facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

ব্রোকারেজ হাউজে পরিদর্শন বাড়ানোর তাগিদ


২১ জুন ২০২১ সোমবার, ০২:২৮  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


ব্রোকারেজ হাউজে পরিদর্শন বাড়ানোর তাগিদ

দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ বানকো সিকিউরিটিজের ‘সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট’ থেকে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে গত বছর অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদ উল্লাহ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউজে ফের বড় ধরনের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলো।

এ ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিকে শেয়ারবাজারের বড় দুর্বলতা বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে পুরো শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত।

ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে ব্রোকারেজ হাউজ থেকে এমন অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটতো না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তাই এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম বাড়ানো এবং তা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছেন বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।

তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ বলছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিএসইসি ও ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ৪২টি ব্রোকারেজ হাউজের ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণীতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য পায় বিএসইসি। ওই ৪২টি ব্রোকারেজ হাউজের তালিকায় ছিল বানকো সিকিউরিরিটিজ ও ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয় ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে। কিন্তু ২০২০ সালের ২৪ জুন ‘সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট’ থেকে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাজধানীর পুরানা পল্টনে প্রধান কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদ উল্লাহ। আর ওই ঘটনার এক বছর পর এখন বানকো সিকিউরিটিজ প্রায় একই উপায়ে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, ধারাবাহিকভাবে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে এ ধরনের দুর্নীতি করার সুযোগ কম থাকে। আর বানকো সিকিউরিটিজের কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্টে যে ঘাটতি রয়েছে, তা অনেক আগেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) জানতো। এ অর্থ সমন্বয়ের জন্য ব্রোকারেজ হাউজটিকে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে বানকো সিকিউরিটিজ ডিএসইর উদাসীনতায় সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

অভিযোগ উঠেছে, বিনিয়োগকারীদেরকে দেওয়া ব্রোকারেজ হাউজটির অধিকাংশই চেক ডিজঅনার হতো। টাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের দিনের পর দিন হাউজে বসিয়ে রাখা হতো। কিন্তু হাউজ কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা দিতো না। এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য বিনিয়োগকারীরা টাকা দিলেও, তা সঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা দিত না বানকো সিকিউরিটিজ। যেসব বিনিয়োগকারী হাউজে নিয়মিত আসতেন না বা খোঁজখবর কম রাখতের তাদের না জানিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিতো হাউজটি। ফলে সময় মতো ব্রোকারেজ হাউজটির এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ডিএসই জোরালো পদক্ষেপ নিলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

গত কয়েকদিনে বানকো সিকিউরিটিজে সরেজমিন দেখা গেছে, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বানকো সিকিউরিটিজে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। তবে ব্রোকারেজ হাউজটিতে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রতিদিনই সর্বশেষ পরিস্থিতির খবর জানতে হাউজটিতে ভিড় করেন বিনিয়োগকারীরা।

এ প্রসঙ্গে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউজটি যে অর্থ সংকটে রয়েছে, এ বিষয়টি ডিএসই আগে থেকেই তো জানতো। কিন্তু এর পরেও কেন পদক্ষে নেওয়া হয়নি। তাই ধারাবাহিকভাবে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। এটা না হলে হাউজগুলো দুর্নীতির সুযোগ পায়। আর সময়মতো ডিএসই অ্যাকশনে গেলে আজ এমন অবস্থা হতো না। এখন শতশত বিনিয়োগকারী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তারা এখন কি করবে তাও বুঝতে পারছেন না। এ বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মাসিকভিত্তিক রিপোর্টিংকে অরো জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে সারপ্রাইস ভিজিট করা জরুরি। কারণ এ ধরনের ঘটনা একদিন ঘটে না। তাই সারপ্রাইস ভিজিট ও মনিটরিং অব্যাহত রাখলে এ ঘটনা ঘটবে না। আর বিনিয়োগকারীদেরও এখানে দায়িত্ব রয়েছে। তারা যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করবে, সে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ও সুনাম রয়েছে কি-না তা যাচাই করা জরুরি।’

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের অনেক বিনিয়োগকারী এখনও তাদের টাকা ফেরত পাননি। ইতোপূর্বে ওই অর্থ আত্মসাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনও বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা রয়েছে। তবে এবার বানকো সিকিউরিটিজের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মনে শঙ্কা নতুন করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে পুরো শেয়ারবাজারে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। নাহলে গত এক বছরে নতুন কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীদের যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা অচিরেই অনাস্থায় পরিণত হবে। তাই ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা উচিত।

বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বিএসইসি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।’

প্রসঙ্গত, বানকো সিকিউরিটিজ থেকে বিনিয়োগকারীদের ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকা অর্থ ও শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযুক্তরা হলেন, বানকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত, পরিচালক মো. শফিউল আজম, ওয়ালিউল হাসান চৌধুরী, নুরুল ঈশাণ সাদাত, এ. মুনিম চৌধুরী, জামিল আহমেদ চৌধুরী ও বাশার আহমেদ।

গত ১৪ মে রাতে অভিযোগটি রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করে ডিএসই। মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকালে মতিঝিল থানা অভিযোগটি দুদকে পাঠানো হয়েছে। ডিএসই প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৪০৬ ও ৪০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছে। অভিযোগটি থানায় দায়ের করা হলেও এর সব কার্যক্রম খতিয়ে দেখবে দুদক।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ারবাজার -এর সর্বশেষ