facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৪ মে শনিবার, ২০২৪

Walton

সরকার বৃক্ষ পরিচর্যায় নজর দিলে গরম কমবে


২৪ এপ্রিল ২০২৪ বুধবার, ১১:৩৬  পিএম

অজিত কুমার মহলদার

শেয়ার বিজনেস24.কম


সরকার বৃক্ষ পরিচর্যায় নজর দিলে গরম কমবে
অজিত কুমার মহলদার

 

বৃক্ষ থেকে আসে বেঁচে থাকার একমাত্র উত্তম রসদ, তা হচ্ছে অক্সিজেন। এই অক্সিজেন তৈরি হয় বন-বৃক্ষ থেকে। ফুসফুসের একমাত্র প্রকৃত রসদ অক্সিজেন। অক্সিজেন না হলে প্রাণীকূল ধ্বংস হয়ে যাবে। আর গাছ ধ্বংস হলেই আমাদের চিরন্তন বেঁচে থাকার দিবাস্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। তাই আসুন, আমরা বৃক্ষ রোপণ করি পরিবেশ-প্রতিবেশ সুস্থ্য রাখি। জলবায়ু-আবহাওয়া আমাদের উপযোগী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। সরকার সবর্দা বৃক্ষরোপণ করে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করবে, এই ধারণা সঠিক নয়। জনগণকেও মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। মাঠির অভ্যন্তর থেকে শিকড়ের মাধ্যমে জল সংগ্রহ করে পাতায় নিয়ে আসে গাছ। এরপর সেই পানি সূর্যের তাপে বাষ্পীয় হয়ে বায়ুমণ্ডল বা আকাশমণ্ডলে জড়ো হয়। এছাড়া জলাশয়, সাগর-মহাসাগরের জলও বাষ্পীয় হয়ে নভোমÐলে জড়ো হয়। ধুলিকণা-বাষ্পীয়কণা মেঘে ঘণিভূত হয়ে বৃষ্টি হয়। পরিবেশ শীতল হয়। মানুষ শান্তি পায়।

জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ। তবুও বিজ্ঞানীরা অলস বসে নেই। তারা বৈশি^ক তাপমাত্রা কমানোর জন্য কি কি করণীয় তা বিশ^বাসী তথা জাতিসংঘকে পরামর্শ দিয়েছেন। তাপমাত্রা বা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতিসংঘ রিও ডি জেনেরিওতে সম্মেলন করে। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু-পরিবেশ নিয়ে এজেন্ডা নির্ধারণ করা। এতে কিছুটা সফল হয়েছে জাতিসংঘ। প্যারিস চুক্তির উদ্দেশ্য জলবায়ুর প্রভাব মানিয়ে চলা ও বিরূপ প্রভাব কমাতে অর্থ যোগান দেওয়া। রামসার কনভেনশনের আওতায় বর্তমান সরকার জলাভূমিকে সংরক্ষণ করছে। কিয়োটো প্রটোকল অনুযায়ী গ্রীণহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কাজ করছে সরকার।

একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয়। বাংলাদেশের আয়তনের ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমি। এটা যথেষ্ট আশা ব্যঞ্জক। শেখ হাসিনার সরকার বনভূমি আরও বিশদ করতে ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

সরকার ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য ৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই অর্থে ৮৫৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮৫টি প্রকল্পের কর্যক্রম পুরোদস্তুর সমাপ্ত করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। বাকী প্রকল্পের কাজ চলছে।

দেশের বনজ সম্পদের ঘাটতি পূরণ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বন অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এছাড়া বন ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধনের জন্য সকল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ কতিপয় কার্যক্রম ডিজিটালি করা হচ্ছে। বন এলাকার পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় পতিত ও প্রান্তিক ভূমিতে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করে বনজ সম্পদ বৃদ্ধিকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জনগণের মধ্যে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা বিষয়ে গণসচেতনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ সমস্ত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বন অধিদপ্তর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।

বন সম্প্রসারণ করছে সরকার। বনাচ্ছাদন ও বৃক্ষাচ্ছাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী সৃজন করা হয়েছে। বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে।

পাশাপাশি অবক্ষয়প্রাপ্ত বন এলাকা পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছে সরকার। যার মধ্যে পাহাড়ি বন ৮৯৫০ হেক্টর ও শালবন ১৩৬০ হেক্টর পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আগর ৩০০ হেক্টর, বাঁশ ২৫৫ হেক্টর, বেত ৪০, ঔষধি ৫০, বিরল ও বিপদাপন্ন প্রজাতির জন্য ৪৮৯, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন ৫৫০, বন্যপ্রাণী চলাচলের করিডোর চিহ্নিতকরণ ও বৃক্ষরোপণ ১৪০, ম্যানগ্রোভ ৯৪৫০ ও ঝাউগাছের ১০০ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছে। এছাড়া গোলপাতার বন সৃজন ৩৫০ কিলোমিটার, ৬৪ হাজার তালগাছ রোপণ ও ৭ লাখ ৮৮ হাজার চারা বিক্রয় ও বিতরণ করেছে সরকার।

বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ৬১৫ গ্রামের ৪১ হাজার পরিবারকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে বন পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষিত হচ্ছে। বিদেশী আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মাধবকুন্ড ইকোপার্কের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ভবিষ্যতে টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২৫ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। মহামায়া ইকোপার্কের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রতিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বপ্রথম উপকূলীয় চরাঞ্চলে সফল বনায়নকারী দেশ। বন বিভাগ ষাটের দশক থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা চরে বনায়ন শুরু করেছে। চরে এই বনায়ন বনজ সম্পদ সৃষ্টির পাশাপাশি উপকূলবাসীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙ্গন ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে সবুজ বেষ্টনী হিসেবে কাজ করছে। কার্বন হ্রাসেও ভূমিকা রাখছে।

উপকূলীয় চরাঞ্চলে ২ হাজার ৫২১ বর্গকিলোমিটার বনায়ন করা হয়েছে। ১৯৮১ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক বনায়নের আওতায় ১ লাখ ৫ হাজার ২৮৩ হেক্টর বন ও ৭৮ হাজার ৮৩২ কিলোমিটার বাগান সৃজন করেছে সরকার। এযাবৎ সামাজিক বনায়নে সরকার ৫৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা আয় করেছে। এছাড়া বন অধিদপ্তর দেশে বনায়নের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

‘বন্যপ্রাণী রক্ষা পেলে বনভূমি রক্ষা পাবে’। এজন্য সরকার সবরকম পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বন অধিদপ্তর ৪৩ হাজার ৩৬৪টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছে। যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে ঐসব বন্যপ্রাণী প্রকৃতিতে অবমুক্ত করেছে। করোনার পরে ৫৬ জেলার ২৪৫ স্থানে বন্যপ্রাণী বিষয়ক ২৮৯টি কার্যক্রম সম্পন্ন করে জনগণকে সচেতন করেছে।

সরকার ঢাকা-ভাঙ্গা বিরতিহীন মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাপকহারে বৃক্ষাচ্ছাদন করেছে। ঢাকা-যশোর নতুন নির্মিত রেলপথে বৃক্ষরোপণ করা হবে। হাওড় এলাকায় একটি সড়ক সকলের নজর কেড়েছে। ঐ সড়কে সম্প্রতি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আলপনা লেপন করা হয়েছে, সীমিত হলে ভালো হতো। প্রত্যাশা, ঐ সড়কের দুইধারে ব্যাপক বৃক্ষাচ্ছাদন করবে সরকার।

জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে বৃক্ষাচ্ছাদন করা হয়েছে। মানিকমিয়া এভিনিউ দুইভাগে বিভক্ত করে মাঝখানে বৃক্ষ দিয়ে শোভিত করা হয়েছে। তেমনি ঢাকামহানগরে কিছু উন্মুক্ত স্থানে বৃক্ষ রোপিত হয়েছে। ঢাকার রমনাপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বৃক্ষরাজি দেখলে যেকোনো ব্যক্তির মনে শীতল অনুভূতি উৎপন্ন হবে। সবুজ-হলদে রঙে মন রাঙিয়ে যাবে। তবে কিছু কিছু সড়কের মাঝখানে বৃক্ষ উৎপাটন করা হয়েছে, কিন্তু সেইখানে সরকার নানাপ্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করেনি। ঢাকার সাতমসজিদ সড়কের বিভাজক থেকে বড় বড় বৃক্ষ ছেদন করা হলো, তখন প্রতিবাদ উঠল, বন্ধ হলো বৃক্ষছেদন। কিন্তু রোপণ করা হলো চারা, বড় হতে সময় লাগবে; ততোদিন সাতমসজিদ সড়কে গ্রীষ্মকালে গরম থাকবে। আশেপাশের লোকালয়ে দাবদাহ থাকবে। তবে আমাদের সচেতন হতে হবে। অযথা শীতাতপ যন্ত্র (এসি) ব্যবহার করা যাবে না। ঢাবির শ্রেণিকক্ষে এসি লাগে না, যদি জানালা খুলে দিয়ে সিলিং ফ্যান চালানো যায়। তাপমাত্রা কম থাকলে গাড়িগুলোতে এসি ব্যবহার করা লাগতো না।

ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম- এ তিন শহর গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অযাচিত ইমারত তৈরি করবে না সিটি করপোরেশন। সরকারি জায়গা উন্মুক্ত রাখবে সিটি কর্পোরেশন। খালি জায়গায় বৃক্ষরোপণ করবে; নতুবা বিনোদনের জন্য পার্ক বা খেলার মাঠ তৈরি করবে। যেমন- ঢাকার আজিমপুর মোড়ের পাশে ও ঢাকেশ^রী মন্দিরের সামনে নতুন করে ইমারত তৈরি করছে সিটি কর্পোরেশন। এটা মোটেই দরকার ছিল না। এই জায়গা উন্মুক্ত রাখতে হতো, তাহলে বাতাসের খেলাধুলো চলতো; পরিবেশ ঠান্ডা থাকতো। আবহাওয়া শীতল রাখতে প্রতি উপজেলায় চিড়িয়াখানা ও নব্য পুকুর করা যেতে পারে।

‘রাতের বেলা কম আলো, পাখিদের জন্য বেশী ভালো’। এই বাণীকে মান্যতা দিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে। নিরাপত্তার খাতিরে সরকার রাতের বেলায় পুলিশী টহল বৃদ্ধি করতে পারে। রাত ১১টার পর সড়কবাতি বন্ধ করে দেবে। তাতে করে আবহাওয়া দ্রæত শীতল হবে। এতে দেশের বায়ুমন্ডল ঊষ্ণ কম হবে। ফলে মানুষ স্বস্তি পাবে।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন চলছে পুরোদমে’। তবে পরিচর্যার অভাব রয়েছে। যার কারণে বৃক্ষ ও বন রক্ষা পাচ্ছে না। ফলে গরম বাড়ছে। আশা থাকবে, শেখ হাসিনার সরকার গাছ পরিচর্যায় বেশি নজর দেবে।


লেখক: প্রাক্তন নির্বাহী সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। [email protected]

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: