facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

যেভাবে বাংলাদেশ হতে পারে সুখী রাষ্ট্র


০৩ অক্টোবর ২০২২ সোমবার, ০৮:১৯  পিএম

মো. মিনহাজুর রহমান

শেয়ার বিজনেস24.কম


যেভাবে বাংলাদেশ হতে পারে সুখী রাষ্ট্র

‘তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ’ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখে আজ বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্ববাসীও গর্ব করে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ বেড়েছে। তবুও অনেক ক্ষেত্র এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ধনী গরীবের বৈষম্য বেড়েছে। কোটিপতির সংখ্যা যেমন বেড়েছে একইভাবে বেড়েছে গরীবের সংখ্যাও। আমরা চাই আধুনিক, রুচিশীল, কল্যাণময়,উচ্চ শিক্ষিত, ধনী, এবং সুখী একটি রাষ্ট্র। তার জন্য প্রয়োজন

বাসস্থান:

আমাদের দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৮০% এবং গার্মেন্টস ও শহরের নিম্নবিত্ত মানুষেরা সেমি পাকা, ঝুপড়ি ঘর বা কুঁড়ে ঘরে বাস করতেছে।গ্রামীণ বাড়িতে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সহ্য করতে পারে না। অধিকন্তু,দারিদ্র্য প্রবণ গ্রামীণ মানুষ তাদের ঘর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সামর্থ্য রাখে না এবং তারা শিগগিরই জীর্ণ হয়ে যায়। এছাড়াও নদীভাঙন এবং অগ্নিকাণ্ডের কারণে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এই ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা বেশিরভাগই সরকারি জমি,বন্ধক রাখা জমি এবং ভাড়া বাসভবনে তাদের বাড়ি নির্মাণ শুরু করে। আবার নিম্ন শ্রেণীর চাকুরীজীবীরা ডরমেটরিতে বা ফ্লাট বাড়ী ভাড়া করে গাদাগাদি করে বসবাস করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ কৃষি জমিতে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করতেছে। আমারা যদি বহুতল ভবন বিশিষ্ট ফ্লাট বাড়ীর দিকে যেতে পারি তাহলে কৃষি জমির উপর চাপ কমে আসবে। এতে একদিকে যেমন কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে ফ্লাট বাড়ীতে আমরা ভালভাবে জীবন যাপন করতে পারব। এখানে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত দের জন্য বাড়ী নির্মাণে কম অথবা বিনা সুদে লোন এবং গরিবদের জন্য সরকারিভাবে ২ রুমের ফ্লাট নির্মাণ করে দেওয়া যেতে পারে।এ ক্ষেত্রে প্রতি বছর বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা দিয়েই সারা দেশের সব গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে ১০ থেকে ১১ বছরের মধ্যে ফ্লাট বাড়িতে নিয়ে আসা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে এ বছর সিলেট অঞ্চলে যে বন্যা হয়েছে তার ক্ষতির পরিমাণ ৮৬,৮১২ কোটি টাকা(The Financial Express, July 25, 2022) যা দিয়ে কমপক্ষে ৪ লক্ষ ( প্রতিটির মুল্য ২০ লক্ষ টাকাধরে) ফ্লাট নির্মাণ করা সম্ভব এবং যেখানে অন্তত ১৬ লক্ষ গরীব মানুষকে সুন্দরভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করা যাবে। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা শূনের কোঠাই নেমে আসবে। অন্যদিকে উচ্চবিত্ত এবং ধনীদের জন্য বিলাসবহুল ফ্লাট ও বাংলোবাড়ী নির্মাণে ভুমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে সর্বচ্চ ১ শতাংশ হারে কর আরোপ করা যেতে পারে। তবে শর্ত থাকতে পারে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে হবে।বায়ুদূষণ কমতে ফ্লাট ও বাংলোবাড়ী নির্মাণে আমরা পোড়ানো ইটের পরিবর্তে জার্মান প্রযুক্তির কংক্রিটের ইট ব্যবহার করতে পারি। এতে একদিকে মাটির অপব্যবহার কমবে অন্যদিকে বিভিন্ন ফসলে বায়ুদূষণের কারনে সৃষ্ট মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ সমূহব্যপকভাবে হ্রাস পাবে ।

যোগাযোগ :

Wikipedia থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮৬৮টি, নিউজিল্যান্ডে ৮৯৭টি, কানাডাতে ৭৩০টি গাড়ী রয়েছে সেখানে আমাদের দেশে আছে মাত্র ২৭টি। আমাদের পরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়া খুব একটা লাগে নাই, তবে যেটুকু লেগেছে তা আবার গরীব মানুষের নাগালের বাইরে। আমরা কি পারি না কম খরচে ধনী গরীব সবার জন্য এসি গণপরিবহন চালু করতে। অন্যদিকে কর মুক্ত গাড়ী কেনার ব্যবস্থা করতে যার ফলে অনেক নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরাও যাতে বাক্তিগত গাড়ী কিনতে পারবে। ফলে গণপরিবহনের উপর চাপ কমে আসবে। 1500cc গাড়ীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা কর আরোপ করলে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য কর পরিশোধ করতে কষ্ট হবে না। কর কমানো হলে কেউ আর ফাঁকি দিতে চাইবে না। কর কমানোর প্রধান উদ্দেশ্য হবে মানুষকে সৎ পথে নিয়ে আসা। এক্ষেত্রে ভূমিকর আমাদের উদাহরণ হতে পারে। সরকার কি পারে না গরীব এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য কর মুক্ত গাড়ী কেনার ব্যবস্থা করে ব্যক্তিগত গাড়ীর স্বপ্ন পূরণ করতেযেমনটি সুযোগ রয়েছে মাননীয় সংসদ সদস্যদের জন্য ?

পানি সমস্যা:

একসময় বাংলাদেশকে বলা হতো মিঠা পানির আধার। অথচ সেই বাংলাদেশে আজ খাবার পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। এর প্রধান কারন সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা না থাকা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনকে দিন নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা করে পানি ব্যবস্থাপনা করা গেলে এক দিকে যেমন সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবারহ করা সম্ভবঅন্যদিকে ভূপৃষ্ঠ থেকেই কৃষিক্ষেত্রের পানির চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা সম্ভব। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে কম খরচে কিভাবে সমুদ্রের পানিকে ব্যবহারযোগ্য পানিতে রূপান্তর করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করা। এক্ষেত্রে অভিকর্ষ তরণ তত্ত্ব ব্যবহার করে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি থেকে খাবার লবন এবং ব্যবহারযোগ্য পানির পৃথকীকরণ করা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় লবন উৎপাদনে ২৫ থেকে ৫০ পয়সা খরচ হতে পারে তবে তা শূন্যের কোঠাই নিয়ে আসা সম্ভব। যে পানি পাওয়া যাবে তা শুধুমাত্র কার্বন ফিল্টার করেই পান করা যাবে এবং কৃষিক্ষেত্রে প্রতীকী মূল্য হিসেবে বিঘা প্রতি বছরে মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করা যেতে পারে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে আসবে এবং আমাদের আর কখনই পানির জন্য ভারতের আর কোন চুক্তি করার প্রয়োজন হবে না।এই প্রক্রিয়ায় কিছু পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব যা শিল্পক্ষেত্রেইউনিট প্রতি ১টাকা দরে সরবরাহ করা যেতে পারে। অন্যদিকে যে লবণ পাওয়া যাবে তা দিয়ে বিশ্বের ৮০% লবণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব এবং তা আমরা Free of cost বিভিন্ন দেশে সরবারহ করতে পারি। শুধু মাত্র শর্ত হিসেবে থাকতে পারে আমাদের দেশীয় জাহাজ ব্যবহার করতে হবে। ফলে আমাদের জাহাজ শিল্পে আরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিলোত্তমা নগরীর স্বপ্ন :

আমরা ঢাকাকে যে তিলোত্তমা নগরীর স্বপ্ন দেখি তা থেকে অনেক দুরে চলে যাচ্ছি। যেখানে ৬ মাসের মধ্যেই যানজট মুক্ত, দুর্গন্ধমুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব সেখানে আজ বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, যানজট আমাদের জনজীবনকে দিনকে দিন নাকাল করে দিচ্ছে । অন্যদিকে ভূমিকম্পের ঝুকিতো রয়েছে। প্রথমআলোপত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় বলা হয়েছে যে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরে আগুনে পুড়ে ৮ থেকে ৯ লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারে। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তা থেকে উদ্ধার কাজের সক্ষমতা এখন থেকেই বাড়ানো দরকার। এখন থেকেই আমরা যদি উদ্ধার সক্ষমতা বাড়াতে না পারি তাহলে আফসোস করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না। এই ঢাকা শহরকে নিয়ে আমরা কল্পনার জগতে যেতে পারি। ধরুন যানজট মুক্ত, দুর্গন্ধমুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগরী হয়ে গেছে। যেদিকে যাবেন সেইদিকেই ফুলের সুগন্ধ ছড়াবে। গাড়ী নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন আর দূরে দেখতে পাবেন আকাশে রংবেরঙের মাছ উড়ছে। সামনে বৃষ্টি হচ্ছে তারপর কিছুদূর গেলে মনে হবে পানির মধ্যে ডুবে যাচ্ছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে নান্দনিকতার ছোঁয়া। তরুণরাতো স্বপ্ন দেখতেই পারে ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার বেগে রেসিং করার।

শিক্ষা এবং গবেষণা :

আমাদের দেশে শিক্ষার হার সংখ্যাগত ভাবে বেড়েছে কিন্তু গুনগত ভাবে বাড়েনি। ফলে কর্মজীবনে দক্ষ হতে পারছে না। অন্যদিকে বিশাল একটা শ্রেণি পারিবারিক বা অন্য কোন কারনে পড়াশুনা ছেড়ে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক, গাড়ীচালক অথবা অন্য কোন কষ্টকর পেশাই যুক্ত হতে হচ্ছে। সময় যা গেছে তা তো গেছেই, তাই বলে কি নতুন করে সবকিছু শুরু করা যায় না। অবশ্যয় যায়। পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে যে মানুষগুলো কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে তাদেরকে কাজের পাশাপাশি অন্তত ১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনার ব্যবস্থা করা। অন্যদিকে নিয়মিত ছাত্র ছাত্রীদেরকে পড়াশুনার পাশাপাশি অন্তত গাড়ী চালনা শিখানো দরকার। ফলে একদিন না একদিন এদেশে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। আমরা সবসময় অন্য দেশের নকশা, প্রযুক্তি, এবং গবেষণাকে গ্রহণ করতে পছন্দ করি।বিদেশী গবেষক, প্রযুক্তিবিদ, স্থপতিরা তাদের দেশের সমস্যা পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প শেষ করার পর দেখা যায় যে সেখানে ত্রুটি রয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে আমরাবলতে পারি মগবাজার ফ্লাইওভার, ভাংগা ইন্টার সেকশনের কথা। যেখানেকাজশেষকরারপরদেখাযায়যেত্রুটি রয়ে গেছে। এখানে আমাদের দেশের নকশাবিধরা স্বাধীনভাবেনকশা প্রনয়ন করত তাহলে দেশপ্রেমের কারনে ভুল হওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে যেত। আগামী দশবছর পরে বিশ্বে কোন ধরনের নতুন প্রযুক্তি আসতে পারে তা নিয়ে আমরা নিজেরাই এখন থেকে গবেষণা শুরু করি তাহলে আমরা অবশ্যই নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারব। ফলে দশবছরের মধ্যে আমরা আধুনিক বিশ্বের কাতারে পোঁছে যাব। তাই সরকারী এবং বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণায় বিশাল বিনিয়োগ করা দরকার।

পরিশেষে বলবো, আমরা কখনই মিসকিনের জাতি ছিলাম না, হয়েছি শুধুমাত্র কিছু মানুষের কর্ম ফলের কারণে। তবে পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। কোন মানুষই আজ দুর্নীতিকে পছন্দ করেনা। বয়স্করা সৎ এবং শিক্ষিত হতে চাচ্ছে। ফলে তরুণরা আজ আমাদের প্রিয়দেশ বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারে যেখানে প্রত্যেক মানুষ উন্নত পরিবেশে বসবাস করবে, উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে, আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা থাকবে, ভেজালমুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খাবে, বিশুদ্ধ পানি পান করবে, দেশ হবে বন্যামুক্ত, থাকবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সবাই হবে উচ্চশিক্ষিত। আর কাউকে ক্ষুধার জ্বালায়, দেনার দায়ে অথবা সমাজের কিছু নিকৃষ্ট মানুষের জন্য আত্মহত্যা করতে হবে না।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

বিশেষ প্রতিবেদন -এর সর্বশেষ