facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৪ মে মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

কদর বেড়েছে টাঙ্গাইলের শাড়ির, ব্যস্ত কারিগররা


৩১ মার্চ ২০২৪ রবিবার, ১১:২২  এএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


কদর বেড়েছে টাঙ্গাইলের শাড়ির, ব্যস্ত কারিগররা

ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের উৎসবকে সামনে রেখে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে উঠার আশা করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ব্যবসায়ীরা। এ দুই উৎসব ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে জেলার তাঁতপল্লীতে। ক্রেতার চাহিদা মেটাতে দিনরাত বুননের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।এবারের ঈদ ও বৈশাখ উৎসবে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির আশা করছেন তাঁত মালিকরা।

তবে তাঁত শ্রমিকদের দাবি, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কম থাকায় মালিকরা শাড়ি উৎপাদন কমিয়েছেন। যে শ্রমিক বিগত সময়ে মাসে হ্যান্ডলুমের মাধ্যমে ১৫টি শাড়ি তৈরি করেছেন, সেখানে বর্তমানে ৭-১০টি শাড়ির কাজ করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে তাঁতের শাড়ির রাজধানী টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলের তাঁতপল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতরকে ঘিরে শেষ সময়েও তাঁতের কারিগররা শাড়ি বুনছেন। ভোর থেকে শুরু হয় তাদের এই শাড়ি তৈরির কাজ। তাঁতের খটখট শব্দে মুখর তাঁতপল্লি। পুরো এলাকায় শুধু মাকু আর শানার ঠোকাঠুকির শব্দ। খটখট শব্দে পরস্পরকে জড়িয়ে যায় লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি রাখা সুতাগুলো। তাঁতির হাত ও পায়ের ছন্দে তৈরি হয় বর্ণিল টাঙ্গাইল শাড়ি। হ্যান্ডলুমের মাধ্যমে গান গেয়ে মনের আনন্দে তাঁত বুনছেন কেউ কেউ। আবার নারীরা সুতা তৈরি করছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা শাড়ি কিনতে এসেছেন পাথরাইলে। ভিড় করছেন তাঁত পল্লিগুলোতে। ফলে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শাড়ি ব্যবসায়ী ও তাঁতিরা।

এদিকে টাঙ্গাইলের শাড়ির চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি তাঁত শ্রমিকদের মজুরি। বর্তমানে স্বল্প মজুরি দিয়ে কারিগরদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই মজুরি বাড়ানোর দাবি তাদের।

শুধু পাথরাইলেই নয়, বাজিতপুর, কৃষ্ণপুর, বেলতা, পুটিয়াজানি, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শাড়ি উৎপাদন হয়। ঈদ ও বৈশাখের বাজারের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও শাড়ি যাচ্ছে প্রচুর। এক বছরে জেলার তাঁতপল্লিগুলো থেকে ৭৪ লাখ পিস শাড়ি ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে। এতে ২৬ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। তবে এই শাড়িগুলো পাওয়ারলুমে তৈরি করা। হাইব্রিড সুতায় তৈরি পপকন শাড়ি যাচ্ছে ভারতে। দাম কম হওয়ায় চাহিদাও বেশি সেখানে।

তাঁতের কারিগর কমল রাজবংশী বলেন, এবার ঈদে কাজ খুবই কম। জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় মহাজনরা কাঁচামাল কম কিনছেন। অনেক কারিগর বসে আসেন। শাড়ি বিক্রি কম হওয়ায় কারিগরদের কাজও কম।

তাঁতের কারিগর মোবারক বলেন, গত ঈদে ২৫টা শাড়ি তৈরি করেছিলাম। কিন্তু এবার ঈদে ১৫টা করতে পেরেছি। চাহিদা না থাকায় মহাজনরাও শাড়ি তৈরি করছেন না। একটা শাড়ি বুনতে দুই দিন সময় লাগে। একটা শাড়ি তোলার পর ৭০০-৮০০ টাকা মজুরি পাই। তাহলে হিসাব করেন মাসে কয় টাকা মজুরি হয়। এতে সংসার চলে না।

তাঁতের কারিগররা বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি আগে যেভাবে বুনেছিলেন, সেভাবে এখন বুনতে পারছেন না শাড়ি তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে। একদিকে কাঁচামালের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন কম। বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে দাম তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পাথরাইল বাজারের মনি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী অপু চন্দ্র বসাক বলেন, শাড়ি বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে তাঁতের শাড়ি পরেন কম নারীরা। বিক্রি বেশি হলে তাঁতিদের ভালো হবে। ভারতের শাড়ি নারীরা বেশি পরে। তবে এবার ঈদে বেশি আশা করেছিলাম, কিন্তু তেমন হয়নি। অনেক জেলা থেকে পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা আসে শাড়ি কিনতে।

জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হওয়ার পর গত কয়েক বছরের তুলনায় ব্যবসায়ীদের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। গতমাস থেকে চলতি মাসের প্রথম দিকেই পাইকারি বিক্রি শেষ হয়েছে। এখন কিছু পাইকারির পাশাপাশি খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি করোনার পরে ঈদে যতটুকু বিক্রি হয়েছে সেটা আশানুরূপ। করোনার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। এ বছর ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি আশা করা হচ্ছে। হ্যান্ডলুম তাঁত দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন চিত্তরঞ্জন বা পাওয়ারলুমের তাঁতের যেগুলো তৈরি হচ্ছে সেইগুলোই বিক্রি করা হচ্ছে। হ্যান্ডলুমের শাড়ি যে খরচ পড়ে সেটা বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এই খাতে সরকারি সহযোগিতা থাকলে এই শিল্পটি টিকে থাকতো।

তিনি আরও বলেন, ভারতে প্রচুর শাড়ি রপ্তানি হচ্ছে। শাড়ির দাম কম হওয়ায় ভারতে চাহিদা বেশি। একটা শাড়ি রুপিতে ৪০০ টাকা পড়ে। সেটা ভারতে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: