facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

বন্ধ ইমাম বাটনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি


০৩ জুলাই ২০২২ রবিবার, ০২:০০  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


বন্ধ ইমাম বাটনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি

শেয়ারহোল্ডারদের এক যুগ ধরে কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আড়াই বছর ধরে কারখানা বন্ধ, শিগগিরই চালু হওয়ার তথ্যও নেই কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের কাছে। এমন একটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সংঘদ্ধভাবে কারসাজিতে নেমেছে একাধিক চক্র। চক্রের সদস্যরা মাত্র ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিন মাসের ব্যবধানে শেয়ারের দাম ৫-৬ গুণ বাড়িয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর লোভে পড়ে এই শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির নাম ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটি দেশের উভয় পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত।

জানা গেছে, কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে বড় একটি চক্রের পাশাপাশি ছোট-ছোট কয়েকটি চক্র জড়িত। চক্রটি সর্বশেষ তিন মাসে ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম ৩৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকায় নিয়েছে। তাতে তিন মাসে ২৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার কোম্পানি ১০২ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার টাকায় পরিণত হয়েছে।

চক্রের বিষয়টি এরইমধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে এসেছে।নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রাথমিকভাবে কারসাজির প্রমাণও পেয়েছে। যারা এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে বিএসইসি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম এভাবে বাড়া সম্ভব নয়। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারসাজি চক্রের সঙ্গে বিএসইসি ও ডিএসইর লোকজন জড়িত থাকতে পারে। বিএসইসি ও ডিএসইর দুর্বলতার কারণে কারসাজি চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে পুঁজিবাজার হচ্ছে অস্থির। বাজারের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

আমাদের কারখানা বন্ধ রয়েছে। ৩-৬ মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু হওয়ার কোনো খবর মালিক পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারপরও ২০-২২ টাকার শেয়ার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা কীভাবে হয়
গৌতম, কোম্পানি সচিব, ইমাম বাটন

শেয়ারটির সাম্প্রতিক সময়ে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি কারসাজি হিসেবে মনে করছেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইমাম বাটন কোম্পানির শেয়ারের দাম এক বছরে ২২ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা হয়েছে। কোম্পানি বন্ধ তারপরও শেয়ারের দাম এতো বাড়া অস্বাভাবিক। এখানে কিছু একটা আছে। কারা বন্ধ কোম্পানিকে নিয়ে কারসাজি করছে বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।

এই কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৪০ টাকা হতে পারে বলে মনে করেন ইমাম বাটনের কোম্পানি সচিব গৌতম। তিনি বলেন, আমাদের কারখানা বন্ধ রয়েছে। ৩-৬ মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু হওয়ার কোনো খবর মালিক পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারপরও ২০-২২ টাকার শেয়ার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা কীভাবে হয়।

তিনি বলেন, কোনোভাবেই এই শেয়ারের দাম ১৩০ টাকা হওয়ার যোগ্য নয়। আমরা ডিএসইকে জানিয়েছি যে, আমাদের কাছে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই।

বিনিয়োগকারী সুরেশ পাল বলেন, আমার এক বন্ধু গত মার্চ মাসে বলেছিল, এই শেয়ারে গেম হবে, শেয়ার কিন। কিন্তু ঝুঁকি নেইনি। সে এখন লাখ লাখ টাকার মালিক। তিনি বলেন, গত বছর শুনেছিলাম কোম্পানিটি উৎপাদনে আসবে। এই আশা নিয়ে আগেই ১ হাজার শেয়ার কিনেছিলাম। মার্চ মাসে আমার সেই শেয়ার কেনা দামের নিচে ছিল। কারণ ইমাম বাটন উৎপাদনে আসেনি তাই নতুন করে রিস্ক নেইনি। তিনি বলেন, আমি ৫০ টাকা করে ১ হাজার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছি। এখন দেখছি শেয়ারের দাম বাড়ছে আর বাড়ছে।

একটি ব্রোকার হাউজের ট্রেডার জাহিদ আনোয়ার বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আমাকে কয়েকজন ক্লায়েন্ট বলেছিল, শেয়ারটিতে বড় কারসাজি চক্র ঢুকছে। ফরচুন, তজিমউদ্দিন টেক্সটাইলের মতো গেম হবে। এই খবরে তিন জন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির ৩ লাখ শেয়ার কিনেছে। গত এক সপ্তাহে তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। তারা এখন কোটিপতি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরের শুরুতে ইমাম বাটনের শেয়ারের (শেয়ারের সংখ্যা ৭৭ লাখ) দাম ছিল ২৩ টাকা ৯০ পয়সা। ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে শেয়ারটির দাম দাঁড়ায় ৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়। তাতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কোম্পানির বাজার মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

মূলত এরপর থেকেই বাড়তে থাকে ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম। এপ্রিল, মে ও জুন-এই তিন মাসে টানা উত্থানে থাকে শেয়ারটি। ফলে শেয়ারটির দাম ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে গত ৩০ জুন লেনদেন হয়েছে ১৩৫ টাকা দরে। অর্থাৎ গত তিন মাসে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি। তাতে ২৬ কোটি টাকার কোম্পানি তিন মাসের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ মার্চ মাসে যে বিনিয়োগকারী ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা দরে কোম্পানিটির অন্তত ৭৬ হাজার শেয়ার কিনেছেন, তিনি এখন কোটিপতি।

আবার কেউ যদি গত ৩০ ডিসেম্বর ২৩ টাকা ৯০ পয়সা কিংবা ২৪ টাকা ১০ পয়সায় ১ হাজার শেয়ার শেয়ার কিনে থাকেন, এখন তিনি লাখপতি।

শেয়ারটির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি পেয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বন্ধ একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। কিন্তু গত তিন মাসে কর্তৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, এখানে খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে কারসাজি হচ্ছে। কমিশনের উচিত দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

বাজারে কারসাজি বন্ধ করতে জড়িতদের আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কারাগারে পাঠিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত হয় ইমাম বাটন। চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানিটি শুরু থেকে পোশাক খাতের জন্য বোতাম তৈরি করে আসছে। কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার সংখ্যা ৭৭ লাখ। যার পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ৭৭ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৬১ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানির সর্বশেষ বোর্ড সভায় হয় ২০২০ সালে। সেই বছরের এপ্রিল মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কোম্পানিটির। ২০১০ সালে সবশেষ বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল ইমাম বাটন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: