facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলো রিজার্ভ


০৮ নভেম্বর ২০২১ সোমবার, ০৪:২৫  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলো রিজার্ভ

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যা গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। অথচ দুই-আড়াই মাস আগেও দশ মাসের আমদানি খরচ মেটানোর রিজার্ভ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে।গত বৃহস্পতিবার আকু বিল পরিশোধের আগে রিজার্ভ ছিল ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার।

হঠাৎ করে আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির বিশ্লেষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিম্মগতি রিজার্ভ কমার আরও একটি কারণ বলে জানিয়েছেন তারা।

বেশ কয়েক বছর ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। একের পর এক রেকর্ড হয়। মহামারি করোনাকালে আমদানিতে ধীরগতি আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের উর্ধ্বগতির কারণে গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে, যা ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
আমদানি বাড়ায় রিজার্ভ থেকে প্রয়োজনীয় ডলার চলে যাওয়ায় অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে তা ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

রপ্তানি বাড়ায় গত এক মাসে তা খানিকটা বেড়ে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। বৃহস্পতিবার আকুর দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর দেনা পরিশোধের পর ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। মার্চের শেষের দিকে তা আবার ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

২৮ এপ্রিল রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে রিজার্ভ। তবে ৪ মে আকুর আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ফের ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

এক মাসেরও কম সময়ে ১ জুন তা আবার ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। জুন মাস শেষে সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

গত অক্টোবর মাসে ৭ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

যখন ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল, তখন পণ্য আমদানিতে মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হতো।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমদানি বাড়লে রিজার্ভ কমবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এখন সন্তোষজনক রিজার্ভ মজুদ আছে। আর আমদানি বাড়া তো ভালো। এতে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে।

তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন বেশি দিন থাকবে না। সেটাই হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, অনন্তকাল ধরে প্রবাসীরা বেশি অর্থ দেশে পাঠাবেন, এটার কোনো কারণ নেই। তবে, ভালো খবর হচ্ছে, রপ্তানি আয় বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাাঁচামালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও আমদানি খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে আমদানিতে রিজার্ভ থেকে আগের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। সে কারণেই রিজার্ভ কমছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে ৬৯৯ দশমিক ৬০ কোটি (৭ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এক মাসের হিসাবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

রেমিট্যান্সের চার মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৭০৫ কোটি ৫০ লাখ (৭ দশমিক ০৫ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৮৮১ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এ হিসাবে এই চার মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ শতাংশ।

তবে, রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এই চার মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: