facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৩ মে শুক্রবার, ২০২৪

Walton

২ বছরে কপারটেকের ৫০৫% আয় বৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ! সতর্কতা


৩১ মার্চ ২০১৯ রবিবার, ০৭:৩২  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


২ বছরে কপারটেকের ৫০৫% আয় বৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ! সতর্কতা

সম্প্রিত আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) অনুমোদন পাওয়া এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত তামার পাইপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দুই বছরের ব্যবধানে ৫০৫ শতাংশ আয় বৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন চার বছর আগে লোকসান গুনা একটি কোম্পানি হঠাৎ করে পণ্য বিক্রি করে এরকম আকাশচুম্বী আয় করবে তা সন্দেহজনক।

আরএন ট্রেডিং হাউজের মাসুদুর রহমান বলেন, কোম্পানিটির দুই বছরের ব্যবধানে ৫০৫ শতাংশ পণ্য বিক্রি থেকে আয় দেখানো সন্দেহজনক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত ওই দুই বছরের পণ্য বিক্রির কাগজপত্রগুলো যাচাই করা। তাহলেই বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য। কোম্পনিটি আইপিও অনুমোদনের জন্যই এরকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।

৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে কপারটেকের ঋণই রয়েছে ২৯ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা ঋণ পরিশোধ করবে। তারপর এ ধরনের কোম্পানি কোন লভ্যাংশ দিতে পারবে না। শেষে কোম্পানি বন্ধ করে পালাবে তারা। আর নিঃশ্ব হবেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে বাজার বিশেষজ্ঞরা প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক চিত্র নিয়ে সন্দেহ করে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছেন।

ডিবিএ সভাপতি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবারই দেখেশুনে বিনিয়োগ করা উচিত। আমি শুনেছি কপারটেকের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তাদের অনেক হিসাবই সন্দেহজনক।

অনেক বিনিয়োগকারী কোম্পানির আইপিও বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এখনই যদি কোম্পানিটিকে আটকে দেওয়া না হয় তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেবে বিএসইসি।

পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ প্ল্যান্ট ও যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপন, ভবন নির্মাণ, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও খাতে ব্যয় করবে। ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১ টাকা ৩ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ১২ টাকা ৬ পয়সা। ভারিত গড় হারে ইপিএস দাঁড়ায় ৮৭ পয়সা।

এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড।

কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত দুই বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি থেকে আয় ছিল ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৭ সালে পণ্য বিক্রি থেকে আয়ে চমক দেখা দেখা যায়। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত কোম্পানির আয় এক লাফে ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এ হিসাবে এক বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় বাড়ে ২৮৪ শতাংশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির রেভিনিউ আসে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ। এ হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে কপারটেকের পণ্য বিক্রি থেকে আয় বেড়েছে ৫০৫ শতাংশ।

কপারটেকের পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা, যা আইপিও পরবর্তী সময়ে ৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১০ কোটি টাকা। আর গত বছরের ৬ জুন পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে এ কোম্পানির পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ হচ্ছে ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর সিলেটের হবিগঞ্জে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ২০১৪ সালের জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় এ কোম্পানি। কোম্পানিটি মূলত এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত তামার পাইপ উৎপাদন করে থাকে।

এছাড়া তার, বাস বার, স্ট্রিপ ইত্যাদি তামাপণ্য উৎপাদন করে থাকে। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা হচ্ছেন- আব্বাসি আদম আলী ও রশিদা আব্বাস। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে, যা আইপিও পরবর্তী সময়ে ৩০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে নেমে আসবে। অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে উচ্চ দরে শেয়ার বিক্রি করে নিজেরা বিপুল অংকের মুনাফা করবে কোম্পানির পরিচালকরা। আর নিঃশ্ব হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: