facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ মে রবিবার, ২০২৪

Walton

স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট খুলনা


০৭ মে ২০২৪ মঙ্গলবার, ০৬:১৭  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট খুলনা

স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল খুলনা। সেখানে প্রায়ই ধরা পড়ছে স্বর্ণের ছোট বড় চালান। আটকও হচ্ছেন চোরাকারবারিরা। এসব স্বর্ণের বার বহনকারী ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ।

জানা যায়, রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আবু কালাম প্রতি মাসে ৫/৬ বার ঢাকা থেকে স্বর্ণের বার নিয়ে বাসে খুলনা হয়ে যেতেন সাতক্ষীরায়। সেখানে পৌঁছে দেয়া স্বর্ণের বারগুলো অবৈধ পথে পাচার হত ভারতে। গত প্রায় ২ মাস ধরে এই কাজ করতেন তিনি। অবশেষে গত ২ মে খুলনার সাচিবুনিয়া এলাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার স্যান্ডেলের ভেতর লুকিয়ে রাখা প্রায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের ৭৩৮ গ্রাম ওজনের ৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে পুলিশ।

শুধু আবু কালাম নয়, তার মতো আরও বেশ কয়েকজন প্রতি মাসে ৫/৬ বার করে ঢাকা থেকে বাসে করে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরায় স্বর্ণের বার নিয়ে যান। গত প্রায় দেড় বছরে খুলনা থেকে ৪০টি স্বর্ণের বারসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এর বাইরেও অনেক পাচারকারী স্বর্ণের বার সাতক্ষীরায় পৌঁছে দিচ্ছেন। স্বর্ণের বার বহনকারী, রাজধানী ও সাতক্ষীরার পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাচারকারীরা বিভিন্ন কৌশলে স্বর্ণ পাচার করছেন। স্বর্ণের বার বহনকারীরা ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে যাত্রীবাহী বাসে করে যান। বহনকারীরা সাধারণ পোশাক পরে যাতায়াত করেন, যাতে তাদের কেউ সন্দেহ না করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মে লবণচরা থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর সাচিবুনিয়া এলাকায় সাতক্ষীরাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে। এ সময় স্বর্ণের বার বহনকারী ঢাকার সূত্রাপুর থানার আইজিগেট পোস্তগোলা এলাকার মো. আলী আহমেদের ছেলে মো. আবু কালামকে আটক করে। এ ঘটনায় আবু কালামসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে লবণচরা থানায় মামলা হয়েছে।

এর আগে গত ২০ এপ্রিল নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের একটি বাস থেকে ১২টি স্বর্ণের বারসহ মাসুম বিল্লাহ নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। মাসুম বিল্লাহর জুতার নিচে কৌশলে স্বর্ণের বারগুলো রাখা ছিল। উদ্ধার করা স্বর্ণের বারের মূল্য প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আটক মাসুম বিল্লাহ সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার শাকড়া গ্রামের আলম গাজীর ছেলে। বারগুলো সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আল ফেরদাউস আলফা’র কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল।

২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি নগরীর জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে ১৫টি স্বর্ণের বারসহ ইমন ও আবুল হোসেন নামে ২ জনকে আটক করে লবণচরা থানা পুলিশ। তারা ঢাকা থেকে স্বর্ণের বারগুলো ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে জুতার মধ্যে করে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাসে সাতক্ষীরা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই বারগুলোর ওজন প্রায় ১ কেজি ৭৫০ গ্রাম। আটক দুইজনই ঢাকার বাসিন্দা।

গত বছর ১২ জানুয়ারি পেশাদার স্বর্ণ পাচারকারী ব্যাসদেব দে ৬টি স্বর্ণের বার ভারতে পাচারের জন্য ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া পরিবহনযোগে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে খুলনার সাচিবুনিয়া মোড়ে তাকে ৬টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে তিনটি তাকে দিয়ে দেয়া হয় এবং মোটরসাইকেলে করে তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

বিষয়টি ব্যাসদেব দে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরপর নগরীর খালিশপুর এলাকার স্বর্ণ পাচারকারী ব্যাসদেব দে, লবণচরা থানার এস আই মোস্তফা জামান, এএসআই আহসান হাবিব ও কনস্টেবল মুরাদ হোসেনকে আটক করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ঢাকার স্বর্ণ চোরাকারবারিরা এখন ভারতে স্বর্ণের বার পাচারের জন্য খুলনা রুট বেছে নিয়েছে। যে পরিমাণ স্বর্ণ পাচার হচ্ছে তার খুব কমই আটক হচ্ছে বলে তার ধারণা। এছাড়া স্বর্ণ বহনকারীরা আটক হলেও সাতক্ষীরা এবং ঢাকা-দুই প্রান্তের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

লবণচরা থানার ওসি মো. মমতাজুল হক জানান, সর্বশেষ গত ২ মে আটক আবু কালামকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, স্বর্ণের বারের মালিক তিনি নন, তিনি শুধু বহনকারী। ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতিবার তাকে ৫ হাজার টাকা দেয়া হত। তিনি তার কাছ থেকে এনেছিলেন এবং তার কাছে দিতেন সেই নাম পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বর্ণের বার কোথা থেকে কীভাবে আসে, কোথায় যায়, পাচারের সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। চোরাচালানের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ বার হাতবদল হয়। যারা বহনকারী তারা হয়ত মূল হোতাকে দেখেও না। যার ফলে তার নামও জানে না। সে কারণে মূল হোতারা কেউ এখনও ধরা পড়েনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম জানান, গত ২০ এপ্রিল ১২টি স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনায় বহনকারী মাসুম বিল্লাহসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বারগুলো সাতক্ষীরার দেবহাটার আল ফেরদাউস আলফার কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। মাসুমকে আটক করার আগে আলফা তার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছিলেন। মাসুম বিল্লাহ কারাগারে আছেন। অন্য ৩ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

তিনি জানান, পরপর কয়েকটি চালান ধরা পড়ার পর আরও সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। এই চোরাচালানের সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: