facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া শেয়ারের দর হারায় সবচেয়ে বেশি


০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার, ০৩:৩৭  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া শেয়ারের দর হারায় সবচেয়ে বেশি

একদিকে লেনদেনে ধস, অন্যদিকে সমালোচনা- এ দুইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে গত জুলাইয়ের শেষে তালিকাভুক্ত ১৬৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস বা লেনদেনে সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর পর গত ছয় মাসে এসব শেয়ারের বেশিরভাগই দর হারিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিগুলোর লেনদেন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ছয় মাসে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে ৫৬টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দর। দর হারানো ৮৮ শেয়ারের মধ্যে ৪৯টির দর ১০ থেকে ২৬ শতাংশ কমেছে। বিপরীতে দর বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারগুলোর মধ্যে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ দর বেড়েছে ২৩টির।

কিছু শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সময় বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এমন সব শেয়ারের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর দরপতন হলেও মূল্যসূচকে তার খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আবার এসব শেয়ারের দরপতন যাতে খুব বেশি না হয়, তা বিবেচনায় রেখেছে এসব শেয়ারের দরে নিচের সার্কিট ব্রেকার ১ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

স্বল্প মূলধনি শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরেকটি মূল উদ্দেশ্য ছিল। এর মাধ্যমে সার্বিক বাজার সংশ্নিষ্ট ও বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা পর্যবেক্ষণ করে বাকি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং লেনদেন কিছুটা হলেও বাড়ানো। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পক্ষে নয় বিএসইসি। বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমন তথ্য দিয়েছেন।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনও ফ্লোর প্রাইসের পক্ষে কিছু মানুষ আছে। তবে তাদের পর্যবেক্ষণ হলো, আগে যারা পক্ষে ছিল এমন অনেকে এখন ফ্লোর প্রাইসের ঘোর বিরোধী। এর কারণ, ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রতিদিনই দুই শতাধিক শেয়ার ক্রেতাশূন্য থাকছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী কেনাবেচা করতে পারছেন না। চাইলে বিনিয়োগ প্রত্যাহারেরও সুযোগ নেই। তবে এর মধ্যে সার্বিক লেনদেন বেড়েছে। কিন্তু তা গুটি কয় শেয়ারের ওপর লেনদেনে ভর করে বেড়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কারসাজিমূলক তৎপরতা থাকতে পারে বলে জানান তাঁরা।

এদিকে এখনও শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর আছে ২২৪ শেয়ারে। গত বৃহস্পতিবার এর মধ্যে ১৬১টি ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২৮ জুলাইয়ের পরও ফ্লোর প্রাইস কার্যকর থাকা ২২৪ শেয়ারের টাকার অঙ্কে কেনাবেচার পরিমাণ ছিল ৩৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল বাজারে (পাবলিক মার্কেট) শীর্ষ ২০ শেয়ারের লেনদেন ছিল ২৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা মোটের প্রায় ৬৬ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৬৮৭ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। মূল বাজারে এসব শেয়ারের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৩৬ কোটি টাকা, যা মোটের সাড়ে ৬৩ শতাংশ।

শেয়ারবাজারের এমন চিত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে কোনো কিছু দিয়ে বেঁধে রাখা বা কৃত্রিমভাবে দর ধরে রাখার ফল ভালো হয় না। যেমন- বহু বছর কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম বেঁধে রাখা হয়েছিল। এর ফল এখন বাংলাদেশ ভুগছে। শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস একই রকম ব্যবস্থা।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ফ্লোর প্রাইস আরোপের মাধ্যমে শেয়ারের প্রকৃত মূল্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন নানা কারণে কোম্পানির মুনাফা কমছে, কিন্তু আগের দরেই নতুন ক্রেতাদের শেয়ার কেনায় বাধ্য করা হচ্ছে। সমস্যা হলো, জোর করে শেয়ারদর ধরে রাখা সম্ভব, জোর করে কাউকে বিনিয়োগ করানো যায় না। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বলে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে আদতে বাজারের দীর্ঘ ভবিষ্যৎ নষ্ট করা হচ্ছে। বাজার নষ্ট হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কী করে ভালো হবে, তা বোধগম্য নয়। সূত্র : সমকাল

এদিকে এক বাজারে দুই নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার স্থবির। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত দরকার। একই বাজারে কিছু শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস থাকা আর কিছু শেয়ারে না থাকাকে বিনিয়োগকারীদের প্রতি বিএসইসির বৈষম্যমূলক আচরণ বলে মনে করছেন এ সংস্থারই সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এক বাজারে একই বিষয়ে দুই রকমের নিয়ম করার সুযোগ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সব বিনিয়োগকারী ও সব কোম্পানি? সমান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন বৈষম্য করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ব্লক মার্কেটে বড় বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ পাচ্ছেন, মধ্যবিত্তরা বা অপেক্ষাকৃত অল্প টাকার বিনিয়োগকারীরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: