facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৩ মে শুক্রবার, ২০২৪

Walton

ফুলেল শ্রদ্ধায় শিব নারায়ণ দাশকে বিদায়


২০ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার, ০২:০৬  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


ফুলেল শ্রদ্ধায় শিব নারায়ণ দাশকে বিদায়

বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিব নারায়ণ দাশের কফিন নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিরা তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ৭৮ বছর বয়সী শিব নারায়ণ দাশ শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিব নারায়ণ দাশের চক্ষু সন্ধানীতে দান করা হয়েছে এবং তার দেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হবে।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিব নারায়ণ দাশের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিকালে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হবে।

শহীদ মিনারে শিব নারায়ণ দাশের কফিনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের সঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানও শ্রদ্ধা জানান।

শ্রদ্ধা নিবেদনে শেষে আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন, যে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগ এদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। সর্বোপরি তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার একজন লড়াকু কর্মী ছিলেন।

“আমাদের জাতীয় পতাকার নকশা করার ব্যাপারে তিনি অবদান রেখেছেন। এটা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। আমরা পুরো জাতি তার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।” শহীদ মিনারে শিব নারায়ণ দাশকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “একটা রাষ্ট্র বর্তমান থাকতে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংগ্রাম চলছিল, সেই সংগ্রামের অংশ হিসেবে আরেকটি রাষ্ট্রের পতাকা তৈরি করা ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসী কাজ। সেই দুঃসাহসী কাজটি করেছে ছাত্রলীগের নেতারা, সেটার নকশা তৈরি করেছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আমাদের শিবু দা। আমরা তার প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাই।”

শিব নারায়ণ দাশ এক সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা ছিলেন। অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, “শিব নারায়ণ ছিলেন আপাদমস্তক একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাকে আমরা শুধু জাতীয় পতাকা অংকনের জন্যই মনে রাখব না, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি জাসদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। “তিনি দেশের জন্য অকাতরে সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। শেষ সময়ে এসেও তিনি তার দেহ ও চক্ষু দেশের জন্য দান করে গেছেন।”

শিব নারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেন, “আমার বাবা এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি কখনো অন্যায়, দুর্নীতি ও মিথ্যাচারের সাথে আপস করেননি। বাংলাদেশের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে তিনি কখনো আপস করেননি। আমার বাবা আদর্শকে অনুসরণ করে আপনারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটা আমার প্রত্যাশা।

“আমার বাবা সব সময় একটি কথাই বলে গেছেন, এই দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত যে সকল মানুষ রয়েছে, তাদের জন্য কথা বলতে হবে।”

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কাস পার্টি, জেএসডি, জাতীয় যুব জোট, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণজাগরণ মঞ্চ, সহযাত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ৫ দলীয় বাম জোট, বাংলাদেশ গণ সংগীত সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শিব নারায়ণ দাশের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানোনো হয়।

শিব নারায়ণের তৈরি করা বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকা ধরেই হয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। লাল-সবুজের ভেতরে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ওই পতাকার নকশা যারা করেছিলেন, তাদের একজন সে সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শিব নারায়ণ দাশ।

১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৮ নম্বর কক্ষে বসে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ওই পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন ‘জয়বাংলা বাহিনীর’ জন্য।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে সরকার শিল্পী কামরুল হাসানকে পতাকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলে। কামরুল হাসান মানচিত্র সম্বলিত ওই লাল-সবুজ পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দিয়ে যে পতাকার নকশা করেন সেটিই এখন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: