১০ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার, ০২:২৭ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
রাইট শেয়ার ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি বঙ্গজ লিমিটেড। এজন্য গাজীপুরে এক একরেরও বেশি জমি লিজও নিয়েছিল কোম্পানিটি। কিন্তু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছ থেকে রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন না পাওয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণ পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কোম্পানিটি। সম্প্রতি জমি লিজের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গজের পর্ষদ। মূলত অর্থের অভাবেই ব্যবসা সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে বলে দাবি করছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।
কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে পণ্যের চাহিদা ধরে রাখতে বৈচিত্র্যতার পাশাপাশি আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো বৈচিত্র্যকরণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাজারে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসছে। তাতে বঙ্গজকে একটি ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এছাড়া কাঁচামালের দর বাড়লেও ব্যবসায়িক বাস্তবতায় সমানুপাতে পণ্যের দাম বাড়াতে পারছে না কোম্পানিটি। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে কারখানার আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। এসব দিক বিবেচনায় রাইটের অর্থে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল কোম্পানি। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে রাইটের অনুমোদন না পাওয়ায় সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কোম্পানি। সম্প্রতি লিজ চুক্তিটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর পর্ষদ।
বঙ্গজের পরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, মূলত রাইট শেয়ার ইস্যু করে কারখানার বিএমআরই বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তাই দুই বছর চেষ্টা করেও যখন অনুমোদন পাওয়া যায়নি, তখন আমরা রাইট প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিই। কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বিকল্প তহবিলের সংস্থান না থাকায় এ থেকে সরে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এজন্যই জমির লিজ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। আপাতত নতুন করে আবারো রাইট শেয়ার ইস্যু কিংবা ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা না থাকলেও ভবিষ্যতে ব্যাংকঋণ বা অন্য কোনোভাবে অর্থ সংস্থানের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে আগ্রহী কোম্পানির উদ্যোক্তারা।
জানা যায়, ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি গাজীপুরের শ্রীপুরে ১ দশমিক ১১ একর (১১০ দশমিক ৯৭ ডেসিমাল) জমি ২৫ বছরের জন্য লিজ নেয়ার চুক্তি করে বঙ্গজ। বিস্কুট উৎপাদনের জন্য ইউরোপ থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি আমদানি ও স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণের জন্য জমি লিজ নেয় কোম্পানিটি। সম্প্রসারণ প্রকল্পের অর্থ সংস্থানে পরের বছরের এপ্রিলে ৩:১ অনুপাতে (বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে তিনটি শেয়ার) রাইট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটি। এজন্য বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নেয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে আবেদন করে তারা। কিন্তু প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বিএসইসির পক্ষ থেকে রাইট ইস্যুর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে কোম্পানির পক্ষ থেকে আবারো রাইট ইস্যুর অনুমোদন চাওয়া হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাড়া পায়নি তারা। ফলে গত বছরের ডিসেম্বরে কোম্পানি নিজ থেকেই রাইট ইস্যুর আবেদন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ প্রকল্পের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ জমি লিজের চুক্তি বাতিল করে বঙ্গজ।
এদিকে কোম্পানিটির লোকসান আরো বাড়ছে। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুই বছর ধরেই লোকসানের মুখে রয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ২৪ লাখ টাকা এবং ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে ৩৯ লাখ টাকা করপরবর্তী লোকসান হয়েছে বঙ্গজের। লোকসানের কারণে গত দুই বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (ইপিএস) ৬২ পয়সা, যেখানে আগের বছরে লোকসান ছিল ৩৮ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ২২ টাকা ১৩ পয়সায়।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য এজেন্ডা অনুমোদনের জন্য ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গায় কারখানা প্রাঙ্গণে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করবে কোম্পানিটি। রেকর্ড ডেট ১৪ ডিসেম্বর।
১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর শেয়ার সংখ্যা ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৪০৫। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৮ দশমিক ১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৫৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার।
ডিএসইতে সর্বশেষ ১৫০ টাকায় বঙ্গজের শেয়ার হাতবদল হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর ছিল ১৬৬ টাকা ২০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ১০৯ টাকা ১০ পয়সা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।