facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

এসএমই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ অধিকাংশ ব্যাংক


২২ জানুয়ারি ২০১৭ রবিবার, ০৮:০৪  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


এসএমই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ অধিকাংশ ব্যাংক

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) খাতে বিতরণ করেছে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ। এ পরিমাণ ব্যাংকটির মোট ঋণ পোর্টফোলিওর মাত্র ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকটির এসএমই খাতে ঋণের স্থিতি হওয়ার কথা মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ২০ শতাংশের বেশি।

সোনালী ব্যাংকই শুধু নয়, এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে অধিকাংশ তফসিলি ব্যাংকই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বিদেশী ব্যাংকগুলো। তবে বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংকের এসএমই ঋণ বিতরণ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত এসএমই ঋণ তাদের মোট ঋণ পোর্টফোলিওর গড়ে ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাতে বিতরণ করেছে তাদের মোট ঋণ পোর্টফোলিওর গড়ে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। একই সময়ে বিদেশী ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে বিতরণ করেছে মোট ঋণ পোর্টফোলিওর মাত্র ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ২০ শতাংশের বেশি ঋণ এসএমই খাতে বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি জারিকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে পাঁচ বছরের মধ্যে এসএমই খাতে ঋণ ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিকাংশ ব্যাংকই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পেছনে রয়েছে। তবে প্রতি বছরের শুরুতে এসএমই ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে বার্ষিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। আশা করছি, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াবে।

প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ‘এসএমই অর্থায়ন বিষয়ে মাস্টার সার্কুলার’ জারি করে 8বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারটির ২ (২) বিধিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক ঋণ পোর্টফোলিওতে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ ও ঋণ স্থিতির কাঙ্ক্ষিত হার হচ্ছে অন্যূন ২০ শতাংশ। পাঁচ বছরের মধ্যে এ হার অন্যূন ২৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। গত বছর এ সার্কুলারে সংশোধনী এনে পরবর্তী পাঁচ বছরে এসএমই খাতে ঋণ মোট পোর্টফোলিওর ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে বলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণকৃত এসএমই ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বিতরণকৃত এ ঋণ ব্যাংকটির মোট ঋণ পোর্টফোলিওর সাড়ে ১১ শতাংশ। একই সময়ে এসএমই খাতে জনতা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণ ৯ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। আর রূপালী ব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসএমই খাতে বিতরণ করেছে মোট ঋণ পোর্টফোলিওর প্রায় আড়াই শতাংশ।

এসএমই ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংক। মোট ঋণ পোর্টফোলিওর মাত্র ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।

ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ ও নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে। যশোর জেলায় নকশিকাঁথা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্তদের মধ্যে আমরা ঋণ বিতরণ করেছি। তবে এটি সত্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে এসএমইতে ২০ শতাংশ ঋণ আমাদের নেই। চলতি বছর আমরা এসএমই খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।

এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকও। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরভিত্তিক হিসাবে, এসএমই খাতে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এ ঋণ ব্যাংকটির মোট ঋণ পোর্টফোলিওর মাত্র ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এসএমই ঋণ বিতরণে পিছিয়ে থাকা অন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে পূবালী ব্যাংক এ খাতে বিতরণ করেছে মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ৫ দশমিক ৪৪, এনসিসি ৬ দশমিক ২৫, যমুনা ৮ দশমিক ৯৬, ব্যাংক এশিয়া ৮ দশমিক ৩১, স্ট্যান্ডার্ড ৮ দশমিক ৬৬, প্রাইম ৯ দশমিক ৪৯, ওয়ান ১০ দশমিক ৪৮, ঢাকা ১১ দশমিক ৭৮, ইস্টার্ন ১২ দশমিক ৫৪, দ্য সিটি ১২ দশমিক ৭০, মার্কেন্টাইল ১৫ দশমিক ১৮ ও ন্যাশনাল ব্যাংক ১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে এসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ইউনিয়ন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউনিয়ন ব্যাংক এ খাতে বিতরণ করেছে মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ১ শতাংশেরও কম। মোট ঋণ পোর্টফোলিওর মাত্র ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণ করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটিব্যাংক এনএ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসএমই খাতে বিতরণ করেছে ১ শতাংশেরও কম ঋণ। এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে পিছিয়ে আছে এইচএসবিসিও। মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ১ শতাংশেরও কম ঋণ এসএমই খাতে বিতরণ করেছে বিদেশী এ ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংক আলফালাহ মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ২ দশমিক ৬৮, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৩ দশমিক ৩৬, হাবিব ব্যাংক ৫ দশমিক ৪৪ ও ব্যাংক অব সিলন ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণ করেছে।

তবে এসএমই ঋণ বিতরণে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। মোট ঋণ পোর্টফোলিওর প্রায় ৫১ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি এসএমই খাতে বিতরণ করেছে ২৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: