facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সোমবার, ০২:৫৪  পিএম

এমএ ওয়াদুদ মিয়া, শরীয়তপুর

শেয়ার বিজনেস24.কম


ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

সিকদার মেডিকেল কলেজ এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেডএইচ সিকদারের বিরুদ্ধে তিনটি সংখ্যালঘু পরিবারের বসত বাড়ি এবং পরিত্যাক্ত সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সরকারি জমি দখল করে পল্লী কুটির নামে একটি বিলাস বহুল প্রমোদশালা নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। শুধু তাই নয়, যেসব সংখ্যালঘু পরিবার তার কথা শুনছেন না তাদের জোর করে সড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংখ্যালঘু রূপা রাণী দে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আর এ লিখিত অভিযোগের কারণে তারা এখন প্রাণ নাশের হুমকিতে রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। আর স্থানীয় প্রশাসন এক অদৃশ্য কারণে নীরব রয়েছে।



সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুরের মধূপুর গ্রামে প্রায় ২০ একর জমি নিয়ে পল্লী কুটির নামে একটি বিলাস বহুল প্রমোদশালা নির্মাণ করা হয়েছে। আর সেই প্রমোদশালা নির্মাণ করতে গিয়ে জেডএইচ সিকদার অবৈধ পথে জমি দখলের রাস্তা বেঁছে নিয়েছেন। সেখানে যে জমি ব্যবহার করা হয়েছে তার কিছু জমি জেডএইচ সিকদারের বাপ দাদার আমলের পৈত্রিক সম্পত্তি। কিছু জমি রয়েছে যা তিনি বিভিন্ন সময়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিনে নিয়েছেন। আর যেসব জমির মালিক তার কাছে জমি বিক্রি করতে সম্মত হয়নি, সেসব জমির মালিককে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন। আর তার হিংস্র ছোবলে তিনটি সংখ্যালঘু পরিবার তাদের বসত বাড়ি হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিচারের আশায়। তিনি শুধু সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল করেই ক্ষ্যান্ত হননি। সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের পাশাপাশি পরিত্যক্ত সরকারি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের জমিও দখল করে নিয়েছেন।



কার্তিকপুরের স্থানীয় তুহিন খান, আবদুল মান্নান সিকদার এবং ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জেডএইচ সিকদার শিক্ষাকে প্রসারিত করার জন্য কার্তিকপুরের মধুপুর গ্রামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তার পাশাপাশি মধুপুর গ্রামে হেলিকপ্টার পাইলট ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করার নাম করে প্রায়ে একশ একর ফসলী জমি কিনে নিয়েছেন। সে প্রতিষ্ঠানটি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এখনও না পাওয়ায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচ্ছন্নভাবে ঢোকার জন্য কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জরিনা সিকদার গেইট নামে একটি অত্যাধুনিক বিলাস বহুল গেইট নির্মাণ করেছেন। পল্লী কুটিরের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। কাজ শেষ হলে এলাকাটি একটি দর্শণীয় স্থানে পরিণত হবে।


 
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগকারী সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়ে রূপা রাণী দে বলেন, এটা আমাদের পৈত্রিক ভিটা বাড়ি। আমরা এ বাড়ি হারাতে চাই না। আমরা এখানেই থাকতে চাই। জেডএইচ সিকদার আমাদের বাড়িটি জোরপূর্বক দখল করতে চায়। তিনি এখানে পল্লী কুটির নামে একটি প্রমোদশালা নির্মাণ করছেন। আর এ প্রমোদশালা নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের মতো আরো দুইটি সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল করে নিয়েছেন। আমাদের বাড়ির চারপাশ দিয়ে এমনভাবে রাস্তা নির্মাণ করেছেন যাতে আমরা তাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বাড়িটা দিয়ে দেই। আমাদের বাড়িটিতে ৩৯ শতাংশ জমি ছিল। জেডএইচ সিকদার আমাদের জমি দখল করতে করতে এখন ৮/১০ শতাংশে এনে ঠেকিয়েছে। এখন এ জমি টুকুও দখল করতে চায়। আমাদের জমি যাতে দখল করতে না পারে সে জন্য শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আমি লিখিত অভিযোগ করেছি। তাতে কোনো ফল পাইনি। আর এ দিকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করায় জেডএইচ সিকদারের ভাতিজা রামভদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্পব সিকদারসহ তার লোকজন প্রতিনিয়ত আমাদেরকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। আমরা যাতে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু আমরা আমাদের পৈত্রিক বসত বাড়ি হাড়াতে চাই না। আমরা এ অন্যায়ের বিচার চাই।



এ ব্যাপারে পল্লী কুটির নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, পল্লী কুটির নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা কারো জমি জোর করে দখল করিনি। আমরা জমি কিনে নিয়েছি। আর যে মেয়েটি আমাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে আমরা তাদের জমি কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের জমির দাম বেশি চাওয়ায় কেনা সম্ভব হয়নি। আমরা তাদেরকে কোনো ভয়-ভীতি দেখাইনি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। পল্লী কুটিরের পাশে যে সরকারি জমি রয়েছে আমরা তা দখল করিনি। এলাকার নিরাপত্তার জন্য আমরা সেই সরকারি জমিতে পুলিশ ফারি নির্মাণ করে দিচ্ছি।



এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোঃ মাহামুদুল হোসাইনের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছুই জানি না। তবে আমি ব্যাপারটি খোঁজ নিচ্ছে। আর আমার কাছে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে থাকেন তাহলে তার সেই লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশ্যই ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কেউ সরকারি জমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দখল করে কোনো ইমারৎ নির্মাণ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ওই কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।


শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: