facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

পদ্মাসেতু এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের নামে অর্ধশত কোটি টাকা নয়ছয়


১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শনিবার, ০৩:০৩  পিএম

এমএ ওয়াদুদ মিয়া, শরীয়তপুর

শেয়ার বিজনেস24.কম


পদ্মাসেতু এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের নামে অর্ধশত কোটি টাকা নয়ছয়

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকার ৯৯ কম্পোজিট বিগ্রেডের একটি স্থায়ী সেনানিবাস স্থাপনের জন্য ১০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছিলেন। আর সেই অধিগ্রহণকৃত ভূমির উপর কতিপয় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন স্থাপনা, অবোকাঠামো নির্মাণ এবং গাছ পালা লাগিয়ে সরকারের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এতে সরকারের কিছু দায়িত্বশীল অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পদ্মাসেতুর সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের কথা চিন্তা করে সরকার ২০১৫ সালের প্রথম দিকে সেতু এলাকার মধ্যে জাজিরা পয়েন্টে একটি স্থায়ী সেনানিবাস নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। আর সেই পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে সরকার পদ্মাসেতুর জাজিরা অংশের ল্যান্ডিং পয়েন্টের পূর্ব পাশে ১০১নং নাওডোবা মৌজায় ১০০ একর ভূমি এলএ ৮নং কেসের মাধ্যমে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করেন। সেই অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ, গাছপালা লাগানোসহ পুকুর খননের কাজ শুরু করেন এবং তারা ভূমির প্রকৃত মালিক না হওয়া সত্ত্বেও মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকায় যারা স্থায়ীভাবে বসবাস করে এমন কিছু আত্মীয় স্বজনদের নাম দেখিয়ে ঘর তোলেন।

আর এ অবৈধ কাজটিকে বৈধ করার জন্য ৩৬৩ জনের নাম দেখিয়ে ২৩ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ৫৫২ টাকার বিল জমা দেয় গণপূর্ত বিভাগ। অনুরূপভাবে একই ভূমিতে ১৮৫ ব্যক্তির নামে গাছ পালার তালিকা করে সেখান থেকে ১৮ কোটি ২৬ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকার বিল জমা দিয়েছে স্থানীয় বন বিভাগ।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা গণপূর্ত বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দিয়ে প্রতিটি ঘরের প্রকৃত মূল্য যা হয় তার চাইতে ৫/৬ গুন বেশি দাম ধরে বিল করেছেন। অপরদিকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ধান খেতের মধ্যে ১ বছর আগে রোপনকৃত মেহগনী, কড়ই ও চাম্বুল গাছের চারা যার প্রকৃত বাজার মূল্য ১০/১৫ টাকা তার প্রতিটি চারার মূল্য ২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা দাম ধরে বিল করেছেন। এতে বন বিভাগের কর্মকর্তারা শতকরা ২৫ টাকা হারে  ঘুষ নিয়েছে বলে জানা গেছে।



সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফসলী জমিতে ভিটা বেঁধে সাড়ি সাড়ি ঘর তোলা হয়েছে। শরীয়তপুর জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ এলাকার প্রভাবশালীরা একেক জনের নামে ৩ থেকে ৭টি করে ঘর তুলে রেখেছেন। আর সেখানকার বেশিরভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা গণপূর্ত বিভাগ এবং বন বিভাগের কতিপয় অসাদু কর্মকর্তার যোগসাজসে সরকারের কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় আবুল কালাম খান নামে এক ব্যক্তি গত ১৮ জানুয়ারি সরেজমিনে তদন্ত করে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক তার আবেদনকে কোনো মূল্যায়ন না করে ওই প্রভাবশালীদের অবৈধ টাকা পাইয়ে দিতে ২ ফেব্রুয়ারি পুণরায় ৭ ধারার নোটিশ প্রদান শুরু করেছেন। যার ফলে প্রভাবশালীরা যাতে দ্রুত টাকা পেতে পারে জেলা প্রশাসন সে রাস্তাটি সুগম করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সালে মোহাম্মদ ফিরোজ-এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা কোনো তালিকা করিনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, আমরা সে তালিকা মোতাবেক কাজ করেছি। আর গণপূর্ত বিভাগের ওপর উৎকোচ নেওয়ার একটি অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে এসেছে। তার একটা কপি আমার কাছেও এসেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তের পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে গত বুধবার শরীয়তপুর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুধীর কুমার রায় দেব শিংহ-এর সঙ্গে সরাসরি আলাপ করতে গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে আলাপ করতে চাইলে তিনি আমাদের কল রিসিভ না করে কল কেটে দিয়েছেন। পরবর্তীতে আবার কল দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন বৃহষ্পতিবার পুণরায় তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তিনি মূলত জাজিরা উপজেলার দায়িত্বে রয়েছেন। যার কারণে বেশিরভাগ সময় তিনি জাজিরাতেই অবস্থান করেন এবং সেখানে বসেই জেলার দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা অফিসে তেমন একটা আসেন না। সেই মোতাবেক বৃহষ্পতিবার জাজিরা অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেনি। বিধায় পুণরায় তার মুঠোফোনে কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলটি বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারবো না। তবে এ কাজে যদি কোনো অনিয়ম ধরা পরে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিসি স্যার বিদেশ থেকে চলে এসেছেন। আগামীকাল শরীয়তপুরে আসবেন। তিনিই এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেবেন। তার সাথে আলাপ করলে ভালো হয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: