facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

পণ্য আমদানিতে ৬৭০৪ কোটি ডলারের এলসি


২৩ আগস্ট ২০২১ সোমবার, ০২:৩২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


পণ্য আমদানিতে ৬৭০৪ কোটি ডলারের এলসি

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য ৬ হাজার ৭০৪ কোটি (৬৭.০৪ বিলিয়ন) ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

বর্তমান বাজারদরে টাকার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা) এই অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রায় কাছাকাছি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিশাল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি।

চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ধরা ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সেসব দেশের মানুষ আগের মতো পণ্য কেনা শুরু করেছে। সেসব পণ্যের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন উদ্যমে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সে কারণেই শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গেছে।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের টেক্সটাইল কাপড় ও আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানির জন্য ৯১১ কোটি ২৪ লাখ (৯.২৪ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ। ফাইল ছবি

এছাড়া বিশ্ববাজারে, জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এলসি খোলার সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে; ২ হাজার ৪৪২ কোটি (২৪.৪২ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ২১ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের টেক্সটাইল কাপড় ও আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানির জন্য ৯১১ কোটি ২৪ লাখ (৯.২৪ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।

তুলা এবং সিন্থেটিক ফাইবার আমদানির জন্য ৩৩২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।

৩১৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে সুতা আমদানিতে; প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের যে এলসি খোলা হয়েছে; বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৬১৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।

অন্যান্য শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলারের; বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এ ছাড়া, জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ৪৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। ওষুধের কাাঁচামাল আমদানির এলসিতে খরচ হয়েছে ১১১ কোটি ২০ লাখ ডলার।

চাল ও গম আমদানির এলসি খোলা হয়েছে যথাক্রমে ৮৭ কোটি ৬২ লাখ ও ১৫৬ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। সার আমদানির এলসিতে খরচ হয়েছে ২১৫ কোটি ডলার।

ভোজ্যতেলের এলসি খোলা হয়েছে ১৪২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। চিনি, পেঁয়াজ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য আমদানির এলসিতে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৬৪ কোটি, ১৯ কোটি ও ৩৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার।

মহামারির এই কঠিন সময়ে পণ্য আমদানির এলসি বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ২০০৭-০৮ মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত দেড় বছর ধরে দেশে করোনা মহামারি চলছে। এই সঙ্কটকালে সবাই জীবন বাঁচাতেই বেশি ব্যস্ত ছিল। নতুন বিনিয়োগ-ব্যবসা, বাণিজ্য-উৎপাদন নিয়ে খুব একটা ভাবেননি শিল্পোদ্যোক্তারা। কেননা, শুধু বাংলাদেশ নয়; গোটা বিশ্বই মহামারির কবলে তছতছ হয়ে গিয়েছিল। এখন অবশ্য, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সেসব দেশের মানুষ আগের মতো পণ্য কেনা শুরু করেছে। সে সব পণ্যের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগের ছক আঁকছেন। আর সে কারণেই আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো মন্তব্য করে আজিজুল ইসলাম বলেন, দেরিতে হলেও বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও টিকাদানে গতি এসেছে। সবার মধ্যে ধীরে ধীরে সাহস সঞ্চার হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে টিকায় আওতায় আনা গেলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সবকিছু হিসাব-নিকাশ করে ছোট-বড় সব উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। আর এসব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যসহ সব ধরনের পণ্য আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ বাড়ছে।

তিনি বলেন, করোনাকালে সঙ্কটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য মজুদ বাড়াতে সরকার চাল আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও প্রচুর চাল আমদানি হচ্ছে। সে কারণে চাল আমদানিতে বেশি খরচ হচ্ছে।

তবে, পণ্য আমদানির নামে অন্য কিছু আমদানি হচ্ছে কি না, আমদানির আড়ালে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে কি না-সে বিষয়গুলো কড়া নজরদারিতে রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন মির্জ্জা আজিজ।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো থেকে এখন আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। আগামী দিনগুলাতে আমাদের জন্য সুদিন মনে হচ্ছে। যে সব উদ্যোক্তা এতদিন অপেক্ষা করছিলেন, কি হবে, কি হবে? তারা এখন নতুন ছক কষে, নতুন উদ্যোগে মাঠে নেমেছেন। সে কারণেই অন্য সব পণ্যের সঙ্গে আমাদের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের আমদানিও বাড়ছে। আমরা যদি দেশে করোনাটাকে দ্রুততর সময়ের মধ্যে মোকাবিলা করে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আনতে পারি, তাহলে মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারব।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ছিল আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ কম।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

অর্থ ও বাণিজ্য -এর সর্বশেষ