শরীয়তপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, দেড় লাখ টাকায় দফারফা!

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার বাজারে অবস্থিত আধুনিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রুজিনা বেগম (৩৪) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আর সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রসূতির স্বজনদের সাথে দেড় লাখ টাকায় দফারফা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

৭ মে শনিবার দিবাগত রাতে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ৮ মে রবিবার দুপুরে সালিশ মিমাংসা করেন স্থানীয়রা।

রুজিনা বেগম নড়িয়া উপজেলার ঘরিসার ইউনিয়নের সুরেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলমের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, দেড় লাখ টাকায় দফারফার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই গৃহবধূর লাশ দাফন করা হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে স্থানীয়দের মাধ্যমে সালিশ ডেকে গৃহবধূর পরিবারের সঙ্গে বিষয়টির মিমাংসা করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসক সামসুজোহা পলাতক রয়েছেন।

গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে সিজারিয়ান করার জন্য ওই হাসপাতালে রুজিনা বেগমকে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন রাতেই তাকে সিজারিয়ানের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে থাকা চিকিৎসক ডাঃ মোঃ সামসুজোহা অপারেশনের আগে অচেতন করার জন্য রুজিনাকে ইনজেকশন দেন। এতে রুজিনা চিৎকার শুরু করেন এবং তার স্বজনরা রোগীর কাছে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাঁধা দেন। পরে অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর প্রেসার কমে গেছে অজুহাতে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চালাকি বুঝতে পেরে রুজিনার স্বামী শাহ আলম সহ স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে বাঁধা দেন। এতে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ সময় হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এরপর স্থানীয়রা জড়ো হলে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি জানা জানি হয়। এ অবস্থায় হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। এই সুযোগে পেছনের দরজা দিয়ে চিকিৎসক ও হাসপাতালের লোকজন পালিয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক সালিসদার বলেছেন, রবিবার দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে সালিস বৈঠক হয়। গৃহবধূর স্বামী এবং বাবা গরিব মানুষ। এজন্য তারা মামলা করতে রাজি হননি। তাই গৃহবধূর শিশু সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দুই লাখ টাকায় বিষয়টি মীমাংসা করেছেন সালিসদাররা।

মৃত রুজিনা বেগমের স্বামী শাহ আলমের কাছে টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,থানায় বসে চেয়ারম্যানের সাথে সালিস হয়েছে। তিনি বিকালে বাড়ী এসে দেড় লাখ টাকা দিয়ে যাবে।

নড়িয়া থানার ওসি অবনি শংকর চন্দ্র কর বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে আমি নিজেই গিয়েছিলাম। তবে গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে আধুনিক হাসপাতালের চেয়ারম্যান আব্দুর রব খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা বিনিময়ে তাদের সাথে জামেলার মিটমাট করা হয়েছে ।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।