facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

শরীয়তপুরে অযোগ্য এনজিওকে অনুমোদনের অভিযোগ


২৬ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার, ০২:১৬  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


শরীয়তপুরে অযোগ্য এনজিওকে অনুমোদনের অভিযোগ

শরীয়তপুরে ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক ডিজি তপন কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে অযোগ্য এনজিওকে (সার্প) কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম।

এদিকে অনুমোদিত এনজিও সার্পের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলছেন, নিয়ম মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে বর্তমান ডিজি বলছেন, আমি যোগদানের আগে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়নের অধীনে, আউট অব স্কুল চিলড্রেন তথা ঝড়েপড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সেই লক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে ৬১ টি সংস্থার চুক্তিবদ্ধ হয়। সেই চুক্তিতে শরীয়তপুরে সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন ফর রুরাল পোভার্টি (সার্প) নামের একটি এজিও চুক্তিবদ্ধে হন। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই ওই এনজিও সার্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র।

এনজিও নির্ধারণের বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত শর্তে বলা হয়েছে যে, কোনো প্রকল্প অনুমোদন পেতে হলে ১০ বছরের উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু সার্পের সে ধরনের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই।

বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত আরেক শর্তে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা, সততা, ন্যায়পরায়নতা ও তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৩ বছরের পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট থাকতে হবে। কিন্তু সার্পের সে ধরনের কোন অডিট রিপোর্ট বাস্তবে নেই।

বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত শর্তে আরো বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ পলিসি, জেন্টার পলিসি, শিশু সুরক্ষার নীতিমালা, ক্রয় ও হিসাব ব্যবস্থাপনা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সার্পের সেই ধরনের কোন কাগজপত্র ছিল না। সার্পের মূল হিসেবে ন্যূনতম ২৫ লাখ টাকা স্থিতি থাকার কথা থাকলেও তা হিসাবে সেই পরিমান টাকা ছিল না।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সুবিধাসহ প্রস্তাবিত ৫ টি উপজেলাতে নিজস্ব অফিস থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তাদের কোন অফিস ছিল না। অন্য প্রতিষ্ঠানে সার্পের সাইন বোর্ড লাগিয়ে নিজের অফিস হিসেবে প্রদর্শন করেছেন।

পেশাগত দক্ষতা, একাধিক স্টাফ থাকার বিধান থাকলেও শরীয়তপুরে অবস্থিত অপর একটি এনজিও নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির (নুসা) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেনকে তাদের স্থায়ী কর্মকর্তা হিসাবে দেখানো হয়েছে। প্রজেক্ট প্রফাইলে যে সকল কর্মকতা ও কর্মচারীদেরকে দেখানো হয়েছে, তা বাস্তবে কখনোই ছিল না।

অভিজ্ঞাতার ক্ষেত্রে শরীয়তপুর জেলায় ২৫ জন যৌনকর্মীর কন্যা শিশুকে আশ্রয়সহ শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করেছে। যা আদৌ সত্য নয়।

পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে মাদারীপুর জেলার শিবচর ও গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানার বিভিন্ন এলাকার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে শরীয়তপুর সদর ছাড়া অন্য কোথাও কোন অফিস ছিল না।

অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, প্রকল্প পেতে সার্প যেসব কাগজপত্র উপাস্থাপন করেছেন তা সবটাই ভুয়া। ডিজি সাহেব এসব ভুয়া কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই বাছাই না করে সার্পকে অনুমোদন দিয়েছেন। এই অনভিজ্ঞ এনজিওকে অনুমোদন দেওয়ায় কোটি কোটি টাকা লোপাট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কীভাবে ডিজি সাহেব সার্পেও মতো একটা অনভিজ্ঞ এনজিওকে অনুমোদন দিলেন, তা নিয়ে সুশীলসমাজের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন অফ রুরাল পোভার্টির (সার্প) নানা রকম অনিয়মের তদন্ত করার জন্য শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার সুজন চৌধুরী নামক একজন ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন ।

এ ব্যপারে নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির (নুসা) উপ-পরিচালক মোঃ কবীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নুসাতে কর্মরত আছি। আমাকে যে সার্পের প্রোগ্রাম প্রধান হিসাবে দেখানো হয়েছে, সেটি অন্যায় ও অবৈধ। আমি কখনোই সার্পের প্রোগ্রাম প্রধান ছিলাম না।

সোসাল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সোডেপ) নির্বাহী পরিচালক এম শামীম খন্দকার বলেন , শরীয়তপুরে ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন রুরাল পোর্ভাটি (সার্প) যে মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট, জাল, জালিয়াতির তথ্য দিয়ে কাজ পেয়েছে, সে কাজ বাতিল করে তাকে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। তা না হলে এনজিওর প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে।

সার্পের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাসেমকে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি কীভাবে প্রকল্প পেয়েছি, তা আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন, ডিজি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন।

শরীয়তপুর জেলার উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবীর সরদার বলেন, সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার জন্য ৮ হতে ১৪ বছর বয়সী স্কুল ড্রপ আউট ও নিরক্ষর কিশোর কিশোরীদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হবে। সে লক্ষে শরীয়তপুর জেলার ৬ টি উপজেলায় সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন রুরাল পোর্ভাটিকে (সার্প) নির্বাচিত করেছে ডিজি অফিস। সেখানে আমার কোন হাত নেই। যারা এ কাজের টেন্ডার দিয়েছেন, তারা যাচাই বাছাই করেই কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর তৎকালীন মহা পরিচালক (ডিজি) তপন কুমার ঘোষ বলেন, সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন রুরাল পোর্ভাটিকে (সার্প) নীতিমালা মেনে, কাগজপত্র পর্যালোচনা করেই বে-সরকারি সংস্থাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: