facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ মে রবিবার, ২০২৪

Walton

সারাজীবনের সঞ্চয়ে স্কুল, রেখা রাণীর মুখে হাসি ফুটবে?


১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার, ১২:১৯  পিএম

শেয়ার বিজনেস ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


সারাজীবনের সঞ্চয়ে স্কুল, রেখা রাণীর মুখে হাসি ফুটবে?

অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিতে না পারার পর জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা গোপালগঞ্জের রেখা রাণী ওঝার মুখে হাসি ফোটানোর উদ্যোগ নিয়েছে জেলা ও শিক্ষা প্রশাসন। ‘জীবন সায়াহ্নে এসে’ তার কান্নাভেজা বক্তব্যের ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়। এরপর কোটালীপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ‘কুমারী রেখা রাণী গার্লস হাইস্কুল’ পরিদর্শন করেন। স্কুলটিকে এমপিওভুক্ত করার সুপারিশ করে সরকারপ্রধানের কাছে প্রতিবেদনও দিয়েছেন।

স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরাও চাইছেন, স্কুলটি দ্রুত এমপিওভুক্ত হোক। কোটালীপাড়ার ইউএনও আজিম উদ্দিন বিডিনিউজ বলেন, “আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেখা রাণীর সঙ্গে কথাও বলেছি। বিদ্যালয়টি দ্রুত এমপিওভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রেরণ করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হবে।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর আলম সিদ্দিক বলেন, “কুমারী রেখা রাণীর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই বিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে এমপিওভুক্ত করতে হলে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের রেখা রাণী বিয়ে করেননি। স্কুলের মেয়েদেরকে মাতৃস্নেহে আগলে রাখেন তিনি। তাদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে বিত্তশালীদের দুয়াদে দুয়ারে ছোটেন। বয়স ৭০ এর কোটায় চলে আসার পর তিনি চাইছেন একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। তার চাওয়া, সরকার এ স্কুলের দায়িত্ব নিক। তিনি না থাকলে যেন ছাত্রীদের কোনো সমস্যা না হয়।

জীবন সায়াহ্নে এসে রেখা রাণীর কান্নাভেজা বক্তব্যের একটি ভিডিও মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। দুই হাত জোড় করে তিনি বলছিলেন, তার মৃত্যুর সময় হয়ে গেছে, আজ আছেন, কাল থাকবেন না, তার মনের আশা এই স্কুলটি কলেজ হবে। বোর্ড থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সে ক্ষমতা কি আমার আছে? প্রধানমন্ত্রী আসবেন, উনি এসে সেই কলেজের ব্যবস্থা করবেন।”

অনেকে তার ওপর অবৈধভাবে চাপ দেয় অভিযোগ করে সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, “আমার ছেলে নাই, মেয়ে নাই, আমার পেছনে কেউ দাঁড়ানোর নাই। আপনারা রিপোর্টারগণের কাছে আমার একান্ত প্রার্থনা, আপনারা দাঁড়াবেন। কীভাবে প্রধানমন্ত্রী এখানে আসবেন, আপনারা ব্যবস্থা করবেন। কীভাবে এই স্কুল পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করবে, সেই দায় দায়িত্ব আপনাদের।”

সেদিন কলেজের কথা বললেও রেখা রাণীর আরেকটি চাওয়া হল স্কুলটির এমপিওভুক্তি। তিনি বলেন, “২০১৮ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন। দ্রুত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মৃত্যুর আগে প্রতিষ্ঠানটির এমপিওভুক্তি দেখে যেতে চাই।”

যে কলাবাড়ী ইউনিয়নে স্কুলটির অবস্থান, তার চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাসও খুব করে চান রেখা রাণীর স্বপ্ন পূরণ হোক। তিনি বলেন, “তিনি একজন সর্বত্যাগী মানুষ। তার কোনো বাড়িঘর নাই। বিদ্যালয়টির একটি ছোট কক্ষে তিনি বসবাস করেন। এখানে ছাত্রীদের নিয়েই তার দিন কাটে।

“ছাত্রীদের তিনি সন্তানের মতো ভালোবাসেন। তার স্বপ্ন তার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নারী শিক্ষায় দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে। তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।” রেখা ১৯৭২ সালে স্থানীয় হিজলবাড়ি বিনয় কৃষ্ণ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর অর্থকষ্টে থমকে যায় লেখাপড়া।

কয়েক বছর পর এক স্বজনের সহযোগিতায় তিনি নার্সিংয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে পাস করে ১৯৮৩ সালে সরকারি চাকরি পান। তখনই সিদ্ধান্ত নেন আয়ের টাকায় মেয়েদের স্কুল গড়বেন। সেই স্বপ্ন পূরণে বছরের পর বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন। বেতনের টাকা থেকে জীবন ধারণের খরচ বাদ দিয়ে পুরোটা জমিয়েছেন।

২০১৪ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর অবসরকালীন সুবিধারও বেশ কিছু টাকা হাতে আসে। আগের সঞ্চয় এবং নতুন তহবিল মিলিয়ে এবার তিনি স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যান। নিজের ইউনিয়নের বুরুয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমারী রেখা রাণী গার্লস হাইস্কুল’ ।

রেখা রাণী বলেন, “নার্সিং পড়ার সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, জীবনে যেভাবেই হোক দরিদ্র মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব। তাই আমি আমার জীবনের সমস্ত সঞ্চিত অর্থ দিয়ে শেষ জীবনে এসে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। শেষ জীবনে আমি কী খাব, কোথায় থাকব তার চিন্তা করিনি।”

স্কুলটি গড়তে গিয়ে নিজের মাথার ওপর ছাদও করা হয়নি রেখা রাণীর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলিটির বিভাগ যে ভবন করে দিয়েছে, তার একটি ছোট্ট কক্ষে থাকেন তিনি। ২০১৮ সালে স্কুলটি পাঠদানের স্বীকৃতি পায়। এখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩০ জন মেয়ে পড়াশোনা করছে। তাদেরকে পড়িয়ে থাকেন আটজন শিক্ষক। কর্মচারী আছেন আরও তিনজন।

রেখা রাণীর প্রতি কৃতজ্ঞ স্কুলটির দশম শ্রেণির ছাত্রী জৈতা মধু। সে বলে, “আমাদের এলাকার কাছাকাছি কোনো স্কুল নেই। এখানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি না হলে হয়তবা আমাদের লেখাপড়া করা হত না। এখানে শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে পড়ান।”

দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী উর্বশী মজুমদার বলে, “এখানে আমাদের কোনো প্রকার টাকা-পয়সা দিতে হয় না। কুমারী রেখা রাণীই আমাদের লেখাপড়ার খরচ জোগান। তিনি আমাদেরকে সন্তানের মত ভালোবাসেন।”

একই শ্রেণির আরেক ছাত্রী রিয়া বালার কণ্ঠে নানা সংকটের কথাও উঠে এল। সে বলে, “এখানে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ আসবাবপত্রের সংকট রয়েছে। এগুলো থাকলে আমাদের শ্রেণিকক্ষে বসার সমস্যা থাকবে না। শিক্ষার পরিবেশ আরও ভালো হবে।”

মেয়েদের কাছ থেকে বেতন বা কোনো ভাতা না নেওয়ায় স্কুলটির নিজস্ব কোনো আয় নেই। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার চালাতে গিয়ে কষ্টের মধ্যে আছেন। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, “আমাদের এখানে আগে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ছিল। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে দিন দিন তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো সম্ভব হবে না।” সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: