facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০২ মে বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

কৃষকের বন্ধু "বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক" ৬৪ জেলায় চাই


১৯ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার, ১১:২১  এএম

মোঃ কামরুল হাসান

শেয়ার বিজনেস24.কম


কৃষকের বন্ধু

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ২৭ নং আদেশবলে প্রতিষ্ঠা করেন "বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক"(বিকেবি)। সেই থেকে অদ্যাবধি দেশের কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানে শকুনের কালো চোখ পড়ে ১৯৮৬ সালে। প্রাদেশিকতায় বিশ্বাসী তৎকালীন স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ ১৯৮৬ সালে ৫৮ নং কালো অধ্যাদেশ জারি করে। ওই কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের শাখাগুলো নিয়ে ১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ জন্মলাভ করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক(রাকাব)।বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক(বিকেবি) নাম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম পরিচালনা করে ৪৮ টি জেলায়।তাহলে বাকি ১৬ জেলা কি বাংলাদেশের বাইরে?অন্যদিকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক(রাকাব) নাম হলেও প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম পরিচালনা করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ টি জেলায়।প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রমে বিন্দুমাত্র ভিন্নতা নাই।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ প্রদত্ত রায় মোতাবেক ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হতে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক ফরমান দ্বারা জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহ বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই হিসেবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অস্তিত্ব সংকটে পড়ে।পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১৯ নং অধ্যাদেশ জারি করে রাকাব কে বৈধতা দান করেন।

৫৮ নং কালো অধ্যাদেশের কারনে প্রতিষ্ঠান দুটির হাজার হাজার কর্মচারীর দুর্ভোগ চরমে।রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার যেসকল নাগরিক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক(বিকেবি)এ চাকরি করেন তারা কখনো নিজের জেলা তো দূর নিজের বিভাগেও কখনো চাকরি করতে পারবেন না।অন্যদিকে বাকী ৪৮ টি জেলার যেসকল নাগরিক রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক(রাকাব)এ চাকরি করেন তারাও একই সমস্যায় জর্জরিত।চাকরীর শেষ দিকে এসে বৃদ্ধ বয়সে দুর্ভোগ আরো চরমে।যার কারনে এইসব চাকরিজীবিদের মনে একটা চাপা কষ্ট সবসময় কাজ করে।বাধ্য হয়ে অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে যায়,অনেকে চাকরি হওয়ার পরও যোগদান করে না এই সমস্যার কারণে। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠান দুটিতে ব্যাপক জনবল ঘাটতি। যার কারণে প্রতিষ্ঠান দুটির আর্থিক অবস্থা খারাপ।

আমার বাড়ী একটা সাবেক ছিটমহলের পাশে।ছিটমহলের মানুষদের দুঃখ কষ্ট বঞ্চনা নিজের চোখে দেখেছি।ঐসব ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বঞ্চনার ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে।ছিটমহল ছিল দুটি পৃথক দেশের সমস্যা।অথচ স্বাধীন এই দেশে ৩৭ বছর থেকে ছিটমহলবাসীর মত চাকরি করেছে এবং এখনো করছে হাজারো মানুষ যাদের দুঃখ দুর্দশা চরমে।বিকেবিতে কর্মরত কারও বাড়ী উত্তরবঙ্গের কোন জেলায়,পোষ্টিং বৃহত্তর কুমিল্লা বা সিলেটের কোন শাখায়।বাড়ীতে বাবা কিংবা মা কিংবা অন্যকোন নিকট আত্মীয়ের লাশ নিয়ে স্বজনেরা অপেক্ষা করতেছে।শেষ দেখা দেখার জন্য সন্তান আসতেছে কর্মস্থল থেকে।অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না।এক পর্যায়ে তাকে ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।যথাসময়ে না পৌছানোর কারনে সেই হতভাগ্য সন্তান বাবা-মায়ের লাশটা পর্যন্ত দেখতে পায় না।একই ঘটনা রাকাবে কর্মরত ৪৮ জেলার অধিবাসীদেরও আছে।

সিটমহলের মত দুটি দেশের সমস্যা যদি সমাধান করা যায় তাহলে দেশের ভিতরের এই সমস্যা সমাধান করতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।আইন-অধ্যাদেশ মানুষের কল্যানের জন্য, মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য নয়।যে অধ্যাদেশের কারনে মানুষের দুর্ভোগ হয় বুঝা যায় সেটার প্রয়োজন নেই।

সম্প্রতি সরকার আমাদের মত হাজারো কর্মচারীর কথা চিন্তা করে তথা রাষ্ট্রের কল্যানের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠান দুটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চমৎকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এজন্য সরকার তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ।

প্রতিষ্ঠান দুটিকে একিভূত করার মাধ্যমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া
প্রতিষ্ঠানকে স্বরুপে ফিরিয়ে আনলে যেসকল লাভ হবে :

☆ প্রতিষ্ঠান দুটিতে কর্মরত হাজারো কর্মচারীদের দুর্ভোগ শেষ হবে।কর্মচারীরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে যা কিনা প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রার জন্য জরুরী প্রয়োজন।

☆ প্রতিষ্ঠানের জনবল সংকট একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে আসবে যা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য জরুরী প্রয়োজন।

☆ শুধুমাত্র রাকাব,ঢাকা শাখা ব্যতীত অন্য কোন শাখা বিলুপ্ত করার প্রয়োজন হবে না।

☆ কোন কর্মচারীকে চাকরি হারানোর ভয়ে থাকতে হবে না।

☆ রাকাবকে ঘিরে থাকা রাজশাহী কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের কালো হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটি মুক্তি পাবে।

☆ আঞ্চলিক হওয়ার কারনে রাকাবে আমানতের পরিমান কম কিন্তু ঋন বেশি।ঋনের পরিমাণ আমানত হতে বেশি হওয়া সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল।একিভূত হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।

☆ কষ্ট অব ফান্ড কমে আসবে।ফলে প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত লাভজনক করা যাবে।

☆ উত্তরবঙ্গের কৃষি তথা কৃষকের অবস্থার উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে।

স্বৈরাচারের কিছু দোসর বিকেবি রাকাব একিভূতকরন বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করতেছে যা অবশ্য অবশ্যই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা।এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানকে স্বরুপে ফিরিয়ে আনার মত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতাকারীরা খুনি খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্তা বহনকারী এতে কোন সন্দেহ নাই।

বর্তমানে যেসব ব্যাংক একিভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হল বিকেবি রাকাব একিভূতকরণ।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সবিনয় অনুরোধ করব স্বাধীন বাংলাদেশে ৪৮ জেলার "বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক" চাই না। আমরা সেই মহানায়কের হাতেগড়া কৃষকের বন্ধু ৬৪ জেলার "বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক" চাই।

লেখক : মুখ্য কর্মকর্তা,বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: