২৮ জানুয়ারি ২০১৮ রবিবার, ১০:২৫ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২৯ জানুয়ারি সোমবার দুপুর আড়াইটায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য (জানুয়ারি-জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগানে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া নতুন মুদ্রানীতি বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬.২০ শতাংশ। নভেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯.০৬ শতাংশ।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। আগের বছরের নভেম্বরে ঋণের স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।
অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে আগামী জুনে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬.৩০ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
এ ছাড়া ঊর্ধ্বমুখী ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আমানত ও অগ্রিমের অনুপাত (এডিআর) কমানো হতে পারে বলে গত ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বলা হয়। তবে ঋণ বিতরণের সীমা না কমানোর দাবি জানান ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারা।
এদিকে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৪ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার প্রাক্কলন করা হয়। বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ না নিয়ে উল্টো ১২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকেই বেশি ঋণ আসছে সরকারের। অর্থবছরের ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রসহ সব ধরনের জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে ঋণ এসেছে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের পুরো লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি অর্থবছরে দুবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে থাকে। একটি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে ঘোষণা করা হয়।
সম্প্রতি মুদ্রানীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো স্বচ্ছ ও বহির্মুখী হতে বলে গেলেন ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর ড. চক্রবর্তী রঙ্গরাজন। সম্প্রতি এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য যেমন মূল্য স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতির মধ্যে মূল্যস্থিতিশীলতার লক্ষ্যটি বেশি জোরালো হতে হবে। মূল্যস্ফীতির টার্গেটিং এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।