facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

করোনাকালেও পিছিয়ে নেই অগ্রণী ব্যাংক : মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম


০৭ ডিসেম্বর ২০২০ সোমবার, ০৯:৩৮  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


করোনাকালেও পিছিয়ে নেই অগ্রণী ব্যাংক : মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম

এক সময়ে নানা সংকটে থাকা অগ্রণী ব্যাংক, গত চার বছর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ব্যাংক খাতের বিদ্যমান সংকটেও আমানত, বিনিয়োগ, আমদনি-রপ্তানি বাণিজ্য, মোট সম্পদ, পরিচালনা মুনাফা, নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয়, সম্পদের বিপরীতে আয়সহ প্রায় সব সূচকে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ব্যাংকটি। সম্প্রতি শেয়ারবিজনেস২৪ডট কমের সিনিয়র রিপোর্টার রমজান আলীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ব্যাংকের সাফল্য ও অগ্রগতি নিয়ে আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে সৃষ্ট সঙ্কটেও পিছিয়ে নেই আমাদের কার্যক্রম। সরকারের ঘোষিত প্রণোদার প্যাকেজের মাধ্যমে এক হাজার ২৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। সাড়ে আট কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএসএমই)। আমানত এখন বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক দেশের রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকসমূহ মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। রাষ্ট্রয়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম। কৃষি ঋণে দেশের সকল ব্যাংকের সুদের ৯ শতাংশ আর অগ্রণী ব্যাংক সেখানে ৮. ৫০ শতাংশ নিচ্ছে। যা কৃষকদের মাঝে উৎসাহ যুগিয়েছে।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকের সবগুলো সুচক দেখলেই বোঝা যাবে যে, অগ্রণী ব্যাংক কীভাবে এগোচ্ছে , রেমিট্যান্স আহরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম। ‘আমি যখন ব্যাংকে যোগদান করি, তখন খেলাপিঋণ ছিলো ২৯ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশ। তিনি বলেন, আমাদের এবারের স্লোগান হলো ‘অবিরত অগ্রযাত্রায় অগ্রণী’। এ স্লোগান নিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে অগ্রণী ব্যাংক।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের পরিকল্পনা সর্ম্পকে বলেন, ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার পাঁচ দশক পূর্ণ করব। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পথে। অগ্রণী ব্যাংক এই দুটি বছরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বড় সাফল্য অর্জন করতে চায়।’ ‘আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং কার্যকর ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় করপোরেট সুশাসন জরুরি। অগ্রণী ব্যাংক দেশের মেগা প্রকল্পগুলো ও বড় বড় পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে ফাইন্যান্স করেছে। এভাবে অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজে অগ্রণী ব্যাংক ফাইন্যান্স করছে।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের সব ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত জবাবদিহি আছে। সুশাসন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই জরুরি। আগে কিছু দুর্বল দিক ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সরকার আগামী পাঁচ বছরে অর্থনীতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চায়। বাড়াতে চায় সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এরই মধ্যে রেকর্ড অর্জন করেছে। এটি দুই অঙ্কের ঘরে নিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে এসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংক সরকারের সঙ্গে আরো কাছাকাছি থাকতে চায়। আগামী দিনে ব্যাংকটিকে এ খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চান এটি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরও বলেন, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক বেশি জোর দিচ্ছে এসএমই ও রফতানিমুখী এই দুই খাতে। এছাড়া ঋণ আদায়েও বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংক পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংক নামকরণ করছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই অগ্রণী ব্যাংক অগ্রে থাকতে হবে। আমার লক্ষ হচ্ছে একটি রেজিলেন্ট ব্যাংক হিসেবে তৈরি করা। এই ব্যাংকটি যাতে সবার উপরে থাকে সেই চেষ্টা থাকবে। যেখানে ব্যাংকে কোন ধরণের প্রফিশন ঘাটতি, খেলাপিঋণ, মূলধন ঘাটতি, লোকসানি শাখা থাকবে না।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, দেশের দারিদ্র দূর করা, কর্মসংস্থান সৃস্টি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি ও লালনের জন্য অগ্রণী ব্যাংক তার শতভাগ মালিকানায় প্রতিষ্ঠা করেছে ‘অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি লিমিটেড’। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ এবং সিলেটে কিছু অঞ্চলে অত্যন্ত সফলতার সাথে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অ-ব্যাংক আথিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোম্পানিটি সাফাল্যজনকভাবে কাজ করে চলছে এবং বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্কিংয়ে শীষ স্থান লাভ করেছে।

তিনি বলেন, দেশের শেয়ার বাজারে মূলধন সুষ্টি এবং পরিবৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রণী ব্যাংক তার নিজস্ব শতভাগ মালিকানাধীন ‘অগ্রণী ইক্যুইটি এন্ড ইনবেস্টমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড, প্রতিষ্ঠা করেছে। কোম্পানিটি সুনাম ও দক্ষতার সাথে দেশের শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, অগ্রণী ব্যাংক বিভিন্ন বছরে প্রবাসী বাংলাদেশি অভিবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণের সুবিধার জন্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা এবং অস্ট্রোলিয়ায় নিজস্ব শতভাগ মালিকানাধীন চারটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। এই রেমিট্যান্স হাউজগুলি থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স আসছে। এসব দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী অভিবাসীরা বিদেশে বসেই নিজ দেশের ব্যাংক অগ্রণীর উত্তম সেবা পেয়ে সন্তষ্ট রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের ব্যাংক সমূহের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকই প্রথম বিনা জামানতে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের জন্য একটি ঋণ প্রকল্প চালু করেছে যার নাম ‘ অগ্রণী বিদেশ যাওয়ার লোন-অইঔখ। প্রোগ্রামটি অগ্রণী ব্যাংক প্রায় একদশক ধরে চালিয়ে আসছে। এই ধারণা ভিত্তিতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গঠিত হয়ে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, অগ্রণী ব্যাংকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্নারটি আজ দেশের মানুষের কাছে তীর্থ দর্শনের একটি বিষয়। এছাড়া মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের জন্য একটি আকর্ষণয়ি ও সহজ অ্যাপস চালু করা হয় যার নাম ‘অগ্রণী রেমিট’। অভিবাসী ভাই-বোনেরা সিঙ্গাপুরস্থ অগ্রণীর কোন শাখায় না গিয়ে নিজের মোবাইলে ঘরে বসেই তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশে অবিস্থত তার বেনিফিসিয়ারির নিকট টাকা রেমিট করতে পারছেন।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংক সমুহের জন্য ক্যান্সার যা থেকে উত্তরণের সহজপথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটা প্রস্তাব দেয়া আছে। যে সকল খেলাপিরা অনিচ্ছা সত্ত্বে খেলাপি হয়ে আছেন এবং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। তাদেরকে একট ছোট আকারে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ব্যবসা করতে সুযোগ দেয়া হোক। দেশের অন্যান্য ব্যাংক যেখানে বিকাশের সাথে একমুখী চুক্তি করছে সেখানে অগ্রণী ব্যাংক বিকাশের সাথে টু-ওয়ে বা দ্বিমুখী ফান্ড ট্রান্সফার চুক্তি করেছে। অর্থাৎ অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব থেকে একজন গ্রাহক তার বিকাশ একাউন্ট টাকা প্রেরণ করতে পারবেন আবার তার বিকাশ একাউন্ট থেকেও অগ্রণী ব্যাংকের নিজ হিসেবে টাকা জমা করতে পারবেন। অগ্রণী ব্যাংকের ৯৫৮টি শাখার সাথে বিকাশ এর ২ লাখ ৪০ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে ইন বা ক্যাশ আউট করা যাবে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকে না এসে গ্রাহক ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমেই কাজটি করতে পারবে।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, প্রথম রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে অগ্রণী ব্যাংক আধুনিক ও বিশ^জনীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ফ্যাক্টরিং শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ফ্যাক্টরিং এর উপর অগ্রণী ব্যাংকে ট্রেনিং এর ব্যবস্থাও সম্পন্ন হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে ফ্যাক্টরিং চালু হলেও বাংলাদেশে এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে। ফ্যাক্টরিংকে এগিয়ে নিতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংক ৩ বছরের মধ্যে জনতা ব্যাংককে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় এবং ২০৩০ সালেল মধ্যে সোনালীকে ছাড়িয়ে দেশের বৃহত্তম ব্যাংকে রূপান্তরিত হতে পারে। অগ্রণীর স্বপ্ন-সারথী লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ২টি শর্ত দিয়েছিলেন যার একটি হলো ট্রেজারি ফাংশনকে সরকার কর্তৃক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এটা অবশ্য ইতোমধ্যেই বাস্তবে রূপলাভ করেছে। তার দ্বিতীয় শর্তটি ছিলো, এখন থেকে অগ্রণীর প্রতিটি সদস্যকে আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, অগ্রণী ব্যাংকে রয়েছে দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত উৎতর্ষতার এক চমৎকার সংমিশ্রণ। অর্থায়ন বা ঋণ সুবিধাকে নিদিৃষ্ট কিছু পণ্যে বা সেবা খাতে কেন্দ্রীভূত না করে বহুমূখীকরণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটির অর্থ- স্বাস্থ্যেও একটি সুষম উন্নতি ঘটেছে অতি সাম্প্রতিকালে। অগ্রণী ব্যাংকের অতি চলমানকালে গৃহীত উপরে বর্ণিত উপরে উদ্ভাবনী কার্যক্রমের ভিত্তিতে আমরা বলতে প্রয়াস পাব যে, অগ্রণী ব্যাংক আজ দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের উদ্ভাবনের রূপকার হয়ে উঠেছে। এর ব্যাংকিং কার্যক্রমে বহুমীকরণ ঘটেছে। একজন স্বপ্নচারী-ব্যাংকের উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে ব্যাংকটি আজ সকল প্যারামিটারে সফলতম ব্যাংক হয়ে উঠেছে। এই সাফল্য এখন কোনো একটি বছরের অর্জিত সাফল্য নয়, অনবরত প্রতিটি বছরের। এখন আমরা রোল মডেল বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারি। রোল মডেল হলো এমন আদর্শ পথ বা পদ্ধতি যা অন্যরা অনুসরণযোগ্য মনে করবেন বা অনুসরণ করলে তারা উপকৃত হবেন। অগ্রণী ব্যাংক যেহেতু আজ উদ্ভাবনের পথে হেঁটে লাভের মুখ দেখেছে, নতুন স্বপ্নের পথ খুঁজে পেয়েছে, সেবাতে সবার জন্য সেরা ব্যাংক হয়েছে, সেভাবে অন্য ব্যাংকগুলোও অগ্রণীর উদ্ভাবনী পন্থাকে অনুসরণ করে লাভবান হতে পারবে বলে প্রস্তাব করা যায়, আশা করা যায়। পলতঃ তার পূর্বসূরি হাবিব ব্যাংকের মতোই অগ্রণী ব্যাংকও আজ হয়ে উঠেছে দেশের রোল মডেল ব্যাংক।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: