণে এর একটি প্রভাব বাজারে পড়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার একটি মামলার রায় হওয়া নিয়ে বাজারে এক ধরনের গুজব বা মনস্তাত্ত্বিক বিষয় কাজ করছে। শেষ ১৫-২০ বছরে দেশের অর্থনীতিতে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেক ছিল। এক সরকার থেকে অন্য সরকার এসেছে, বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে, কিন্তু দেশের অর্থনীতি থেমে থাকেনি। এরকম সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে বাজারে এমন প্রভাব পড়ার কথা ছিল না। গত চার-পাঁচ দিনে বাজার অনেক পড়ে গেছে। ভালো শেয়ারগুলোরও দরপতন হচ্ছে। এখানে কোনো কারসাজি হচ্ছে কি না সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, অনেকেই মনে করছেন সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণার কারণে বাজার নেতিবাচক অবস্থায় চলে গেছে। কিন্তু এভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই, কারণ মুদ্রানীতি ঘোষণার দুই-চার দিনের ব্যবধানেই এমন ব্যাপক দরপতন হওয়াটি যৌক্তিক নয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য কোনো কারণ আছে। তাছাড়া ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। ২০১০ সালের বাজার ধসের পর অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছিল। যেমন সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন কীভাবে সক্ষমতা অর্জন করবে, কীভাবে তারা ভালো শেয়ার বাজারে নিয়ে আসবে, কীভাবে জেড ক্যাটেগরির শেয়ারের লেনদেন কমানো যায়, কীভাবে গেম্বলিং থেকে পুঁজিবাজারকে বের করে আনা যায় প্রভৃতি। আর এসবের কিছুই এখনও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন করতে পারেনি এবং কী কারণে তারা পারল না, সেটি কেন আমরা খতিয়ে দেখি না। যেখানে দেশের অর্থনীতির সব সূচক ভালো সেখানে পুঁজিবাজার কেন অসুস্থ হয়ে আছে? এই অস্বাভাবিক বাজারের জন্য আমরা কেন বিএসইসিকে দোষারোপ না করে অন্যদের করি?
বিএসইসির যা করার কথা ছিল তা তারা করেনি। গত ছয় মাসে বিএসইসি যে কয়টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে এনেছে সেগুলো কি আসলেই বাজারে আসার মতো কোম্পানি? এদের মধ্যে কিছু কোম্পানি বাজারে আসতে না আসতেই জেড ক্যাটেগরিতে চলে গেছে। তাহলে কীভাবে এসব কোম্পানি বাজারে আসার অনুমোদন পেল, এ ব্যাপারে বিএসইসির জবাবদিহিতা করা উচিত। তারা কেন বাজারে ভালো কোম্পানি আনতে পারছে না? ২০১০ সালে যে কয়টি প্রস্তাব এসেছিল সেগুলোর কোনো খোঁজ-খবর নিয়েছে তারা? আগে যে অনিয়মগুলো ছিল সেগুলো থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি। সিডিবিএলের তথ্যগুলো মানুষের সামনে চলে আসে। যারা খেলোয়াড় তাদের সবার কাছে তথ্য থাকে কারা কী কিনেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সিডিবিএলের তথ্য কেন সবার কাছে যাবে? আর এই কথাগুলো কেন ব্রোকাররা বলেন না? তাছাড়া লক্ষ করলে দেখবেন, জেড ক্যাটেগরির কোম্পানিগুলো যখন অতিরিক্ত বাড়ে তখন বিএসইসি কিছুই বলে না।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।