facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

বিতর্কিত সেই কপারটেকের শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি


১৫ জুন ২০২১ মঙ্গলবার, ০৬:০৭  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


বিতর্কিত সেই কপারটেকের শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি

যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিতর্কিত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানির পক্ষ থেকে এই জবাব দেওয়া হয়েছে।

কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম ১৫ দিনে প্রায় ৮১ শতাংশ বেড়েছে। অস্বাভাবিক এই দর বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেনি পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানি।

ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকায় গত সোমবার কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে কারণ জানতে চেয়েছিল ডিএসই। জবাবে ওই কোম্পানি বলেছে, তাদের কাছে অপ্রকাশিত এমন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই, যার প্রভাবে শেয়ারের দাম বাড়তে পারে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১ জুন কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম ছিল ১৯ টাকা ৯০ পয়সা, যা বাড়তে বাড়তে সোমবার ৩৬ টাকায় উঠেছে।

অর্থাৎ, ১৫ দিনে দাম বেড়েছে ১৬ টাকা ১০ পয়সা বা ৮০ দশমিক ৯০ শতাংশ।

ঋণের ভারে জর্জরিত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুঁজিবাজার থেকে তোলা টাকা থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল কোম্পানিটির। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ পরিশোধেই চলে যাবে উত্তোলিত অর্থের তিন ভাগের একভাগ।

তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে প্রতিষ্ঠানটির কী উদ্দেশ্যে বাজারে আসছে? এটা পরিস্কার তাদের ঋণের বোঝা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। সেটাই এখন হচ্ছে।

আইপিও প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে কপারেটক ইন্ডাস্ট্রিজ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ২২৮ টাকা। যার সুদ হার ১২ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ। আর এ ঋণের চলতি অংশ ৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮০৭ টাকা আইপিওতে তোলা টাকা থেকে পরিশোধ করা হবে।

এর পরও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ঋণ দাঁড়াবে ২২ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২১ টাকা। ৫ বছর মেয়াদি এই ঋণ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানির ৬ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৮২৪ টাকা ঋণ রয়েছে।

এদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে স্বল্প মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ২৬ কোটি ১৪ লাখ ৭ হাজার ১০৪ টাকা।

২০১৪ সালে উৎপাদনে আসা কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৭০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুনে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। আইপিও পরবর্তী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন হয় ৬০ কোটি টাকা।
কোম্পানির ৩০.০৭ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে,১৪.১৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কাছে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে থাকবে ৫৫.৭৯ শতাংশ।

কোম্পানিটির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্বাসী আদম আলী।

৩০ জুন, ২০১৮ সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষা হিসাবে, কোম্পানিটি ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৫৩ হাজার ২৪২ টাকার পণ্য বিক্রি করে কর পরিশোধের পর প্রকৃত মুনাফা করেছে ৪ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.০২ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৮৮ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা হিসাব করে। এ সময়ে শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য(এনএভি) হয়েছে ১২.০৬ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ মূল্য দিয়ে বিচার করলে দুর্বলই বলা চলে।

২০১৪ সালে কোম্পানিটির লোকসান (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা। এর পরের বছর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি লাভ দেখাতে থাকে। ২০১৫ সালে ইপিএস ৫৯ পয়সা, ২০১৬ সালে ইপিএস বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে ৩ টাকা ১৬ পয়সা। অন্যদিকে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি লোকসান গুনে ৩২ লাখ ৮১ হাজার ৫৯৯ টাকা। আর ২০১৮ সালে অর্থাৎ আইপিওতে অর্থ তোলার অনুমতি চাওয়ার সময় কোম্পানিটির লোকসান তো দূরের কথা নিট মুনাফা ফুলে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার ৮৬৮ টাকা।

কোম্পানিটি মূলত কপার বার, স্ট্রিপ, ওয়্যার ও টিউব উৎপাদন করে। ৩০ জুন, ২০১৮ এ কোম্পানিটিরি মোট আয়ের ৩৮.৪৭ শতাংশ এসেছে কপার বার থেকে; ১৭.৭৭ শতাংশ এসেছে কপার স্ট্রিপ; ১৫.৬৬ শতাংশ এসেছে কপার ওয়্যার এবং ১১.৩৩ শতাংশ এসেছে কপার টিউব বিক্রি করে।

কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল এমটিভি ক্যাপিটাল লিমিটেড।

 

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: