facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

দেশীয় ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা হ্রাসে অবৈধ টেলিভিশন আমদানি


২৪ নভেম্বর ২০২১ বুধবার, ০৩:০৭  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


দেশীয় ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা হ্রাসে অবৈধ টেলিভিশন আমদানি

২০০৫ সালে যেখানে ওয়ালটনের শেয়ার ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে তা ব্যাপকভাবে বেড়ে ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশে পৌঁছায়। এদিকে সনির শেয়ার ২০০৫ সালে ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ থাকলেও ২০২০ এ তা কমে ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমেছে।

দেশি টেলিভিশন কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে দেশের টেলিভিশন বাজারে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে, বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটন সমস্ত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের মধ্যে বাজারে শীর্ষস্থানে রয়েছে। টেলিভিশন শিল্পের প্রায় ২৭ শতাংশ মার্কেট শেয়ার দখল করে আছে ওয়ালটন।

বাকি শীর্ষ পাঁচ ব্র্যান্ডের মধ্যে স্যামসাং ১১ শতাংশ, সিঙ্গার ৯ শতাংশ, মিনিস্টার ৪ শতাংশ এবং সনি ও এলজি`র (বাটারফ্লাই) ৫ শতাংশ করে মার্কেট শেয়ার রয়েছে।

মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ (এমডব্লিউবি)-এর এক গবেষণায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত টেলিভিশন শিল্পের উপর দেশব্যাপী এ গবেষণাকার্য পরিচালনা করে এমডব্লিউবি।

দেশে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন, গ্রামাঞ্চলে দ্রুত বিদ্যুতায়ন, প্রত্যেক পরিবারের গড় আয় দ্বিগুন বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশের টেলিভিশন মার্কেট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসাথে বাড়ছে দেশীয় ব্রান্ডের টেলিভিশনের ব্যবহার।

গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৬৩৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৬৮৭ মিলিয়ন ডলারে।

এমডব্লিউবি-এর সহ-পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কোম্পানির আরেক সহ-পরিচালক ড. নাজমুল হোসেন এই গবেষণা পরিচালনা করেন।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, "আমরা গবেষণা পরিচালনার সময় কোনো ব্রান্ডের নাম উল্লেখ করিনি। সম্পূর্ণ তথ্য পর্যালচনা আমরা দেখতে পাই গত ২০ বছরে আমাদের দেশি টিভি কম্পানিগুলো অনেক ভালো করছে। আগে যেখানে গ্রাহকরা বিদেশি টিভিগুলোতে আস্থা রাখতো সেখানে এখন মানুষ দেশি টিভিগুলোতে আস্থা রাখছে।"

"দেশে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক্স পন্যের মধ্যে টিভির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে দামও কমেছে," যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স বাড়িয়ে দিলে এবং সঠিকভাবে কাস্টমস পরিচালনা হলে গ্রে মার্কেটের প্রভাব দেশে শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। ফলে দেশী টিভি কম্পানিগুলোর পরিধি আরও বাড়বে এবং অল্প দামে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। অনুমোদনহীনভাবে গ্রে-মার্কেটের মাধ্যমে বেশ বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে চীনের বিভিন্ন ব্রান্ডের টেলিভিশন।

গবেষণায় দেখা যায়, স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে গত দুই বছরে ভিশন ব্র্যান্ডের ব্যবহার বেড়েছে। তবে এর শেয়ার ছিল ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে। এদিকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে বেড়েছে স্যামসাংয়ের শেয়ার।

২০১৭ সালে চালানো ডাটাবিডিডটকো এর আরেক গবেষণা অনুযায়ী, সে বছর ওয়ালটন এর মার্কেট শেয়ার ছিল ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে সিঙ্গার (৭ শতাংশ), মিনিস্টার (৪ শতাংশ), এলজি ও সনি (৩ শতাংশ), ভিশন, নোভা, স্যামসাং (২ শতাংশ) সহ অন্যান্য ব্রান্ডের শেয়ার ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ।

এমডব্লিউবি পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী ২০২০ সালে অন্যান্য ব্রান্ডের টিভির মার্কেট শেয়ার কমে দাড়িয়েছে ৩৯ শতাংশে। যেখানে ওয়ালটন ২৫-২৭, স্যামসাং ১১, সিঙ্গার ৯ এবং সনি ৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

ডাটাবিডিডটকো এর সাথে সমন্বয় করেই এমডব্লিউবি- এর গবেষনা পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় স্টিকার ভিত্তিক চীনা পণ্যের সমন্বয়ে গঠিত গ্রে-মার্কেট ও অননুমোদিত চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আমদানি করা টেলিভিশন প্রায় ২০ শতাংশ মার্কেট দখল করে আছে বলেও উল্লেখ করা হয়। অননুমোদিত মাধ্যমে আনা টেলিভিশনগুলো বাজারের ১০-১২ শতাংশ দখল করে আছে। এছাড়া, ৮ থেকে ১০ শতাংশ রয়েছে স্টিকার ভিত্তিক। ২০১৭-১৮ সালে এটি ছিল ৩০-৩৫ শতাংশ।

দেশীয় ব্রান্ডের টেলিভিশন অধিক পরিমাণ বিক্রির প্রতি নজর না দিয়ে কোয়ালিটি বাড়ানো, শোরুমে ভালো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, উচ্চবিত্ত কাস্টমার আকৃষ্টে মনোযোগ দেওয়া, লেটেস্ট ফিচার যোগ করা, ওয়ারেন্টি অনুযায়ী কাস্টমার সেবা প্রদান করা, হাতের নাগালে দাম, অনলাইন মার্কেটিং, কল সেন্টার সার্ভিস চালুসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছেন গবেষকরা।

গবেষণার অন্যান্য ফল

আপনি কোনো টিভি সম্পর্কে চিন্তা করলে প্রথমে কোন ব্র্যান্ড/নামটি মাথায় আসে? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে, উত্তরদাতাদের প্রায় ২৫ শতাংশ সনি ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করেন। এছাড়া অনেকেই ওয়ালটন (২১ শতাংশ), স্যামসাং (১৪ শতাংশ), এলজি (১২ শতাংশ), সিঙ্গার (৭ শতাংশ), ভিশন (২ শতাংশ) এবং মাই ওয়ান (২ শতাংশ) এর নাম উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া, আরও দেখা যায়, ২০০৫ সালে যেখানে ওয়ালটনের শেয়ার ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে তা ব্যাপকভাবে বেড়ে ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশে পৌঁছায়। এদিকে সনির শেয়ার ২০০৫ সালে ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ থাকলেও ২০২০ এ তা কমে ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমেছে।

ওয়ালটন তার মোট বিক্রয়ের ৮০ শতাংশ বিক্রি করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের কাছে। যেখানে এলজি, সিঙ্গার, স্যামসাং এবং সনি একই গ্রুপের গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে যথাক্রমে ৮২, ৭৯, ৭২ এবং ৬৬ শতাংশ।

`স্মার্ট` বা `অ্যান্ড্রয়েড` টিভির ক্ষেত্রে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ৩২ ইঞ্চির টিভি পছন্দ করেন। কিন্তু সাধারণ `বেসিক` টিভির জন্য বেশিরভাগ উত্তরদাতা ২০-২৪ ইঞ্চির টিভি পছন্দ করেন।

তবে, সম্প্রতি `বেসিক` টিভির ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমতে দেখা গেছে।

দেশের ৫টি টেলিভিশন কোম্পনির ওয়েবসাইট থেকে ২২৭৩টি অনলাইন প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে এসব তথ্যাদি ব্যাখা-বিশ্লেষণ করা হয়। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্ট রিভিউ বাংলাদেশ নামে একটি ক্লোজড ফেসবুক গ্রুপ থেকে ৪৯৬টি অনলাইন প্রতিক্রিয়াও নেওয়া হয়।

গবেষণায় টেলিভিশন ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ক্রেতা সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির মাত্রা যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, সর্বনিম্ন ৭০ আর সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহারকারী টেলিভিশনগুলোতে সার্বিকভাবে কোনো সমস্যা না থাকার কথা জানিয়েছেন।

গবেষণায় ৭ থেকে ১২ শতাংশ মানুষ স্ক্রিন সমস্যা থাকার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া টেলিভশনের শব্দে সমস্যা থাকার কথা জানিয়েছেন ২-৪ শতাংশ মানুষ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: