facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

জাহাজ ও নাবিকরা কবে ফিরবে জানাল মালিকপক্ষ


১৪ এপ্রিল ২০২৪ রবিবার, ০৪:৩০  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


জাহাজ ও নাবিকরা কবে ফিরবে জানাল মালিকপক্ষ

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক কবে নাগাদ দেশে ফিরবে তা জানালো মালিকপক্ষ। এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক মুক্ত হওয়ার পর রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপ ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম জানান, জাহাজটি দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ। নাবিকরা সেই জাহাজে করে অথবা দুবাই থেকে সরাসরি বিমানেও ফিরতে পারেন। এতে আরও অন্তত দশদিন বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।

মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মেহেরুল করিম বলেন, আমরা ইন্টারন্যাশনাল শিপিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমাদের ইন্টারন্যাশনাল আইন মেনেই এ ব্যবসা করতে হয়। উদ্ধার প্রক্রিয়াটাও ইন্টারন্যাশনাল আইন অনুযায়ী একদম লিগ্যালি হয়েছে। আমাদের আমেরিকার আইন মানতে হয়েছে, ব্রিটিশ আইন, কেনিয়া, এমনকি সোমালিয়ার আইনও মানতে হয়েছে। এর বেশি আমরা কিছুই শেয়ার করতে পারব না।

শনিবার ভোররাত ৩টার দিকে মুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত বার্তা পান জানিয়ে তিনি বলেন, ৯টা বোটে ৬৫ জন জলদস্যু চারপাশ ঘিরে ছিল। তারা চলে যাবার পর নাবিকদের সঙ্গে আমাদের ভিডিওকলে কথা হয়েছে। এসময় তারা কান্না করে দেন। কেএসআরএম গ্রুপ, এসআর শিপিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

কবে নাগাদ নাবিকরা দেশে ফিরতে পারেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ তারিখের (এপ্রিল) দিকে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরে পৌঁছাবেন। তাদের ওপর একটা চাপ গেছে। তারা একটু স্থির হোক। এরপর আমরা যোগাযোগ করব।

আগের জাহাজ উদ্ধার করতে ১০০ দিন লাগলেও এমভি আবদুল্লাহ ৩১ দিনেই মুক্ত হওয়ার বিষয়ে মেহেরুল করিম বলেন, প্রথম জাহাজটা অভিজ্ঞতার অভাবে উদ্ধার করতে সময় লেগেছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা আবদুল্লাহর বিষয়ে যখন যে স্টেপ নেওয়া দরকার সেটাই নিয়েছি। এজন্য এটা দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার করা গেছে।

জাহাজটি সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে মুক্ত হওয়া পর্যন্ত সার্বিক বিষয় তুলে ধরে মেহেরুল করিম বলেন, জাহাজটিকে জিম্মি করার পর থেকে কোথায় কী পজিশন, জাহাজের লোকেশন সবসময় আমরা নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্র্যাকিংয়ের মধ্যে রেখেছিলাম। উপকূলে নেওয়ার পরে জলদস্যুদের একজন কমান্ডারের সঙ্গে আমাদের টাইম টু টাইম যোগাযোগ হয়। আমাদের একটাই কথা ছিল, নাবিকরা কেমন আছেন। নাবিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত কথা হতো। পরিবারের সঙ্গেও তাদের নিয়মিত কথাবার্তা হয়েছে। আমরা জানতাম, নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন, অক্ষত আছেন।

সর্বশেষ আমরা যখন মুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করি, দুইদিন আগে ভিডিও পাঠাতে বলি যে, সকল নাবিক কেমন আছে, কী অবস্থায় আছেন। ভিডিও পাঠিয়ে আমাদের সর্বশেষ অবস্থা জানানো হয়। এভাবে ৩০টা দিন আমরা যোগাযোগ রেখেছি। শিপিং সেক্টরের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে মুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

একই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, জাহাজটি ১৯ বা ২০ তারিখ নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাত পৌঁছাবে। সেখানে কিছু ফরমালিটিজ আছে। সেগুলো শেষ করতে চার-পাঁচদিন লাগতে পারে। সেটা শেষ করে তারা হয়তো ওই জাহাজেই ব্যাক করতে পারেন অথবা ফ্লাই করতে পারেন দুবাই থেকে, সে সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নেইনি। সময় এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা সিদ্ধান্তটা নেব। তবে জাহাজটাকে আমরা ফেরত আনছি। কারণ, জাহাজের কন্ডিশন একটু চেক করার প্রয়োজন আছে।

মুক্তিপণের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু জিনিস আমরা প্রকাশ করতে পারব না। পাইরেসিকে আমরা এনকারেজ করতে পারব না। তবে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করতে সরকার সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় টাইম টু টাইম আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। বিভিন্ন মেসেজ আমাদের দিয়েছেন।

একটা সময় ছিল বিদেশি যুদ্ধজাহাজ যখন একটা জিম্মি জাহাজকে রেস্কিউ করল, তখন তারা ফোর্সফুলি আমাদের জাহাজটাকেও টেকওভার করবে, এ ধরনের একটা অবস্থান ছিল। কিন্তু আমাদের সরকারের অবস্থান ছিল যে, আমাদের মানুষের যাতে কোনো ক্ষতি হয়- এ ধরনের কোনো অবস্থায় আমরা যাব না। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকেও এ ধরনের অবস্থান ছিল। সুতরাং তারা যখন অ্যাগ্রেসিভ আচরণ শুরু করেছে, তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানালাম। আধাঘণ্টার মধ্যে দেখলাম, জাহাজগুলো ফেরত চলে যায়। কুইক রেসপন্স, কুইক অ্যাকশন। সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জলদস্যুরা নেমে যাবার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়।

জানা গেছে, শনিবার বিকেলে ছোট বিমানে করে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পাশে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। স্পিডবোটে অপেক্ষমাণ জলদস্যুদের কয়েকজন পানি থেকে ব্যাগ সংগ্রহ করেন। এর প্রায় আটঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জলদস্যুরা জাহাজ থেকে সরে যায়।

এর আগে জলদস্যুরা নাবিকদের জাহাজের ডেকে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। চারপাশে অস্ত্র তাক করে ছিল জলদস্যুরা। উড়োজাহাজ থেকে সব নাবিক জীবিত ও অক্ষত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।

নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: