১৪ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার, ১১:০৪ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার বিজনেস24.কম
দেশের পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ আইনি সীমায় রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো (সাবসিডিয়ারিসহ) তার রেগুলেটরি মূলধনের ৫০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকের বিনিয়োগ রেগুলেটরি মূলধনের যে সীমা রয়েছে তার অনেক নিচে রয়েছে। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ২৩ ব্যাংকের বিনিয়োগ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে ২৩ ব্যাংকের (সাবসিডিয়ারিসহ) সমন্বিত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬০১ কোটি টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ২৩টির রেগুলেটরি মূলধনের পরিমাণ হচ্ছে ৪৯ হাজার ২১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যার অর্ধেক অর্থাৎ ২৪ হাজার ৬০৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে ওই ব্যাংকগুলো। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর (সাবসিডিয়ারিসহ) যে বিনিয়োগ রয়েছে, তা সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এ হিসাবে ওই ব্যাংকগুলোর সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ৪০ শতাংশেরও বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এককভাবে রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে, যা সাবসিডিয়ারিসহ ৫০ শতাংশ। ২৩ ব্যাংকের মধ্যে পুঁজিবাজারে হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে মাত্র চারটি ব্যাংকের। এগুলো হলো আল-আরাফাহ্ ইসলামী, ব্র্যাক, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের। গত এক বছরেরও বেশি সময় পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ থেকে ভালো আয় পেয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাত্র একটি ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা নেয়নি। অথচ অতীতে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সময়ে বড় ধরনের তারল্য সংকট দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখা উচিত কেন ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে না। যদি ব্যাংকের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে আইনি সীমার মধ্য থেকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে, তাহলে পুঁজিবাজারের গভীরতা আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধন হিসাবে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির (সাবসিডিয়ারিসহ) বিনিয়োগ রয়েছে ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ৪৯ শতাংশ।
অবশ্য টাকার অঙ্কে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে সিটি ব্যাংকের। সাবসিডিয়ারিসহ পুঁজিবাজারে এ ব্যাংকটির বিনিয়োগ রয়েছে ১ হাজার ১০৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া সাবসিডিয়ারিসহ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ও ব্র্যাক ব্যাংকের ১ হাজার ৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে রয়েছে।
পুঁজিবাজারে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ রয়েছে এবি ব্যাংকের। এ ব্যাংকের সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধন হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যার মধ্যে সাবসিডিয়ারিসহ সমন্বিত বিনিয়োগ রয়েছে ২৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। এছাড়া ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা, উত্তরা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের বিনিয়োগ তুলনামূলক কম রয়েছে।
ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধন হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যার মধ্যে সাবসিডিয়ারিসহ ব্যাংকটির সমন্বিত বিনিয়োগ হচ্ছে ২৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ বিনিয়োগ ব্যাংকটির সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধন হচ্ছে ৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। অথচ পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির সমন্বিত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৬৭২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। যমুনা ব্যাংক সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের প্রায় ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে পুঁজিবাজারে।
গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাবসিডিয়ারিসহ ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া পুঁজিবাজারে ৮৫৮ কোটি টাকা থেকে ৮৬৭ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করেছে, যা ব্যাংকগুলোর সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ৩২ থেকে ৩৬ শতাংশ। এছাড়া মার্কেন্টাইল, এনসিসি, এনআরবিসি, ওয়ান, প্রিমিয়ার, সোশ্যাল ইসলামী, শাহজালাল, ট্রাস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও উত্তরা ব্যাংক সাবসিডিয়ারিসহ সমন্বিত রেগুলেটরি মূলধনের ২২ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে করেছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।