facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

বিশেষ ছাড় পেল ব্যাংক খাত


০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার, ০৬:২২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


বিশেষ ছাড় পেল ব্যাংক খাত

ব্যাংক খাতের সার্বিক উন্নয়নে এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ অবলোপনে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং নীতি ও প্রবিধি বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এতে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ তিন বছর ধরে অনাদায়ী হলে অবলোপন করা যাবে। আগে খেলাপি ঋণ পাঁচ বছর অনাদয়অ হলে অবলোপন করা যেত। এখানে অবলোপনকৃত ঋণের ক্ষেত্রে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ ও পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, ঋণ অবলোপনের পূর্বে মামলা দায়ের করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোন অঙ্কের ঋণ অবলোপনের আগে আদালতে মামলা দায়ের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আগে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মামলা ছাড়া অবলোপন করা যেত।

এতে ব্যাংকগুলো কোনো অবস্থানের ঋণগ্রহীতা ব্যক্তির মূল ঋণ বা আসল মওকুফ করে দিতে পারবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আর অবলোপন করা ঋণ কোন অবস্থাতেই পুন:তফসিল বা পুনর্গঠন করা যাবে না।

ঋণ অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ করার মানে হলো—সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মূল ব্যালান্স শিট থেকে ওই ঋণকে অন্য আরেকটি লেজারে সরিয়ে নেয়া। খেলাপি ঋণ শ্রেণিকরণে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। এগুলো হলো—সাব স্ট্যান্ডার্ড, ডাউটফুল এবং মন্দ ঋণ। যেসব ঋণ মন্দ ক্যটাগরিতে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকে সেগুলোই রাইট অফের মাধ্যমে ব্যালেন্সশিট থেকে বাদ দেয়া হয়। সাধারণত শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ কম দেখাতেই এটি করা হয়ে থাকে। তবে ব্যালেন্সশিট থেকে বাদ দেয়া অর্থ এই নয় যে, এ ঋণ আর আদায় করা যাবে না বা আদায় হবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়—কেবল মন্দ বা ক্ষতিমানে শ্রেণিকৃত এবং শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করা আছে এরূপ ঋণ অবলোপন করা যাবে। এমনকি কোনো ঋণের বিপরীতে পূর্ণ সংস্থান করা না থাকলেও চলতি বছরের আয় থেকে তা পূরণ করে অবলোপন করা যাবে। অবলোপনের জন্য নির্বাচিত ঋণের বিপরীতে পূর্বে কোনো কারণে আইনগত ব্যবস্থা গৃহীত না হয়ে থাকলে সেটি অবলোপনের আগে অবশ্যই মামলা দায়ের করতে হবে। তবে ২ লাখ টাকা বা এর নিচের অঙ্কের ঋণ মামলা দায়ের ব্যতিত অবলোপন করা যাবে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া কোনো ঋণ অবলোপন করা যাবে না। অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্য পৃথক ইউনিট গঠন করতে হবে।

এ ছাড়া, অবলোপনকৃত ঋণ সম্পর্কিত মামলা নিস্পত্তি তরান্বিত করা বা অবলোপকৃত অর্থ আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ তৃতীয় কোনো পক্ষকে নিয়োগ দিতে পারবে।

এতে আরো বলা হয়—ঋণ অবলোপনের পর সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতাকে খেলাপি হিসেবে উল্লেখপূর্বক, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) রিপোর্ট করতে হবে। অবলোপনকৃত ঋণের হিসাব পৃথক লেজারে সংরক্ষণ করতে হবে এবং ব্যাংকের বার্ষিক রিপোর্টে ক্রমপুঞ্জীভূত ও চলতি বছরের অবলোপনকৃত ঋণের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া, প্রতি ত্রৈমাসিকে ঋণ অবলোপনের প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

এর আগে ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঋণ অবলোপন নীতিমালা বিষয়ে ১০ দফা সুপারিশ করেছিল। এগুলো হচ্ছে, ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) সার্কুলার (০২/২০০৩) অনুযায়ী অবলোপনকৃত ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সকল পরিচালককে খেলাপী হিসেবে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) চিহ্নিত করা, মামলা ছাড়া কোন ঋণ অবলোপন না করা, ঋণ অবলোপনের পূর্বে কারণ চিহ্নিত করা, ব্যবসায়ী ঋণের ফান্ড অন্য জায়গায় হস্তান্তর করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখা, ঋণ সুপারিশ থেকে অবলোপন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কোন ক্রুটি বা অনিয়ম আছে কি না তা উল্লেখ করা, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর আওতায় ঋণ আদায়ের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ, ঋণ অবলোপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়া, ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আগের বছরের লভ্যাংশ থেকে শত ভাগ প্রভিশন রাখার নিয়ম থাকলেও কোনো কোনো ব্যাংক চলতি বছরের লভ্যাংশ থেকে প্রভিশন করতে না পারে তা রোধ করা, অবলোপনের ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধান মোতাবেক অর্থ ঋণের মামলা করতে হয়, প্রচলিত নিয়মে অনেক ক্ষেত্রে মামলা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ঋণ অবলোপন করা যায়। এ ক্ষেত্রে মামলা ছাড়া কিছুতেই কোন ঋণ যেন অবলোপন করা না যায় সে রকম বিধান প্রণয়ন।

জানা যায়, ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংকগুলোর মোট ৬০০ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৪.৩৬ শতাংশ বেশি। মার্চ পর্যন্ত অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। ২০০৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। জুন শেষে মোট অবলোপনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৪৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ১১.৫০ শতাংশ। ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ১০.৪০ শতাংশ। ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা ওই সময় মোট বিতরণ করা ঋণের ৯.৩০ শতাংশ ছিল। ৯ মাসের ব্যাবধানে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।

ঋণ অবলোপনের সমালোচনা করা বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঋণ অবলোপনের কারণে সরকারের কর আদায় বাধাপ্রাপ্ত হয়, কারণ ব্যাংকগুলো অবলোপনের কারণে সৃষ্ট ব্যবসায়িক ক্ষতির জন্য কর অব্যাহতি পায়, ফলে সরকারের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হন ডিভিডেন্ড থেকে, কারণ অবলোপনের প্রথম শর্তই হচ্ছে মুনাফা থেকে সরিয়ে মন্দ ঋণের বিপরীতে সংস্থান সৃষ্টি করা। এতে বার্ষিক ডিভিডেন্ডের হার কমে যায়। (তবে অবলোপন করা না হলেও ‘মন্দ’ শ্রেণিভুক্ত ঋণের বিপরীতে পূর্ণ সংস্থান করতে হয় বলে বার্ষিক ডিভিডেন্ডের হার ক্ষতিগ্রস্ত হয়)। ব্যাংকের সুদের হারের ওপরও অবলোপনের বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনাদায়ি মন্দ ঋণের পরিমাণ বেশি হলে ব্যাংকের তহবিল খরচ (কস্ট অব ফান্ড) বেশি থাকে, ফলে আমানতের ওপর কম সুদ ও ঋণের ওপর সুদের হার বাড়াতে হয়। এতে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: