০৩ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার, ০৬:১২ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার বিজনেস24.কম
বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের সম্ভাবনাময় দেশ উল্লেখ করে এ খাতে বিনিয়োগে বিদেশি ও প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত রোডশোর বক্তারা।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের পরই সম্ভাবনাময় আইটি খাত। একদিকে দেশীয় বাজারে আইটি খাতের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে রপ্তানি খাতেও তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। এসব বিষয় সামনে রেখে বিনিয়োগবান্ধর পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ১০ দিনের রোড শোর সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন।
তারা বলেন, আইটি খাতে বিনিয়োগ করলে ১০ বছরের কর অব্যাহতি সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে।
সানফ্রান্সিসকোর সান্তা ক্লারার হায়াত রিজেন্সিতে রোডশোর মূল বিষয় ছিল ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মেয়র লিসা এম গিলমোর। বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসরকারি খাত। বিভিন্ন উৎপাদনশীল কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা, মিডিয়া এবং বিদ্যুৎ খাতেও নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসরকারি খাত। অর্থমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে নেয়া হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এই অগ্রযাত্রায় বিনিয়োগ চাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত। আর প্রবাসীদের সব ধরনের জটিলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে যাচ্ছি।’
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিবেশ বিনিয়োগবান্ধব। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, মুদ্রার বিনিময় হার, যুব শ্রমশক্তি এবং ইকো সিস্টেম সবকিছুই বিনিয়োগ উপযোগী।’
তিনি বলেন, ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং স্টার্টআপ বিজনেসের সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশেষ করে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক দ্রুত গতিতে বেড়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময়।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তুলে ধরে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাপক বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ।
‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার রয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কম মূল্যে শ্রমিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং অন্যান্য সেবা মিলছে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের প্রথম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশে উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করলে চীন, ভারত, ইউরোপ ও জাপানের বাজার থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারবে।’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সাম্প্রতি পরিস্থিতি নিয়ে শিবলী বলেন, ‘গত এক বছরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আলোচ্য সময়ে এ খাতে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে। আর এসব সংস্কারের সুফল মিলছে।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইটিভিত্তিক স্টার্টআপকে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এবারের বাজেটেও বিভিন্ন সহায়তার কথা বলা হয়েছে। ২৯টি হাইটেক পার্কের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব পার্কে ইউটিলিটি সুবিধা সবচেয়ে বেশি।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে। করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে সরকার। এগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে।
‘সবকিছু মিলে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে আর্কষণীয় পরিবেশ রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তুলে ধরতে গিয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধে জানানো হয়, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই বয়সে তরুণ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।