facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

দুই বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংক


০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার, ১০:৫৪  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


দুই বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংক

২০১৬ সালের জুন থেকে গেল জুন পর্যন্ত এ দুই বছরে দেশের ব্যাংকগুলো এক লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। আর এ সময়ে ব্যাংকগুলো দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এ সময়ে আমানতের চেয়ে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেখা গেছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সুদভিত্তিক সাধারণ ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারে। আর ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা পর্যন্ত। তবে দেখা গিয়েছে, অনেক ব্যাংক আমানতের চেয়ে অনেক বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। অবশ্য এক বছরে যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে একই বছরে একই পরিমাণ ঋণ বিতরণ করলেও এটা বলা যাবেনা যে নিয়ম ভঙ্গ করে ঋণ দিয়েছে। কারণ, ওই ব্যাংকের আগে থেকেই আমানত থাকতে পারে। আবার বিতরণ হওয়া ঋণও ফেরত আসতে পারে। মূলত, ঋণ ও আমানতের অনুপাত হিসাব করা হয় ওই ব্যাংকের মোট আমানত ও মোট ঋণের উপর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৈনন্দিন কার্যপরিচালনাসহ ব্যাংক পরিচালনা এবং সর্বপরি গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ব্যাংক তার মোট আমানতের পুরোটাই ঋণ হিসাবে বিতরণ করতে পারে না। তবে তারা বলছেন, কিছু ব্যাংক তাদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে বেশি ঋণ বিতরণ করে ফেলে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম কানুন মানেনা ওইসব ব্যাংক। এ সংক্রান্ত নিয়ম মানার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরও বিভিন্ন সময় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সভায় আগ্রাসী বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, গত একবছরে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকে আমানত এসেছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ছয় হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের দেখা গেছে, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত এক বছরে ব্যাংকগুলো করেছে ৯০ হাজার ৪২২ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত কেবল শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এই ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯৯ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। আবার এই বছরের জুন পর্যন্ত ইসলামি ধারার এসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এই ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ঋণের সুদহার বাড়ায় ব্যাংকগুলো। এরপর ধারাবাহিকভাবে ঋণের সুদহার বাড়াতে থাকে ব্যাংকগুলো। এরপর ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কট হয়। এতে ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেড়ে যায়। পরে বিএবির পক্ষ থেকে এ বিষয়টি সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তুলে ধরা হয়। সুদের হার কমাতে ব্যাংকিং খাতের তারল্য সঙ্কট (নগদ টাকার সঙ্কট) উত্তরণ করে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে চার ধরণের সুবিধা নেয় বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা। গত জুলাই থেকে ব্যাংকগুলোতে সিঙ্গেল ডিজিটে সুদহার নেমেছে বলে দাবি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির। তবে এ দাবি সঠিক হলে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ আরো বাড়বে। অর্থাত্ উদ্যোক্তা ও শিল্পপতিরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন বেশি। তবে আমানতে সুদের হার কমে যাওয়ায় আমানত রাখতে আগ্রহী হবেন না গ্রাহকরা। অবশ্য ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট দূর করার জন্যও বিভিন্ন উপায় বাতলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: