facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

পুঁজিবাজারের মন্দায় বিপাকে আইসিবি


২৭ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার, ১১:৫৬  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


পুঁজিবাজারের মন্দায় বিপাকে আইসিবি

পুঁজিবাজারের চলমান মন্দায় বিপাকে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত এ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির নিট সম্পদমূল্য কমেছে ৩৯ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময়ে আইসিবির নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) কমেছে ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা।

দেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ রয়েছে আইসিবির। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। তবে অব্যাহত দরপতনে গত দুই বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ মূল্য কমেছে আইসিবির। একই সঙ্গে বড় ধরনের অর্থ সংকটের মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পুঁজিবাজারে চলমান দরপতন সামাল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইসিবিকে তারল্যের জোগান দেওয়া হলেও তা বাজারে প্রভাব রাখেনি। বিভিন্ন খাত থেকে নেওয়া ঋণের কিিস্ত ও সুদ মেটাতে মন্দাবাজারেও বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে অর্থের সংস্থান করছে কোম্পানিটি, যার প্রভাবে পুঁজিবাজারে বিক্রিচাপ আরও বাড়ে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত তিন বছর ধরে আইসিবির সম্পদমূল্য ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে আইসিবির সম্পদমূল্য ছিল ৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা, যা পরের হিসাব বছরে ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে আইসিবির সম্পদমূল্য আরও কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১০৯ কোটি টাকায়। আর চলতি ২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম প্রািন্তকে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদমূল্য কমে গিয়ে ১ হাজার ৮৯২ কোটি টাকায় নেমেছে। এর ফলে মাত্র তিন মাসে আইসিবির সম্পদমূল্য কমেছে ৩৯ শতাংশ বা ১ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারের মন্দার কারণেই সম্পদমূল্য কমে গেছে। আগামীতে বাজার স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এলে সম্পদমূল্যও বাড়বে। তিনি জানান, বাজারকে সহায়তা দিতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের ঋণ করতে হয়েছে। এছাড়া বন্ড ইস্যু করেও অর্থ সংস্থান করা হয়েছে। এর ফলে সুদ বাবদ ব্যয় বেড়ে গেছে। এ সময় মূলধনী মুনাফাও কমে গেছে। এসব কারণে লোকসানে পড়েছে আইসিবি।

২০১৮ সাল থেকেই পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। আর চলতি বছর ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট, রপ্তানি খাতে অস্থিরতা, বস্ত্র, ইস্পাত, সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাতের কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়ার প্রভাবে দরপতন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। চলতি বছর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। আর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ সূচকটি কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। এ সময় ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, আইসিবির মোট বিনিয়োগের প্রায় ৯০ শতাংশ রয়েছে পুঁজিবাজারে। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের বন্ড, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার, প্রেফারেন্স শেয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আইসিবি ও এর সাবসিডিয়ারিসহ সমন্বিত বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে ১২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে সমন্বিত বিনিয়োগ হচ্ছে ১১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি জুন শেষে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। পরবর্তী তিন মাসে দরপতন আরও বাড়ায় আইসিবির ধারণকৃত সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য অন্তত আরও কমেছে।

পুঁজিবাজারনির্ভর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দরপতনের প্রভাব আইসিবিতেও পড়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ আয়, শেয়ার বিক্রি থেকে মূলধনী মুনাফা, কমিশন ও ব্রোকারেজ আয় কমে যাওয়ায় চলতি প্রথম প্রািন্তকে লোকসানে পড়েছে আইসিবি।

আইসিবির ২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম প্রািন্তকের অনিরীড়্গিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় আইসিবির সুদ আয় কমে গেছে। বিপরীতে ঋণ বাড়ায় সুদ বাবদ ব্যয় বেড়েছে। ফলে প্রথম প্রািন্তকে প্রতিষ্ঠানটিকে সুদ বাবদ ২০৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এ সময় তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ আয় কমেছে ৩০ শতাংশের বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মূলধনী মুনাফায়। আগের বছরের তুলনায় চলতি প্রথম প্রািন্তকে আইসিবির মূলধনী মুনাফা কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ, বন্ড ও আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় বাড়ায় ২০১৮ সাল থেকেই চাপের মুখে রয়েছে আইসিবি। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে শেয়ার বিক্রিচাপ বেড়ে গেছে। মন্দাবাজারে সহায়তা দেওয়ার বদলে আইসিবি বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বিক্রিচাপ আরও বাড়িয়ে তোলে, যা সূচক পতনে ভূমিকা রাখে। আবার মন্দাবাজারে শেয়ার বিক্রি করায় মূলধনী মুনাফাও কমে গেছে, যা ছিল প্রতিষ্ঠানটির আয়ের বড় উৎস।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রািন্তকে শেয়ার বিক্রি থেকে আইসিবির মূলধনী মুনাফা হয়েছে ২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ সময় কমিশন, ফি ও ব্রোকারেজ আয় কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। এর ফলে চলতি প্রথম প্রািন্তকে আইসিবি আয়-ব্যয়ের হিসাবে শুরুতেই ৮১ কোটি টাকার লোকসানে পড়ে। পরিচালন ব্যয় মেটানোর পর আইসিবির পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ১১৫ কোটি টাকা। অথচ আগের বছরের একই সময়ে ৫০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা ছিল।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে আইসিবিকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এর ফলে সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের মূল্য কমলেও এ বাবদ কোনো সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয় না আইসিবিকে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে চলতি প্রথম প্রািন্তকে আইসিবিকে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়েছে। এর ফলে আইসিবির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে পুঁজিবাজারের মন্দার মধ্যেও আইসিবি ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিট মুনাফায় ছিল।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: