facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

গুলশান হামলার মারজান, জাপানি হত‌্যার সাদ্দাম নিহত


০৬ জানুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার, ০৫:২৯  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


গুলশান হামলার মারজান, জাপানি হত‌্যার সাদ্দাম নিহত

গুলশান হামলার ‘অন‌্যতম হোতা’ নব‌্য জেএমবির নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এবং উত্তরবঙ্গে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিসহ বেশ কয়েকটি হত‌্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সাদ্দাম হোসেন ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, নিহতদের একজন মারজান, যাকে গুলশান হামলার পর থেকে পুলিশ খুঁজছিল। আর সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ছিলেন উত্তরাঞ্চলে জেএমবির অন‌্যতম সংগঠক। রংপুরে কুনিও হোশিসহ পাঁচটি হত‌্যা ও হত‌্যাচেষ্টা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি তিনি।

গতবছর জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত‌্যার ঘটনার পর তদন্তের মধ‌্যে মারজানের নাম আসে।

১২ অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে মারজানকে ওই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে মনিরুল বলেন, নব‌্য জেএমবির অন‌্যতম শীর্ষ এই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেই হলি আর্টিজানের ভেতর থেকে রক্তাক্ত লাশের ছবি বাইরে পাঠিয়েছিল।

পুলিশ যাকে নব‌্য জেএমবির মূল নেতা এবং সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডের হোতা বলে আসছিল, সেই কানাডীয় পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম চৌধুরীসহ তিনজন গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন।

এরপর ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের আরেক জঙ্গি আস্তানা থেকে তিন জঙ্গির স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়; তাদের মধ‌্যে মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তিও ছিলেন বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

এর মধ‌্যে পাবনায় মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ কমিশনার মহিবুল ইসলাম জানান, গোপন তথ‌্যের ভিত্তিতে তাদের ইউনিট রাতে বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসায়।

“রাত ৩টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তারা সেখানে আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা গ্রেনেড ছোড়ে এবং গুলি করে। পরে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে দুইজন আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।”

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, রাত ৩টা ৪০ মিনিটে মোহাম্মদপুর থানার গাড়িতে করে একজন পুলিশ সদস‌্য গুলিবিদ্ধ দুইজনের লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

“একজনের বয়স আনুমানিক ২৮, আরেকজনের ৩২ বছরের মত। তাদের মাথা ও বুকে গুলি লেগেছে।”

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের গাড়িতে করে লাশ নেওয়া হলেও অভিযানের বিষয়ে তেমন কোনো তথ‌্য দিতে পারেননি ওসি।

জামালউদ্দিন মীর বলেন, “আমি পুরোপুরি অবগত নই। পরে জানাতে পারব।”

পাবনার হেমায়েতপুরের আফুরিয়া গ্রামের হোসিয়ারি শ্রমিক নিজাম উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন।

এরপর পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গতবছর আগস্টে পুলিশ গুলশান হামলার সন্দেহভাজন হিসেবে মারজানের নাম ও ছবি প্রকাশের পর তার বাবা ওই ছবি তার ছেলে নুরুল ইসলামের বলে শনাক্ত করেন। সে সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ছেলের বিয়ের খবর পেলেও আট মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ‌্য অনুযায়ী, আরবি বিভাগের ছাত্র মারজান ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রাখেন। এরপর আর ভর্তি হননি তিনি।

এরপর ২০১৫ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে পুলিশি তল্লাশিতে উদ্ধার কয়েকটি ল্যাপটপ ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নথিপত্র পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, মারজান ছিলেন ওই সংগঠনের একজন সাথী।   

গুলশনা হামলার পর সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ‌্যে গতবছর ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযানে গেলে সেখানে নব‌্য জেএমবির নেতা তানভীর কাদেরী আত্মহত‌্যা করেন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তানভীরের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, গুলশান হামলায় জড়িত নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি এবং জেএমবি নেতা বাসারুজ্জামান চকলেটের স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিনকে পুলিশ আহত অবস্থায় আটক করে ওই অভিযানে।

ওই তিন নারী মরিচের গুঁড়া ও ছোরা নিয়ে হামলা চালিয়েছিলেন বলে সেদিন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। তিনজনের মধ‌্যে একজন পুলিশের গুলিতে আহত হন, বাকি দুজন ছুরি দিয়ে আত্মহত‌্যার চেষ্টা করেন বলে জানায় পুলিশ।

ঢাকার পূর্ব আশকোনার এক জঙ্গি আস্তানায় গত ২৪ ডিসেম্বর অভিযানের পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল বলেন, নব‌্য জেএমবির যে কয়জন নারী সদস‌্য এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন বা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা সবাই স্বামীর চাপে বা সামাজিক কারণে ওই পথে গেছেন বলে ধারণা পেয়েছে পুলিশ।

মনিরুল বলেন, পুলিশের হাতে আটক প্রিয়তি তার স্বামী মারজানকে ‘অত্যন্ত স্বৈরাচারী’ মেজাজের লোক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

“নিজের সব ইচ্ছা তিনি স্ত্রীর উপর চাপিয়ে দিতেন। প্রিয়তি তার মামার বাড়িতে বড় হয়েছে। লেখাপড়াও তেমন জানা নেই, চাকরি নেই। তাকে দেখার মতো কেউ ছিল না। জঙ্গি মতাদর্শে না গেলে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যাবে- এমন ভয় কাজ করত।”

মনিরুল বলেন, “ওই নারী বলেছেন, তিনি মন থেকে কখনোই জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাস করেন না। এই মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে যারা মানুষের ক্ষতি করে তাদের আদর্শকে তারা কোনদিন সমর্থন করেন না। তারপরও স্বামীর চাপে বাধ্য হয়ে তারা জঙ্গিদের সঙ্গে ছিলেন।”

পুলিশের তথ‌্য অনুযায়ী, সাদ্দাম হোসেনের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চর বিদ্যানন্দ এলাকার তাজু আলম ওরফে আলম জলার ছেলে। বিভিন্ন সময়ে তিনি চঞ্চল, রাহুল, সবুজ ও রবি নাম নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জেএমবির জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন।

২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সি জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জুলাই মাসে পুলিশ আদালতে যে অভিযোগপত্র দেয়, তাতে সাদ্দামের নাম আসে।

পরে রংপুরের কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম রহমত আলী হত‌্যা; পঞ্চগড়ের মঠ অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যা, কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে হত‌্যা এবং বাহাই নেতা রুহুল আমীনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযোগপত্রেও সাদ্দামকে আসামি করা হয়।

এছাড়া গাইবান্ধার চিকিৎসক দীপ্তি, জঙ্গি সদস‌্য ফজলে রাব্বি, ব‌্যবসায়ী তরুণ দত্ত হত্যা এবং নীলফামারীতে মাজারের খাদেম ও দিনাজপুরে এক চিকিৎসককে হত‌্যাচেষ্টা মামলাতেও আসামির তালিকায় তার নাম রয়েছে বলে কাউন্টার টোরোরিজম পুলিশের ভাষ‌্য।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: