facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

প্রকৃত অর্থনীতি যখন নাজুক হয় তখন কেন শেয়ারবাজারের সূচক বাড়ে?


২২ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার, ০৪:০৪  এএম

কেনেথ রগফ

শেয়ার বিজনেস24.কম


প্রকৃত অর্থনীতি যখন নাজুক হয় তখন কেন শেয়ারবাজারের সূচক বাড়ে?

প্রকৃত অর্থনীতি যখন নাজুক, তখন কেন শেয়ারবাজারের সূচক বাড়ছে কিংবা এর মূল্যমান ঊর্ধ্বমুখী? এক্ষেত্রে একটি বিষয় পরিষ্কার যে চলমান সংকট ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নিম্ন আয়ের সেবাকর্মীদের অসমানুপাতিক হারে বেশি ক্ষতির মুখে ফেলেছে। তারা প্রকৃত অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক বটে, কিন্তু শেয়ারবাজারের জন্য ততটা নয়। সত্য যে আজকের পুঁজিবাজারের সূচক ঊর্ধ্বমুখিতার অন্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আছে, প্রতিটিরই অবশ্য নিজস্ব সীমাবদ্ধতাও বিদ্যমান।

উদাহরণস্বরূপ, পুঁজিবাজারগুলো সম্মুখদর্শী হওয়ায় বতর্মান শেয়ারদর কার্যকর কভিড-১৯ টিকার উন্নয়ন এবং মৌলিকভাবে উন্নত পরীক্ষা ও চিকিৎসা অপশনের উন্নয়ন সম্পর্কে আশাবাদের প্রতিফলন ঘটাতে পারে, যা লকডাউনের একটি অধিক সীমিত ও ঝামেলাহীন অ্যাপ্রোচের সুযোগ প্রদান করে। দৃশ্যপটটি যৌক্তিক হতে পারে কিংবা এমনও হতে পারে যে পুঁজিবাজারগুলো আসন্ন শীতে ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা অবমূল্যায়ন করছে। একই সঙ্গে প্রথম প্রজন্মের টিকার কার্যকারিতা ও প্রভাব সম্পর্কে অতিমূল্যায়ন করছে।

আজকের শেয়ারবাজার নৈপুণ্যের একটি দ্বিতীয় ও অধিক বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা হলো, সুদহার প্রায় শূন্যের দিকে ঠেলে দেয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রবণতা। বাজারগুলো যদি আশ্বস্ত হয় যে নিকটভবিষ্যতে সুদহার বাড়ার সম্ভাবনা কম, তাহলে আবাসন, শিল্প, স্বর্ণ ও বিটকয়েনের মতো দীর্ঘস্থায়ী সম্পদগুলোর দাম বাড়বে। আবার আয়প্রবাহ ভবিষ্যতের দিকে ঝোঁকার কারণে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো নিম্ন সুদহার থেকে অসমানুপাতিক হারে উপকৃত হয়েছে।

তবে আবারো এটি পরিষ্কার নয় যে বাজারগুলো নিম্ন সুদহারের অন্তহীন ধারাবাহিকতা অনুমানে সঠিক পথে আছে কিনা। সর্বোপরি, বৈশ্বিক চাহিদা চাঙ্গা হওয়ার পরও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকূল সরবরাহ প্রভাব প্রলম্বিত হতে পারে, বিশেষ করে বি-বিশ্বায়নের কারণে।

অতিনিম্ন সুদহার ছাড়াও তৃতীয় আরেকটি ব্যাখ্যা হলো যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সরাসরিভাবে প্রাইভেট বন্ড বাজারগুলোয় পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়েছে, যা ইউএস ফেডারেল রিজার্ভে নজিরবিহীন হস্তক্ষেপেরই প্রতিফলন ঘটায়। এ প্রাইভেট বন্ড কেনাকে গতানুগতিক দিক থেকে মুদ্রানীতি হিসেবে মনে করা উচিত হবে না। জরুরি অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোষাগারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার সুবাদে সেগুলোকে বরং অর্ধ-আর্থিক নীতির (কোয়াসি-ফিসক্যাল পলিসি) মতো মনে হয়।

এমন অবস্থায় বিশেষ হস্তক্ষেপ সম্ভবত ক্ষণস্থায়ী হবে, এমনকি যদিও বাজারে ওই বিষয়টি সম্পর্কে বার্তা পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখনো সফল হয়নি। ঊর্ধ্বমুখী সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্বায়িতা ও করপোরেট ঋণ সরবরাহের বৃদ্ধি সত্ত্বেও সরকারি ঋণে সুদহার আসলে অনেক বাজারে সংকুচিত হয়েছে এবং মন্দার ব্যাপকতা বিবেচনায় নিলেও আজ পর্যন্ত প্রধান করপোরেট দেউলিয়াত্বের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম।

কিছু ক্ষেত্রে বাজারগুলো এ ধারণা ভাঙবে যে করদাতারা অনির্দিষ্টভাবে সবকিছু পুষিয়ে দেবে। আসলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ঝুঁকি নেয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে বাঁধা। কিন্তু তারা মনে করে যে তাদের ঝুঁকি নেয়ার এখনো কিছুটা তৃষ্ণা আছে, যদি এই শীতে একটি ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ আসেও।

প্রকৃত অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ার বিপরীতে শেয়ারমূল্য কেন বাড়ছে, এ-সম্পর্কিত তিনটি ব্যাখ্যা কিছু অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করলেও তারা ধাঁধার একটি বড় বিষয় মিস করে। আর তা হলো কভিড-১৯ সৃষ্ট অর্থনৈতিক যন্ত্রণা পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলো দ্বারা বাহিত হচ্ছে না। এটি ড্রাই ক্লিনার থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, বিনোদনসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা ও ব্যক্তিসেবা জোগানদাতাদের দ্বারা বাহিত হচ্ছে; যেহেতু তারা পুঁজিবাজারে (যেটি উৎপাদন খাতের দিকে অধিক ঝুঁকে আছে) তালিকাভুক্ত নয়। বড় কথা, এসব ক্ষুদ্র অংশজীনের এই বিপুলতার অভিঘাত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় মূলধনের সংস্থানও থাকে না। এদিকে তাদের কাজকর্ম বাঁচিয়ে রাখার সরকারি কর্মসূচিগুলোও নিঃশেষিত হওয়ার পথে। ফলে দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরো বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসার ব্যর্থতাকে মহামারী সৃষ্ট বৃহত্তর অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখতে হবে। তবে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলোর বাজার অবস্থান আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী অবস্থায় রেখে অন্যভাবে টেকসই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোও ব্যর্থ হবে। প্রকৃতপক্ষে, বাজারের রমরমা অবস্থার এটিও একটি কারণ (সত্য যে কিছু বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়াত্ব থেকে সুরক্ষার জন্য আবেদন করেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই অবশ্য মহামারীর আগে থেকে সমস্যাক্লিষ্ট ছিল)।

এদিকে মন্দার ব্যাপকতা ও যুদ্ধোত্তর রেকর্ড বেকারত্ব মাত্রার বাস্তবতা আমলে নিলে বলা যায়, সরকারের কর রাজস্ব প্রত্যাশার চেয়ে কম কমেছে। এর কারণ অবশ্য কাজ হারানো জনগোষ্ঠী মূলত নিম্ন-আয় ব্যক্তিদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত, যারা কম কর দিয়ে থাকে।

তবে আজকের ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজারগুলো কেবল অর্থনৈতিক নয়, নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংকটেরও মুখোমুখি। বিশেষ করে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ইউএস প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের কারণে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর নীতিগুলো ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যা মনে হয় মেইন স্ট্রিটের বিপরীতে ওয়াল স্ট্রিটের অনুকূলে গেছে। এ সময় ওয়াল স্ট্রিট আবারো তোপের মুখে পড়বে। একই সঙ্গে জনতুষ্টবাদী ক্রোধও সিলিকন ভ্যালির দিকে ধাবিত হবে।

এর একটি সম্ভাব্য ফলাফল—বিশেষ করে বি-বিশ্বায়নের চলমান প্রক্রিয়া যদি করপোরেশনগুলোকে তাদের কার্যক্রম নিম্নকর আরোপকারী দেশগুলোয় স্থানান্তর কঠিন করে তোলে—হবে করপোরেট করহারে নিম্নমুখী প্রবণতার পরিবর্তন। সেটি শেয়ারমূল্যের জন্য ভালো হবে বটে, কিন্তু এটিও ভাবা ভুল হবে যে জনতুষ্টবাদী প্রতিক্রিয়া সেখানেই থামবে।

স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উভয় সুফলে ব্যাপক মাত্রার পুনরুদ্ধার দ্বারা শেয়ারবাজারের বড় উল্লম্ফন না হলে বিনিয়োগকারীরা তাদের মহামারীকালীন বেশি মুনাফা নিয়ে অতটা স্বস্তি পাবেন না। কাজেই এখন যে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীনতা দেখা যাচ্ছে, তার দ্রুত অবনমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

[স্বত্ব:

প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

কেনেথ রগফ: আইএমএফের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও পাবলিক পলিসির অধ্যাপক

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ার বিজনেস কী? -এর সর্বশেষ