০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার, ১১:০৩ এএম
নওগাঁর আত্রাই উপজেলা সদর থেকে পশ্চিমে প্রায় চার কিলোমিটারের পথ। এরপর উত্তরের দিকে দৃষ্টি ফেরালেই চোখে পড়ে রসুলপুর গ্রামের বিশাল মাঠ ও বিল। সেখানে দিনের বেলা পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁস সাঁতার কাটে, ইতস্তত ঘুরে বেড়ায় কিংবা ডুব দিয়ে খাবার তুলে আনে। এগুলো পোষা হাঁস। বিভিন্ন খামারের। অনেকে এখানে এসে গড়ে তুলেছেন এসব খামার। তাঁদের একজন হলেন শহিদুল ইসলাম। তাঁর খামারে রয়েছে ৬০০টি হাঁস। হাঁসগুলো তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে, ঘুচিয়েছে বেকারত্ব। সংসারে এনেছে সচ্ছলতা।
শহিদুল ইসলামের (৫০) বাড়ি বিলের অদূরে উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত।
শহিদুল বলেন, তাঁর ছিল অভাবের সংসার। নিত্য দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাস। টুকটাক কৃষিকাজ করতেন। তবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা তাঁর ছিল। ছিল দারিদ্র্য জয়ের স্বপ্ন। অর্থের অভাবে সেই স্বপ্ন ছুঁতে পারছিলেন না। তিন বছর আগের একদিন। উপজেলার মাধাইমুড়ি এলাকায় মুক্ত জলাশয়ে বিলের মাঝে হাঁস পালনের দৃশ্য তাঁর চোখে পড়ে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁসগুলো দেখেন। আর মনে মনে ভাবেন, এমন একটা খামার তিনিও তো করতে পারেন। এটিই হতে পারে তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার। অনুপ্রাণিত বোধ করে বাড়ি ফিরে আসেন। এর কয়েক দিন পর স্থানীয় আহসানগঞ্জ হাটে যান। সেখান থেকে ৫০টি হাঁস কিনে আনেন। শুরু হয় হাঁসের লালন-পালন। দিনভর হাঁসগুলো চোখে চোখে রাখেন। একসময় নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন হাঁসের হ্যাচারি। সেখানে এখন তিনি তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করেন। একটু বড় হলে বিক্রি করেন।
‘হাঁস আমাকে নতুন জীবন দান করেছে।’ বলেন শহিদুল। তিনি বলেন, বিলে বা নদীর তীরে হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন একটা খরচের প্রয়োজন পড়ে না। অল্প খরচে লাভও হয় দ্বিগুণ। খামারে একটি হাঁসের জন্য যে পরিমাণ খরচ হয়, খোলা বিলে তা অর্ধেকেরও কম। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ বিভিন্ন খাবার সহজেই পায়। ফলে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। হাঁস রাখার জন্য কোনো ঘর বানাতে হয় না। বাঁধের ওপর পলিথিন দিয়ে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা বানানো যায়। খোলা বিলে একটি হাঁসের জন্য মাসে খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। চার থেকে পাঁচ মাস পর হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস বছরে ২৫০ থেকে ২৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। তিনি নিজের হ্যাচারিতে বাচ্চা উৎপাদন করেন। এ কারণে হাঁস পালনের খরচ অন্যদের তুলনায় অনেক কম। বর্ষা মৌসুমে তাঁর ছয় মাস কাটে বিলের বাঁধে। বাকি সময় থাকেন হ্যাচারি নিয়ে। হাঁসের ডিম দেওয়া একেবারে কমে যায়, তখন হাঁস বিক্রি করে দেন। এতে বছরে তাঁর লাভ হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
নিজের পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছেন শহিদুল। তাঁর হাঁস পালনের সাফল্য দেখে পাশের আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামের অনেক বেকার যুবক বিলের বাঁধে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। ঘোষপাড়া গ্রামের হাঁস পালনকারী মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বনির্ভর হওয়া যায়। একই গ্রামের শাহাদ আলী ও মজিদ খামারু বলেন, ‘আমরা বর্তমানে হাঁস পালন করে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক সুখে আছি। হাঁস আমাদের অভাব দূর করেছে। সংসারে এনে দিয়েছে সুখ ও সমৃদ্ধি।’
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।