facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

‘স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা তবুও বিদায় নেন জঙ্গি মেজবাহ’


১৬ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার, ১১:০৮  এএম


‘স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা তবুও বিদায় নেন জঙ্গি মেজবাহ’

রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় জঙ্গি দমন অভিযানে নিহত তিন তরুণের মধ্যে মেজবাহ উদ্দিন দিন বিশেক আগে ফোন করে মা ও স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মেজবাহর পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান বলেন, “স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা জানানো হলেও সে গুরুত্ব দেয়নি। বলেছে, আল্লাহর রাস্তায় চলে যাচ্ছে, জান্নাতে দেখা হবে।”

গত ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে ছয় তলা রুবি ভিলার পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ব্যাপক গোলাগুলির পর সকালে একটি ঘরে তিন তরুণের লাশ এবং কিছু অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাওয়া যায়।

জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে ওই তিন তরুণের মধ্যে কেবল মেজবাহর পরিচয়ই র‌্যাব জানতে পেরেছে।

মেজবাহর বাবার নাম এনামুল হক, মা তাহমিনা আক্তার। র‌্যাবের কাছ থেকে খবর পেয়ে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার বাদুয়ারা গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে তারা সোমবার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।

লেফটেনেন্ট কর্নেল এমরানুল বলেন, মেজবার বাবা তার বাড়ির কাছের একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। আগে তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।

এনামুল হকের চার ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে মেজবাহ চতুর্থ। তবে ছেলেদের মধ্যে তিনিই বড় ছিলেন। স্থানীয় মনোহরগঞ্জের আলী নকিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর ২০০৭ সালে তিনি ঢাকায় এসে সায়েদাবাদে একটি মোটর গ্যারেজে কাজ নেন।

পরে সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে তিনি নিজেই ‘মেজবাহ টায়ার শপ’ নামে একটি মোটর গ্যারেজ চালু করেন বলে তার বাবা র‌্যাবকে জানিয়েছেন।

মেজবাহ আগে ওই গ্যারেজের কাছেই একটি মেসে থাকতেন জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা এমরানুল বলেন, “তার বাবা আমাদের বলেছেন, ঢাকায় আসার আগে কুমিল্লায় মেজবাহর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা দেয়। সে সময় স্থানীয় মসজিদের ইমামের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়েছিল। ইমামের পেছনে নামাজ পড়া বন্ধ করে সে নিজেই নামাজ পড়ত।”

গতবছর ৭ নভেম্বর তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে সায়েদাবাদের ওই মেস থেকে বেরিয়ে যান মেজবাহ। ১০ নভেম্বরের পর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

লেফটেনেন্ট কর্নেল এমরানুল বলেন, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে মা ও স্ত্রীকে ফোন করে ‘ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেন’ মেজবাহ। তার নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

এরপর সায়েদাবাদের ওই মেসের লোকজন খবর দিলে মেজবাহর বাবা ও ভাই গত ৩ জানুয়ারি ঢাকায় এসে ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যান।

রুবি ভিলার কেয়ারটেকার রুবেলএর আগে র‌্যাবকে বলেছিলেন, জাহিদ নামের এক যুবক গত ২৮ ডিসেম্বর এসে ওই বাড়ির পাঁচ তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিতে চায়। জাহিদ তাকে বলেছিলেন, তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দুই ভাইকে নিয়ে তিনি ওই বাসায় থাকবেন।

এরপর ৪ জানুয়ারি ‘জাহিদ’ পরিচয় দেওয়া সেই যুবক বাসায় ওঠেন। বাকি দুজন ওঠেন ৮ জানুয়ারি। এর চার দিনের মাথায় র‌্যাব সেখানে অভিযান চালায়।

অভিযান শেষে ওই ঘর থেকে দুটি পিস্তল, তিনটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), তিনটি সুইসাইড ভেস্ট, ১৪টি ডেটোনেটর, চারটি পাওয়ার জেলের পাশাশি দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করে র‌্যাব।

দুটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি একই রকম হলেও একটিতে নামের জায়গায় লেখা ছিল জাহিদ, অন্যটিতে সজীব। এ কারণে র‌্যাবের ধারণা হয়, দুটি এনআইডিই হয়ত জাল। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়েই মেজবাহর পরিচয় জানতে পারেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

লেফটেনেন্ট কর্নেল এমরানুল বলেন, “বাকি দুজনের পরিচয় আমরা এখনও জানতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: