১৬ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার, ০৮:৫২ এএম
ডেস্ক রিপোর্ট
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লড়াই করে গেছেন আজীবন। যে পাকিস্তানের কারাগারের মধ্যে তার জন্য কবর খোড়া হয়েছিল, সে পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছেন বীরের বেশে। অজস্র অশ্রু জলে ফুলের মালায় বাঙালি ও বাংলার মানুষের কাছে তিনি ফিরেছেন নিরাপদে। কিন্তু স্বপ্নের স্বাধীন নিরাপদ নরম পলি মাটির দেশের মানুষ এত নিষ্ঠুরভাবে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যা করবে তা কেউ ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি।
যে মানুষের জন্য তিনি ৫৪ বছরের জীবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন, যে মানুষের জন্য তিনি বুক ফুলিয়ে পাকিস্তানের কারাগারের মধ্যে ফাঁসির মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে ফাঁসি দাও দুঃখ নাই, শুধু আমার লাশটা বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও’। যে বাঙালির রক্ত শেখ মুজিবের প্রতিটি শিরায়-উপশিরায় প্রবাহিত, সেই বাঙালি শেখ মুজিবের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারে এ কথা কল্পানাও করেননি বঙ্গবন্ধু।
বাঙালির এই মহান নেতা প্রায় সময়ই তার ভাষণে বলতেন, ‘রিক্ত আমি, সিক্ত আমি দেবার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’ সত্যিই তিনি বাঙালিকে ভালবেসে গেছেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি বাঙালিকে বিশ্বাস করে গেছেন। গোয়ান্দা তথ্য মুজিবকে সর্তক করলেও তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনোই ভাবেননি। বাঙালিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মন্তব্য, ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশি ভালবাসি।’
১৯৬৯ সালে তাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করার পর তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে বলেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, তোমরা যারা রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছ, যদি কোনদিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাব।’ তিনি একা রক্ত দেননি- ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে রক্ত দিয়ে বাঙালী জাতির রক্তের ঋণ তিনি শোধ করে গেছেন। (ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধু- তোফায়েল আহমেদ; বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সংখ্যা)
একজন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাঙালির রক্তের ঋণ মুছে দিয়ে গেছেন আরো ১৬ জন (নিহতের সংখ্যা কারাগারের রোজনামচা, ৪র্থ মুদ্রণ, পৃ. ২৮১ এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ৩য় মুদ্রণ, পৃ. ৩০২ থেকে নেওয়া)। সিঁড়িতে গড়িয়ে যাওয়া রক্তে আর শিশু রাসেলের ‘আমি মায়ের কাছে যাব’ ক্রন্দন ধ্বনিতে বাঙালির সারা জনমের দুঃখগাঁথা কেঁদে ফিরে যাবে যুগে যুগে।
বুলেটের আঘাতে লুটিয়ে পড়া নিথর দেহ মাটিতে পচে-গলে যাবে, মিশে যাবে চিরতরে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি মুছে দেওয়ার সাধ্য আছে কার? মুজিবের রক্ত ধানমন্ডি ৩২ এর সেই বাড়ির সিড়িতে থেমে নেই। জয় বাংলা ধ্বনি তুলে তা মিশে গেছে পদ্মা-মেঘনায়। আর তাইতো কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখে গেছেন-
‘যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান।
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা
রক্ত গঙ্গা বহমান।
নাই নাই ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।’
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।