facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

প্রথমবারের মতো রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি


০২ ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার, ১১:৫৫  এএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


প্রথমবারের মতো রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি

বিশ্ববাজারে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা স্বাধীনতার পর এই প্রথম বলে জানিয়েছে এক্সপোর্ট প্রোমোশন ব্যুরো অব বাংলাদেশ (ইপিবি) এর সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সাম্প্রতিক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা অনুসারে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশ আবারও দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। হোল্ড হওয়া রপ্তানি আদেশ আসতে শুরু করা এবং আগের আগের বানানো পোশাক ক্রেতারা নিতে শুরু করার পাশাপাশি, কাঁচামালের বর্ধিত মূল্যের কারণে নভেম্বরে রপ্তানিতে এ প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারক ও ইপিবির সংশ্লিষ্টরা।

এর আগের দুই মাস অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছিলো যথাক্রমে ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং ৩.৯১ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে গত কয়েক মাস রপ্তানির গতিতে কিছুটা ভাটা থাকলেও অক্টোবরের পর নভেম্বরেও পজিটিভ গ্রোথ হওয়ায় সার্বিকভাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

ইপিবি`র প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, গত নভেম্বরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৫.০৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।

এদিকে, সাম্প্রতিক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা অনুসারে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশ আবারও দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ছিল তৃতীয় অবস্থানে; সেবার বাংলাদেশের আগে ছিল ভিয়েতনাম।

বাংলাদেশ অতীতের তুলনায় অপেক্ষাকৃত হায়ার ভ্যালুর পণ্য তৈরি করাকে সার্বিকভাবে রপ্তানির পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন তারা।

ইপিবি`র ভাইস চেয়ারম্যান আ হ ম আহসান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইনফ্লেশন কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসায় সেখানে চাহিদা বাড়তে থাকা, আগের তৈরি করা পণ্য নভেম্বরে এসে রপ্তানি হওয়া, ইউএস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মার্কেটের বাইরে জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মত বাজারে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিকে সার্বিকভাবে নভেম্বরে রপ্তানি গ্রোথ এত বেশি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন তিনি।

অবশ্য রপ্তানিকারকদের কেউ কেউ রপ্তানিতে এত বেশি হারে বৃদ্ধির বিষয়ে ইপিবির পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না।

এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিকেএমইএ-র এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "ইপিবি`র এ পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।"

"এক্সপোর্ট কিছুটা বাড়তির দিকে কিন্তু এতটা গ্রোথ হওয়ার কথা নয়। আমাদের কাছে ইউটিলিটি ডিক্লারেশন (ইউডি, রপ্তানি আদেশের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির এনটাইটলমেন্ট ঘোষণা) এর তথ্যও এর সঙ্গে মিলছে না," বলেন তিনি।

অবশ্য ইপিবি`র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ`র (এনবিআর) তথ্যের ভিত্তিতে তারা পরিসংখ্যান তৈরি করেন।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

সর্বশেষ ডব্লিউটিওর বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা অনুসারে, ২০২১ সালে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক রপ্তানির ৮ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে; যার মূল্য ৩৫.৮ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের অংশ ২০২০ সালের ৬.৪% থেকে ২০২১ সালে ৫.৮% এ নেমে এসেছে। ২০২১ এ বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানির বাজারে ৩.৫ শতাংশ তুর্কিয়ের, ভারতের ৩ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ২.৭ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার রয়েছে ১.৭ শতাংশ। এ বাজারের সর্বোচ্চ ৩২.৮ শতাংশের দখলের রয়েছে চীন; যার মূল্য ১৭৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে, দেশে পোশাক রপ্তানি খাতের বাইরে অন্যান্য অনেক খাত চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রত্যাশিত রপ্তানি আয়ে ব্যর্থ হয়েছে।

বিজিএমইএ এর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, "স্বাভাবিকভাবে এত বেশি হারে গ্রোথ হওয়ার কথা নয়।"

তবে রপ্তানি বাড়ার কয়েকটি কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "এতদিন অর্ডার কম ছিলো এখন কিছুটা বাড়ছে। আবার অতীতে বর্ধিত কাঁচামালে তৈরি হওয়া পোশাক নভেম্বরেও রপ্তানি হয়েছে। যেমন আগে একটি জ্যাকেট আমরা বানাতাম ১২ ডলারে। কাঁচামাল সহ অন্যান্য কারণে একই পণ্য ১৬ ডলারে অর্ডার নেওয়া হয়েছে, যা রপ্তানি মূল্য বাড়িয়েছে।"

"এর বাইরে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত হায়ার এন্ড এর পণ্য রপ্তানিও বাড়িয়েছে। যেমন আগে হয়তো ২০ ডলারের পোশাকই বানাত বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। কিন্তু এখন ৩০ ডলারের পোশাকের অর্ডারও নিচ্ছে,"

এটিও রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ছাড়া প্রতিযোগী চীন, ভিয়েতনামের গ্রোথ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তাদের গ্রোথ বাংলাদেশের মত নয়।

ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও ফ্রোজেন এবং কাঁচা মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, হোম টেক্সটাইলসহ বেশ কিছু পণ্যের রপ্তানি পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।

অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং প্লাস্টিকসহ কয়েকটি পণ্যের রপ্তানি এ সময়ে বেড়েছে।


দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে একক রেট বেঁধে দেওয়ার পর টানা তিন মাস যাবৎ কমছে রেমিট্যন্সের ফ্লো।

চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গড়ে ১.৫ বিলিয়ন করে এসেছে রেমিট্যান্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার।

যদিও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে রেমিট্যন্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২.০৯ ও ২.০৩ বিলিয়ন ডলার।

সেপ্টেম্বরের শুরুতে একক রেট বেঁধে দেওয়ার পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) রেমিট্যান্সে এসেছে ৪.৬৫ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪.৯২ বিলিয়ন ডলার।

সে হিসেবে আগের বছরে তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ২৬৭ মিলিয়ন ডলার বা ৫%।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "দেশের রেমিট্যান্স কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে একক রেট বেঁধে দেওয়া।"

তিনি আরো বলেন, "জুলাই-আগস্টে রেমিট্যন্স গড়ে দুই বিলিয়ন। সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে ১ বিলিয়ন রেমিট্যান্স। তারপর মাস শেষে রেমিট্যান্স আসলো ১.৫৩ বিলিয়ন ডলার।"

ড. জাহিদ বলেন, "নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্স ও হোয়াইট কলার রেমিট্যান্সে রেট ১০৭ টাকা করা হয়। অথচ আমাদের দেশে প্রবাসীদের খুবই অল্প সংখ্যক পরিমাণে হোয়াইট কলার রেমিটার, যা মাত্র ১০%। এছাড়া যারা হোয়াইট কলার রেমিটার না তাদের পরিমাণ ৯০% এর বেশি। অথচ তাদের রেট ৯৯ টাকা। যার কারণে রেমিট্যান্স ফ্লো কমছে।"

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা যেই হারে রেমিট্যান্সের দাম পাচ্ছে তার সঙ্গে দেশের খোলবাজারের রেট কাছাকাছি। তাই আমার মনে হচ্ছে না হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসছে।"

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত করে দেখা উচিত অবৈধ টাকা দিয়ে বিদেশে হুন্ডিকারিদের থেকে রেমিট্যান্স কিনে সেখানে বিনিয়োগ করা হচ্ছে কিনা। এছাড়া কোন অসাধু ব্যবসায়ী বিদেশে থেকে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে আমদানি দায় পরিশোধ করছে কিনা সেটাও দেখা উচিত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলার। যা আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ১৫% কম।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ লোক নতুন করে বিদেশে গিয়েছে। অথচ বিদেশে প্রবাসীদের পরিমাণ বাড়লেও রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমছে।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: