facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি চান মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব হোসেন মোল্লা


২৫ জানুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার, ০৪:৪৭  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি চান মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব হোসেন মোল্লা

‘স্বীকৃতি পেলে মরেও শান্তি পাব। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মিলছে না স্বীকৃতি’। এভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শরীয়তপুরের মাহবুব হোসেন মোল্লা ।

দেশকে পরাধীনতার গ্লানিমুক্ত করতেই জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে মাতৃভূমি স্বাধীনতার লাল সূর্য পেলেও ভাগ্যযুদ্ধে আজ তিনি পরাজিত। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি এই মুক্তিযোদ্ধার।

তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের সুজাবাদ গ্রামের মৃত আলী আশ্রাব মোল্লা ও মৃত মেহেরুন নেছার ছেলে। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে কয়েকবছর ঘুরে বেরিয়ে আজ তিনি ক্লান্ত। ক্ষোভ, দুঃখ- কষ্টে তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। বর্তমানে তিনি খুবই মানবেতর জীবন পার করছেন।

মাহবুব হোসেন মোল্লা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ নড়িয়ার পন্ডিতসার হাই স্কুল মাঠে বাশের লাঠি দিয়ে ছাত্র-জনতা ট্রেনিং চালু করেন তিনি। ট্রেনিং পরিচালনা করেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হক (সাবেক এমপি)। সে সময় তিনি স্কুলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা মোঃ সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ইউনিয়নের ছাত্র-জনতা ৩০ জন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘর ক্যাম্পে যান। ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন আঞ্চলিক অধিনায়ক কর্ণেল শওকত আলী (সাবেক ক্যাপ্টেন)। ট্রেনিং শেষে সেপ্টেম্বরের দিকে নড়িয়ার চাকধ বাজার কাছে আবদুল লতিফ সরদার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অবস্থান নেন তারা। তখন প্লাটুন কমান্ডার সাবেদালী মিয়ার (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত মেজর) সাথে বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মাহবুব হোসেন মোল্লা। কমান্ডার ও প্লাটুন কমান্ডারের নির্দেশে নড়িয়া, পালং, ভেদরগঞ্জ, গোসাইহাট এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব।

তিনি আরো জানান, দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মাদারীপুর মিলিশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র সমর্পণ করেন। পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদপত্র আঞ্চলিক অধিনায়ক কর্ণেল শওকত আলী আনুষ্ঠানিক ভাবে তার হাতে প্রদান করেন। এছাড়া, জামুকার দেয়া ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তাকে ‘ক তালিকাভুক্ত’ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুজাবাদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৮ নং ক্রমিকে অর্šÍভূক্ত করে। আবার, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে ‘ক তালিকা’ ৩ সদস্য বিশিষ্ট বাছাই কমিটি তাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা গেজেট অর্šÍভূক্ত করেন। ফের ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারী ৩ সদস্য কমিটি যাঁচাই বাছাই করে মাহবুবকে ‘ক তালিকাভূক্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে পাঠান। তাতেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম যায়নি। সর্বশেষ, ২০২১ সালের পহেলা ডিসেম্বর পুন: যাঁচাই বাছাই করে ৩ সদস্য কমিটি “ক তালিকা” অর্ন্তভুক্ত মাহবুব হোসেন মোল্লাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করে জামুকাতে গেজেট প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছেন।

কয়েক দফা প্রতিবেদন দেয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তার নাম আসেনি। আদৌ আসবে কিনা, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন কিনা তাও জানেন না রণাঙ্গণের এই বীর সেনানী।

শেষ হইয়াও হইল না শেষ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত তালিকা নিয়ে এ যেন ইঁদুর-বিড়ালের খেলা চলছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: