facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ জুলাই শনিবার, ২০২৪

Walton

পুঁজিবাজারের চামড়া খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় মন্দা


১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার, ১০:০৮  এএম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


পুঁজিবাজারের চামড়া খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় মন্দা

কোভিড-১৯-এর প্রার্দুভাব শুরুর বছর থেকে ব্যবসায়িকভাবে নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হচ্ছে চামড়া খাতের কোম্পানিগুলোর। এরপর টানা কয়েক বছর ধরেই ব্যবসা কমছে। সর্বশেষ চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথমার্ধেও (জুলাই-ডিসেম্বর) ভালো করতে পারেনি অধিকাংশ কোম্পানি। বড় কোম্পানিগুলোর বিক্রি কমার পাশাপাশি মুনাফায় বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ছোটগুলোর আয় কিছুটা বাড়লেও বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির চাপে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারছে না। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের কোম্পানিগুলোর চলতি হিসাব বছরের জুলাই পরবর্তী আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের পুঁজিবাজারে চামড়া খাতের ছয়টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। সেগুলো হলো এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, ট্যানারি লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড ও সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড। এর মধ্যে বাটা সুর হিসাব বছর গণনা করা হয় জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে। কোম্পানিটি এখনো চলতি ২০২৩ হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। এছাড়া জুলাই-জুন সময়ে হিসাব বছর গণনা করা সমতা লেদার কমপ্লেক্স চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের কোন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে তথা জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এপেক্স ফুটওয়্যারের বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৬৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮০১ কোটি ৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কাম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় কমেছে ১৩৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর শতকরা হিসেবে আয় কমেছে ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৩১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। টাকার অংকে কমেছে ২ কোটি ১৩ লাখ।

আর চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৩১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৭৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

মুনাফা কমার কারণ হিসেবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আলোচ্য সময়ে তাদের পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নজনিত কারণেও তাদের বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বিতরণসংক্রন্ত ব্যয়ও এ সময়ে বেড়েছে। মোটকথা বিভিন্ন ধরনের ব্যয় নিয়ন্ত্রন করতে না পারায় কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা আলোচ্য সময়ে কমেছে।

চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে এপেক্স ট্যানারির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৩৭ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। আয় বাড়লেও বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির চাপে কোম্পানিটি বড় লোকসান করেছে আলোচ্য সময়ে। এ সময়ে কর পরবর্তী নিট মুনাফা লোকসান হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট লোকসান বেড়েছে ৩৬ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে যা বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ২১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ আয় হয়েছিল ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়ে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে লোকসান হয়েছিল ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানি বাটা সুর সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১৮৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ আয় হয়েছিল ২১৬ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে বড় মূলধনী এ কোম্পানিটির আয় কমেছে ২৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে কমেছে ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে স্বস্তির বিষয় হলো আয় কমার পাশাপাশি আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট লোকসানও কমে এসেছে। এ সময়ে নিট লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে লোকসান হয়েছেল ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান কমেছে ৭২ দশমিক ৪২ শতাংশ। টাকার অংকে লোকসান কমেছে ৪ কোটি ২৬ লাখ।

বাটা সু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আলোচ্য হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় তুলনামূলক অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদেশি মূদ্রার বিনিময় হার জনিত লাভ ভালো ছিল। এসব কারণে মূলত আয় কমা সত্বে লোকসানও কমে এসেছে কোম্পানির।

তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের আরেক কোম্পানি ফরচুন সুজের চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৯৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির আয় বেড়েছে ২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। আয় বড় অংকে বাড়লেও নিট মুনাফায় তেমন প্রবৃদ্ধি হয়নি কোম্পানিটির। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে মাত্র ৬ লাখ টাকা। যা শতকরা হিসেবে বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফরচুন সুজের আয় হয়েছে ৭১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। আলোচ্য প্রান্তিকে কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১ কোটি ৭ লাখ টাকা।

তালিকায় থাকা চামড়া খাতের সর্বশেষ কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৮ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৯ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে কোম্পানির আয় কমেছে ১ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৫৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ লোকসান হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানি লোকসান বেড়েছে ৫১ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে লোকসান বেড়েছে ১০৩ শতাংশ।

চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৪ লাখ টাকা। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১২ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে লোকসান হয়েছিল ২২ লাখ টাকা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: